পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সঙ্কট মোকাবিলায় কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডাসহ বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয়ভাবে বহুমুখী সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ * বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি কঠিন হয়ে পড়বে : এখনই বাজারে মনোপলি নিয়ন্ত্রণ এবং খাদ্যনিরাপত্তা গড়ে তুলতে হবে : খাদ্যসহ নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর কমাতে হবে : সংসার চালাতে অনেক পরিবার খাদ্য কম খাচ্ছেন : মাছ-গোশত খাওয়া বাদ দিয়েছেন
* ডলার সঙ্কট, জ্বালানি সঙ্কট, মূল্যস্ফীতি সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, করোনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে
১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছর (২০২৩ সাল) দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশের সবাইকে উৎপাদন বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এই আশঙ্কা প্রকাশের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই অর্থনীতির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, বৈশ্বিক মন্দা এবং সুপরিকল্পনার অভাবে সত্যিই বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছে, এটা সত্য। বর্তমানে ৭টি সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ। এ সঙ্কটগুলো সুচারুভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে দুর্ভিক্ষ এড়ানো যাবে না। সিপিডির গবেষণা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে এ চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এ দুর্ভিক্ষ এড়াতে চাইলে এখনই খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ৪৫টি দেশ খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কায়। অথচ বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়নি। মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছে অথচ কমপক্ষে ২৯টি খাদ্যসামগ্রী আমদানিতে বর্তমানে উচ্চ কর ও শুল্ক আদায় হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের হার কমানো ও বেসরকারি খাতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বেতন বাড়াতে হবে।
‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ কোন পথে?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দূরবস্থা ও খাদ্য সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয় বিশ্ব মহামন্দায় বাংলাদেশকে ৭টি সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেগুলো হলো- ডলার সঙ্কট, জ্বালানি সঙ্কট, মূল্যস্ফীতি সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সঙ্কট, করোনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কট। সামগ্রিকভাবে এ ৭টি সঙ্কট আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণাচিত্র তুলে ধরে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে এ ৭টি সঙ্কট বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির পথে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ছয় মাস-এক বছরের মধ্যে তা কেটে যাবে, এমনটি মনে করার শক্ত কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে স্বল্পকালীন পদক্ষেপ হিসেবে সঙ্কট উত্তরণের একমাত্র পথ হলো জাতীয়ভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপের সঙ্গে থাকা এবং ব্যয়ের খাতে শুধু উৎপাদনশীল খাতেই বিনিয়োগ করে যাওয়া যাতে তার রিটার্ন আসে। সার্বিকভাবে বলতে গেলে এ বহুমুখী সঙ্কট উত্তরণের উত্তম সমাধান হলো অতি দ্রুত কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডাসহ বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয়ভাবে বহুমুখী সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা। যাতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে কোনো একটি উদ্যোগে আরেকটি সংস্থা, বিভাগ বা মন্ত্রণালয় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
গবেষণার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, দেশে এখন বহুমুখী সঙ্কট রয়েছে ,তাই বহুমুখী নীতিমালাও প্রয়োজন। সব মন্ত্রণালয় এ বিষয়টির সঙ্গে জড়িত। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবার সমন্বয়ে একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি চাকরিজীবী বা অন্য পেশার লোকজনকেও এ কমিটিতে রাখা উচিত। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বেতন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধিও যথেষ্ট নয়। ওএমএস কার্যক্রম আরো বাড়ানো উচিত। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। জ্বালানির দাম কমানো, অর্থের জন্য কর জিডিপি বাড়ানোসহ আরো কিছু পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মূল্যস্ফীতির সমাধানে দেয়া সুপারিশগুলো হলো নতুন ভোগ বাস্কেট করা, প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা, নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর কমানো, বাজারে মনোপলি নিয়ন্ত্রণ করা। সরকার ওএমএসসহ যেসব পণ্য দিচ্ছে, তা সারাদেশে সহজলভ্য করতে হবে। এখানে দুর্নীতি যেন না হয়, সেটাও দেখতে হবে। একেবারেই দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমপক্ষে ১ হাজার টাকা করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে সিপিডি বিভিন্ন ক‚প থেকে গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগী হওয়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো ও দাতা সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার সুপারিশ করেছে। সিপিডির প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় যারা বসবাস করছেন, তাদের খাদ্যপণ্যের তালিকার ১৯টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সব খাদ্যপণ্যসহ সার্বিক খরচ ছিল ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবরের খাদ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় এ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক ২২ হাজার ৪২১ টাকা। যদি মাছ-গোশত বাদ দিয়ে কমপ্রোমাইজড ডায়েটের হিসাবে চার সদস্যের পরিবারের ন্যূনতম খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৯ টাকায়। যা ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ছিল ৬ হাজার ৫৪১ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস দেখা গেছে। সারাবিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ঐতিহাসিকভাবেই ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে। বিভিন্ন দেশে প্রবৃদ্ধি হয় নিচে, অথবা নেতিবাচক দিকে রয়েছে। আমরাও সেই প্রভাব অনুভব করছি। এ সঙ্কট চললাম এবং আরো ঘনীভ‚ত হচ্ছে। দেশে মূল্যস্ফীতি লাগামগীন। আন্তর্জাতিক পণ্যের দামও বেশি। আবার দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি। খাদ্য সঙ্কটেরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি, তার খরচ বেড়ে গেছে। সামনেও এটি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সারাবিশ্বে ঘটতে যাওয়া খাদ্য সঙ্কটের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর। চলমান এ যুদ্ধ শুধু খাদ্য ও পণ্য সরবরাহকেই সঙ্কটে ফেলেনি, কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করেছে। এ দুর্যোগের সমাপ্তি নির্ভর করছে যুদ্ধের সমাধানের ওপর। রেমিট্যান্সেও প্রবৃদ্ধি নেই। বিদেশে কর্মী বেশি পাঠালেও আয় তেমন হারে আসছে না। আবার হুন্ডি খুব সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা ভালো অফার (রেট) করছে। বৈদেশিক মুদ্রা দেশের ভেতরে কমে যাচ্ছে আবার বিদেশ থেকে আসার প্রবণতাও কমে গেছে। রেমিট্যান্সের প্রবাহও নেতিবাচক।
রিজার্ভ কমে যাওয়া ছাড়াও মুদ্রার বিনিময় হারও প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই বাজারই কিন্তু নির্ধারণ করবে ডলারের রেট কত হবে। এখন তো বাজারে ডলার নেই। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফএর ঋণের অর্থ রিজার্ভে যুক্ত হলে বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। তখন মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করা উচিত হবে না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের বাজার আমদানিনির্ভর। দেশে জ্বালানি তেলের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বা ডলার সঙ্কট রয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানি ক্রমে ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তারা বলছে অর্থ নেই। অর্থের প্রাপ্যতা কম। এলএনজি আমদানিও কমানো হয়েছে। টাকার অভাব যেমন রয়েছে সঙ্কট রয়েছে সরবরাহেরও। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারণ দেশে মূল্যস্ফীতি বেশি রয়েছে। জনগণ যাতে পরিত্রাণ পায় সেটি বিবেচনা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, দেশে এখন বহুমুখী সঙ্কট রয়েছে। বহুমুখী নীতিমালা প্রয়োজন। সব মন্ত্রণালয় এটার সঙ্গে জড়িত। সবার সমন্বয়ে একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও এ কমিটির সঙ্গে জড়িত করা উচিত। তিনি আরো বলেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয়ের ভারসাম্য অস্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৪.৬ বিলিয়ন, এক বছর আগেও যা ছিল ৪.৩ বিলিয়ন ডলার।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খাদ্য একটি রাজনৈতিক পণ্য হিসেবে আবির্ভ‚ত হয়েছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্যপণ্য কেনায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, নিজের মজুদ নিশ্চিত না করে কোনো দেশ পণ্য রফতানি করতে চাইবে না। তাই ভবিষ্যতে ডলার থাকলেও বিশ্ববাজারে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য নাও থাকতে পারে।
এ সময় সিপিডির গবেষণা সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।