পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী বছর (২০২২ সাল) দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সার, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভর্তুকি বাড়বে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে না পারলে এগুলোর দাম সমন্বয় করতে হবে, যা বড় চ্যালেঞ্জ। আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় এখন প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। ২০২২ সালে অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়বে।
গতকাল ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২১-২২ প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ করতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানি সারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হবে। কিভাবে সমন্বয় করবে সরকার? আবার গ্যাসের দামও বাড়ছে। যেভাবে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে, তা দিয়ে মূল্য সমন্বয় করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিদেশি বড় অর্থায়ন আসছে, এটা সত্য। তবে এটা কিন্তু বাজেটের সহায়তা নয়, প্রকল্পের সহায়তা। যেহেতু এটা বাজেটের সহায়তা নয়, তাই এটা দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয় সম্ভব নয়।
সিপিডির এ সম্মানিত ফেলো বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রণোদনা হিসেবে নগদ টাকা দিয়েছে। সিপিডির পক্ষ থেকেও প্রান্তিক মানুষকে নগদ আট হাজার টাকা করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ পরিবার বাছাই করা হলেও সবাইকে নগদ টাকা দেয়া যায়নি। সুবিধাভোগীর তালিকা বাছাই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
এছাড়া অক্টোবর মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের যে কথা বলা হচ্ছে তা বাস্তবতার সঙ্গে বিরাট ফারাক বলেও মনে করছে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা একটি বিষয়, আরেকটি বিষয় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের অভাব। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বাস্তবতার সঙ্গে যার বিরাট ফারাক। আমরা মনে করি করোনা মহামারির সময়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। এছাড়া ঋণের ক্ষেত্রেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
তিনি আরো বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যে দাম বাড়ার কোনো প্রতিফলন নেই। কারণ হতে পারে, বিবিএস যেসব পণ্যের ওপর ভিত্তি করে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) করে থাকে, সেটি অনেক পুরনো। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের ভোগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তাই সময় এসেছে, ভোক্তা মূল্যসূচক করার জন্য নতুন পণ্যের বাস্কেট করতে হবে। কারণ, বাজারে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে বেশ ফারাক দেখা যাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা এখনো করোনা থেকে পরিত্রাণ পাইনি। অসংখ্য মানুষ করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। তাদের নগদ টাকা দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরে এক মাসে খরচ আসে ৭ হাজার ২৯৭ টাকা। যদিও সরকার থেকে দেয়া হয়েছে আড়াই হাজার টাকা করে। নগদ টাকা আরো বেশি সময় ধরে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
দেশে চাল উৎপাদনে রেকর্ড হচ্ছে। বিদেশ থেকে চাল আমদানিও হচ্ছে। তবু কেন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে চালের চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই হচ্ছে না। টেকসই না হওয়ার কারণ হলো, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোও স্বস্তিতে নেই। করোনা মহামারির আগেও এসব সমস্যা ছিল। এখন তা বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, চালের কী পরিমাণ চাহিদা, তার মূল্যায়ন করা দরকার। দেশে চালের ব্যবহার বাড়ছে। চালের ভোগ কত? তার সঠিক তথ্য নেই। তিনি বলেন, আগের চেয়ে চালের চাহিদা বেড়েছে। চালের বাণিজ্যিক ব্যবহারও বাড়ছে। ভোগের বাইরেও চালের ব্যবহার বাড়ছে। এসব বিষয় হিসাবে আনা দরকার। ঘাটতি টানাপড়েনের সুযোগে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কতিপয় গোষ্ঠী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সিপিডি বলেছে, সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা বড় বড় উদ্যোক্তারা পেয়েছেন। ঋণখেলাপিরাও পেয়েছেন। প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা যাদের পাওয়ার কথা, তাদের কাছে টাকা পৌঁছায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ক্ষতিগ্রস্তরা প্রণোদনার টাকা পাবেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তের সংজ্ঞা কী? নীতিতে দুর্বলতা থাকার কারণে প্রণোদনার টাকা সঠিক জায়গায় যায়নি। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রান্তিক মানুষের ওপর বেশি জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
সিপিডি বলেছে, ডিজেলের দাম বেশি হলে চাষাবাদের খরচ, আনা-নেয়ার খরচ, প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ বেড়ে যায়। ফলে পণ্যমূল্যও বাড়ে। পাশাপাশি দেশের চালের প্রকৃত চাহিদা কত তা হিসাব করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সংস্থাটি বলেছে, চালের উৎপাদন বেড়েছে। আমদানিও বেড়েছে। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব নেই। প্রধান এই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। ফলে এখন দেখার সময় হয়েছে যে, দেশে চালের প্রকৃত চাহিদা কত। দেশের অর্থনীতির পর্যালোচনা করতে গিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব সুপারিশ করা হয়।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ খুবই কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে সিপিডি বলছে, এখন পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আহরণ করছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বাকি সময়ে ৩০ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় করতে হবে। এটা খুবই কষ্টকর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশের বেশি হারে আদায় করতে হবে। অন্যদিকে আয়করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ২৭ শতাংশ হারে কর আসতে হবে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ রয়েছে, সেখানে কর আহরণ বৃদ্ধি করার খুব বেশি সুযোগ রয়েছে তেমনটা নয়। রাজস্ব আহরণে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হয়, তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন বড় হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
সিপিডির মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় বেশি হলে কোভিড পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম। বিশেষ করে সবচেয়ে দুঃখজনক হলো আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বাস্তবায়ন মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এমনিতেই এডিপি বাস্তবায়ন কম হয় সেখানে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য খাতের এমন এডিপি বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে যদিও আর্থিক ভারসাম্যে একটা উদ্বৃত্ত ছিল, কিন্তু সামগ্রিক ব্যালেন্সে নেতিবাচক ভারসাম্য লক্ষ করছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর একটা চাপ পড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।