পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন আর ব্যাংকঋণ সঙ্কটে গত বছর ব্যবসা করতে গিয়ে বড় চ্যালেঞ্জে ছিলেন দেশের উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে সরাসরি তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জগুলো হলোÑদুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা। এগুলো দেশের ব্যবসার সম্প্রসারণের পথে মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে ট্যাক্স রেট সমস্যা, দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে না পারা, স্বাস্থ্যসম্মত কর্ম পরিবেশ ও কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে না পারাকেও দেশের ব্যবসার সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সমস্যা আরও বেশি। সিপিডি’র মতে, মহামারী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কমপক্ষে আরও তিন বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, পুনরুদ্ধার সহজ ও টেকসই করতে দুর্নীতি বন্ধ, অদক্ষ প্রশাসনকে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থায়নের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি দেশের সবাইকে করোনার ভ্যাকসিন দিয়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও তাগিদ দেয়া হয়েছে।
গতকাল ধানমন্ডির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ-২০২১ ঃ উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল’ প্রকাশ করেছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। ওই জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা এমন মতামত দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ব্যবসায়ীদের ওপর করা জরিপ থেকে এমন মূল্যায়ন তুলে ধরেছে সিপিডি। গবেষকরা জানান, এক দশক ধরে ব্যবসার পরিবেশের ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে এই উন্নয়নের গতি কমে এসেছে। এতে বলা হয়, দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে বর্তমানে দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতার মতো প্রধান তিন চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যা বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বেশি। পাশাপাশি করোনার পরে যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে তা অসম বা বৈষম্যমূলকভাবে হচ্ছে। তবে যে পুনরুদ্ধার দেখা যাচ্ছে তা আংশিক। অনেক ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এখনো তাদের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারেননি। জরিপে অংশগ্রহণ করা ব্যবসায়ীদের ৪৫ শতাংশ মনে করেন, তাদের ক্ষতিপূরণ হতে লাগতে পারে তিন বছরেরও বেশি সময়। তবে তাদের মধ্যে ৮ শতাংশ মনে করেন, অবস্থা যদি অস্বাভাবিক না হয় তারা এক বছরের মধ্যে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পুরোপুরি পুনরুদ্ধারে কমপক্ষে আরও তিন বছর সময় লাগবে।
সিপিডি’র মতে, দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা দেশের ব্যবসার সম্প্রসারণের পথে মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে ট্যাক্স রেট সমস্যা, দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে না পারা, স্বাস্থ্যসম্মত কর্ম পরিবেশ ও কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে না পারাকেও ব্যবসার সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের ব্যবসায়ীরা বর্তমানে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেন। এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেনÑ সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, দুর্নীতি বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী। পাশাপাশি অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও আর্থিক সমস্যা বা ব্যংক ঋণ ব্যবসার প্রধান অন্তরায়। ক্ষুদ্র উদ্যােক্তাদের শতভাগকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্যবসার ব্যয় সবার কাছে সমান নয়। ৬৩ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন করোনাকালে প্রণোদনা প্যাকেজ বণ্টন দুর্বল ছিল, আর ৪২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করে দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। আগে দুর্নীতি অনেক ওপরে থাকতো, এখন এই তিনটি সমস্যাই প্রায় কাছাকাছি জায়গায় বিবেচিত হচ্ছে। এই তিনটি বিষয়ের সঙ্গে ব্যবসার ব্যয় বৃদ্ধি জড়িত। দক্ষ মানব সম্পদের অভাবে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সিপিডি বলছে, এক সময় অবকাঠামো দুর্বলতা এক নম্বর সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করতেন। এখন এটি নেমে ৪ নম্বরে এসেছে। এর অর্থ দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। করোনা পরবর্তী ব্যবসা পরিবেশের পরিস্থিতি জানার জন্য সিপিডি গত বছরের মার্চ থেকে জুন সময়ে উদ্যোক্তা জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামের ৭৩ জন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন। জরিপকালে উদ্যোক্তারা মোট ১২টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর তাদের মতামত প্রদান করেন। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ, অবকাঠামো, জনস্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা এবং দক্ষতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা এবং ব্যবসার উদ্ভাবনের মতো বিষয়গুলো। এতে, ৩৯টি বড়, ১৭টি মাঝারি, ১২টি ছোট এবং ৫টি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, জরিপে ব্যবসার পরিবেশ, অবকাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখা হয়েছে। মূলত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্লোবাল কমপিটিটিভ রিপোর্ট বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনের জন্য এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
এছাড়া ২০২০ সালে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত বিবেচনা করা হয়েছে বলে সিপিডি’র প্রতিবেদনে জানানো হয়। ওই সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিবেশের মূল্যায়ন করা হয়েছে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, করোনার প্রেক্ষিতে নতুন ব্যবসার সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসয়ীরা। বিশেষ করে ডিজিটাল ফাইন্যান্স সেবা, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমতা, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, রিসাইক্লিংসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার সম্ভাবনা দেখছেন। তবে আগামী দুই বছর বিশ্ব অর্থনীতি কেমন যাবে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। কারণ বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমে গেলে বা ঋণ সঙ্কট দেখা দিলে দেশের ব্যবসাও সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে।
সিপিডি’র এই জরিপে উঠে এসেছে, ব্যবসায়ী তথা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় কমানোর চিত্র। এদের মধ্যে ২৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী ছাঁটাই করেছে। ২২ শতাংশ ব্যয় কমানোরা ক্ষেত্রে নতুন বায়ারের সঙ্গে কাজ করেছে। ১৯ শতাংশ ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে এবং ১৬ শতাংশ নতুন বাজারে যোগ হয়েছে, ১৫ শতাংশ নতুন পণ্য উৎপাদনে গিয়েছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।