Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিপিডি’র গবেষণা : কর্মহীন তরুণ ৭৪ লাখ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:২৯ পিএম
  • সরকারের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই
  • যুব নীতি গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে

দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবক-যুবতীর সংখ্যা ২ কোটি। এর মধ্যে ৭৪ লাখ কোনো শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত নেই। ফলে আন্তর্জাতিক যুব সূচকে ২০১৬ এ ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাড়িয়েছে ১৪৬ তম। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য সরকারকে যুব নীতি গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। এদিকে এক প্রতিবেদনে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য যুবসমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেশের গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। জাতীয় যুব নীতিতে বর্ণিত ১৬টি ক্যাটেগরির প্রান্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে চার ধরনের মানুষের উপর জরিপটি চালানো হয়। এক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ে সমতলের আদিবাসী, শহরের বস্তিবাসী, মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সিলেটে অবস্থানরত শহুরে যুবগোষ্ঠীর ৩৩৩ জনকে বেছে নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রান্তিক যুব সমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিসেবার ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপে বক্তারা এ তথ্য তুলে ধরেন। সিপিডির ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবব্রত ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে উক্ত সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত আছেন- সংসদ সদস্য মো. মজিবুল হক, নাহিম রাজ্জাক ও নাহিম রাজ্জাক, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহিমা খাতুনসহ সারাদেশের যুব সমাজের সদস্যরা। সংলাপে যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

ড. মোয়াজ্জেম বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়াদের ৬০ শতাংশ মনে করেন, গ্রামীণ প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো কেবল নামে মাত্র দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ঠিক মতো প্রশিক্ষণের ক্লাস হয় না, ভালো প্রশিক্ষক নেই। বস্তিবাসী ও আদিবাসীদের মধ্যে শতভাগ যুবগোষ্ঠী এবং মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ শতাংশের কোনো বসতভিটা না থাকার তথ্য তুলে ধরে সিপিডির এই গবেষক বলেন, বাসস্থান ও জীবিকার ব্যবস্থা উভয়ই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে (বস্তি) অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। শিক্ষায় সরকার অনেক সাফল্য অর্জন করলেও প্রান্তিক যুবকেরা এর সুফল পুরোপুরি পায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, সমতলের আদিবাসী ও সিলেট অঞ্চলের শহুরে যুবগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ শতাংশ মনে করেন তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয় মানের প্রতিষ্ঠানগুলো চেয়ে অর্ধেক নিম্নমানের। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাদের বিজ্ঞান, গাণিত বিষয়ের শিক্ষকের অভাব। এছাড়া স্কুলের বেতন ছাড়াও পড়ালেখাকেন্দ্রিক অন্যান্য খরচ বহন করতে না পারার কারণে অনেকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জাতীয় যুবনীতিতে আয়, লিঙ্গ, ভৌগলিক অবস্থান, জীবনচক্র, নাগরিক পরিচয়, শারীরিক অক্ষমতা, শিক্ষা ও দক্ষতা, স্বাস্থ্য, কর্ম, ধর্ম, সম্প্রদায়সহ মোট ১৬টি সূচক বিবেচনায় নিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে গবেষণায় কেবল ধর্ম ও সম্প্রদায়, দুর্যোগ, শিক্ষা ও দক্ষতা ও ভৌগলিক কারণে প্রান্তিক যুব জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার চ্যালেঞ্জ, শিক্ষাগ্রহণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ, প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং এসবের বিপরীতে সরকারি পরিষেবার অবস্থান দেখা হয়েছে গবেষণায়।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত গাইবান্ধার যুবক সুমন খন্দকার বলেন, তিনি গ্রামের কয়েকজনকে একটি সরকারি প্রশিক্ষণে পাঠালেও সেখানে তিন দিনের বেশি ক্লাস হয়নি। তারা ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসাবে কিছুই শিখতে পারেনি। ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রিক সরকার ঘোষিত এক লাখ টাকার ঋণ নিতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছিল। মাদরাসা শিক্ষক উছমান গনি বলেন, চাকরি ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকার পরেও মাদরাসা পড়ুয়াদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়। কড়াইল বস্তির বাসিন্দা তানজিনা আক্তার তানিয়া বলেন, যখনই নিজেকে বাস্তহারা মনে হয় তখনই পড়ালেখাসহ সব ধরনের কর্মম্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। তারা বসতভিটার অধিকার চান। হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য ঝুমা বলেন, সরকার তাদেরকে স্বীকৃতি দিলেও যেই উদ্দেশ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে সেটা পূর্ণ হয়নি। হিজড়াদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি।

অনুষ্ঠানে সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের গোড়ায় গলদ রয়েছে, সেকারণেই দক্ষ লোক তৈরি হচ্ছে না। শুধু অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করছে, তখন অফিসার ছাড়া কিছুই হতে চাচ্ছে না। অথচ অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিদেশি লোকজন চাকরি করে প্রচুর টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে।

সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে অথচ সরকার বলছে প্রবৃদ্ধির কথা। প্রবৃদ্ধির হিসাব দেখানো হলেও প্রকৃত প্রবৃদ্ধি যে হচ্ছে না বেকারত্ব বৃদ্ধিই তার প্রমাণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা রয়েছে। সরকার ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে শিক্ষার মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, আগে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ছিল পৃথক। এখন অনেক ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে কাজ হচ্ছে। তবে এটা ঠিক পরিস্থিতির উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিপিডি

২৭ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ