Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসায় গাঁজার ব্যবহার, চালু হলো থাইল্যান্ডে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:৫৬ পিএম

গাঁজা ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদানের জন্য থাইল্যান্ডের উত্তরে চিয়াং মাইতে একটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এই হাসপাতালে যেমন আধুনিক চিকিৎসা দেয়া হবে তেমনি প্রাকৃতিক উপায়েও চিকিৎসা প্রদান করা হবে, বিশেষ করে স্নায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের। ব্যাংকক পোস্টের তথ্যমতে ক্লিনিকটিতে ৩৯ জন চিকিৎসক এবং ৪ জন প্রথাগত থাই চিকিৎসক নিযুক্ত করা হয়েছে। ক্লিনিকটিতে উদ্বোধনের প্রথম দিনে ২২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চিয়াং মাই প্রদেশের মাই রিম জেলার নাকোর্নপিং হাসপাতালের অধীনে এই ক্লিনিকের উদ্বোধনীতে জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতেও গাঁজা ভূমিকা রাখবে। স্নায়ুজনিত সমস্যা, মৃগীরোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিরসনে গাঁজার নির্যাস ভূমিকা রাখে।
আইসোমনিয়া, মাইগ্রেইন, শরীরের ব্যাথা, নিউরোসিস ডিরাইভড এবং প্যারালাইসিসে আক্রান্ত রোগীদের প্রথাগত চিকিৎসা নিতে এই ক্লিনিকে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
আনুতিন বলেন, দেশব্যাপী ৪ ধাপে ৩৭টি ক্লিনিকে গাঁজা ভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া হবে। এই মাসের শুরুতেই ননথাবুড়িতেও একটি গাঁজাভিত্তিক চিকিৎসার ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রথাগতভাবেই থাইল্যান্ডে ব্যাথা এবং অবসাদ নিরাময়ের চিকিৎসায় গাঁজা ব্যবহৃত হয়। ২০১৭ সাল থেকে সরকার এটিকে চিকিৎসা এবং গবেষণায় বৈধতা দেয় এবং গাঁজাভিত্তিক ওষুধের প্রচারণা শুরু করে।

গাঁজার মর্মকথা :
মাদক হিসেবে গাঁজার ব্যবহার খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে। হিন্দুধর্মের অথর্ব বেদ এবং পুরাণেও গাঁজার কথা উল্লেখ আছে। পুরাণে উল্লেখ আছে, দেবতারা গাঁজা গাছের জন্ম দিয়েছেন। তাদের সমুদ্র মন্থনকালে অমৃত থেকে গাঁজা গাছের উৎপত্তি। ইউরোপে গাঁজা ব্যাবহারের তথ্য পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ সালে গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাসের লেখায়।
গাঁজা দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তাও আবার দুরারোগ্য ব্যাধির! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। থাইল্যান্ডে গাঁজার সাহায্যে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এজন্য তৈরি হয়েছে একটি হাসপাতালও। বিশ্বে এই ধরনের হাসপাতাল এটাই প্রথম। থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নাখন রাতচাসিমায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই মারিজুয়ানা ক্লিনিকটি যাত্রা শুরু করে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাঁজার ব্যবহার বাড়াতে গত ৬ জানুয়ারি এই হাসপাতাল চালু করা হয়। প্রথম দুই সপ্তাহ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হবে।
এই হাসপাতালে প্রাথমিক পর্যায়ে দুইভাগে সেবা দেয়া হবে রোগীদের। প্রথমে গাঁজার তেল দ্বারা- পেশি ব্যথা, মৃগী রোগ এবং ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির ফলে হওয়া নিউরোপ্যাথিক ব্যথা এবং বমি বমি ভাব সারানো হবে। দ্বিতীয়, গাঁজা দিয়ে তৈরি ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করা হবে। যেমন- দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলো যাদের ঘুমের অসুবিধা, ক্ষুধা না লাগা, বুক থেকে পেটের তীক্ষè ব্যথা, দূর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেশি ব্যথা এবং স্ট্রোকের রোগীদের শরীর দুর্বলতার মতো নির্দিষ্ট রোগগুলো সারাতে গাঁজা ব্যবহার করা হবে।
এই ক্লিনিকটি প্রাথমিকভাবে একজন চিকিৎসক এবং তিনজন সহ চিকিৎসক দ্বারা পরিচালি হচ্ছে। আরো ১০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এরই মধ্যে, প্রথম দিন প্রায় ১০০ এবং দ্বিতীয় দিন ৫০০ জন চিকিৎসার নিয়েছেন। যদিও সরকারিভাবে এখনো ক্লিনিকটি বৈধতা পায়নি। তবে কিছুদিন পরেই গাঁজা দ্বারা চিকিৎসায় সুফল মিললে সরকার কর্তৃক অনুমোদন মিলবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২০০ রোগী এই ক্লিনিকে রেজিস্ট্রেশন করেছে বলে সেখানকার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
কৃষিখাতের আয় বৃদ্ধির জন্য ২০১৭ সালে গাঁজাকে চিকিৎসায় ব্যবহার ও গবেষণা কাজে ব্যবহারের বৈধতা দেয় দেশটি। থাইল্যান্ডে গাঁজা ব্যবহার করে চিকিৎসার জন্য ২৫টি ক্লিনিক রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ কর্মীর অভাবে এগুলো সপ্তাহে দু-একদিন খোলা থাকে। গাঁজা চাষ, উৎপাদন ও বিক্রির জন্য থাইল্যান্ডে সীমিত পরিসরে লাইসেন্স দেয়া হয়। তবে গত বছর থাই সরকার মাদক তালিকা থেকে গাঁজাকে বাদ দিয়েছে। এরপর থেকেই প্রতি বাড়িতে ছয়টি গাঁজার চারা আবাদের সুযোগ দেয়ার জন্য খসড়া আইন তৈরি করা হয়।

গাঁজা নিয়ে হয়েছে যুদ্ধ
আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে চীনের টালমাটাল অবস্থা শুরু হয়। চীনে জাহাজ ভরে আফিম পাচার করত ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা, বিনিময়ে তারা পেত রুপার মুদ্রা। ওই সময় ভারতে আফিমের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখন আফিম চাষ করা হতো সরকারি উদ্যোগে। ব্রিটিশদের এ ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে ক্ষেপে যায় চীন। এমনকি তা যুদ্ধ অবধি গড়ায়। এটি ইতিহাসে আফিমের যুদ্ধ নামে পরিচিত হয়ে আছে।
মূলত এ যুদ্ধের পরপরই সারা বিশ্বে মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। অনেক দেশ মাদক নিষিদ্ধ করে নানা আইন করে। তবে ২০১০ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র গাঁজার বৈধতার পক্ষে এক আন্দোলন করে। তারই জেরে ২০১২ সালে সেখানকার কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে গাঁজা বৈধ করার হয়। এরপর থেকে মাদক হিসেবে নয় বরং সুস্বাস্থ্য রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে গাঁজার ব্যবহার বাড়তে থাকে।

গাঁজা কোন কোন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় :
১. নির্দিষ্ট পরিমাণ গাঁজা ব্যবহার করলে মৃগী জাতীয় স্নায়ু রোগের উপশম ঘটে। এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ২০১৩ সালেই তাদের এই গবেষণা, ফার্মাকোলজি এন্ড এক্সপেরিমেন্টাল থেরাপিউটিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়।
২. যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আই ইন্সটিটিউট জানায়, গøকোমা চোখের এমন এক রোগ যাতে অন্ধত্ব আনে। প্রায় ১০ বছর আগে এই বিষয়টি জানা গেছে। তবে গাঁজা গøকোমা রোধে সাহায্য করে।
৩. স্মৃতি বিভ্রাট ঘটে যাদের তাদের জন্য গাঁজা বেশ কার্যকরী এক উপাদান। এটি মস্তিস্ককে দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে। এমনটাই জানিয়েছেন দ্য জার্নাল অব অ্যালঝাইমার ডিজিজ।
৪. যুক্তরাষ্ট্রের ক্যান্সার বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্যান্সার অর্গ-এ জানানো হয় গাঁজা টিউমারের ঝুঁকি কমায়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুসারে। গাঁজা টিউমার প্রতিরোধকের ভূমিকা পালন করে।
৫. ক্যান্সার রোগীদের নিয়মিত কেমোথেরাপি নিতে হয়। এক্ষেত্রে গাঁজা কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমায়। ইউএস এজেন্সি ফর ড্রাগ জানিয়েছে এই তথ্য।
৬. গাঁজা মস্তিষ্ক সুরক্ষায় সহায়তা করে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম এমনটিই জানিয়েছে।
৭. গাঁজা সেবনে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে না বরং বাড়ে। জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে এই তথ্যের। ৫ হাজার ১১৫ জন রোগীর উপর ২০ বছর চালানো ওই গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক সেবনকারীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে অথচ গাঁজা সেবনকারীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গাঁজা

২২ জানুয়ারি, ২০২২
২২ জানুয়ারি, ২০২২
আমার এক নিকটাত্মীয় মদ-গাঁজা সেবন করত। স্বামী-স্ত্রী প্রায় সময়মই ঝগড়া হতো, স্বামী তার স্ত্রীর গায়ে অনেক সময় হাত তুলত। স্ত্রীও খুব বেশী একটা ছাড় দিত না। আবার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্য পুরুষের সাথে দীর্ঘ দিন রাতে-বিরাতে গোপন ফোনালাপের অভিযোগ ছিল। তাদের দুই ছেলে আছে। স্বামী তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক একাউন্টে ১৫-১৮ লাখ টাকার সম্পদ রেখেছিল। স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়ে সেগুলো হাত করে নেয় এবং নেশাখোর স্বামীর সংসার করবেনা বলে জানায়। এ অবস্থায় কয়েকটি ব্যর্থ আলোচনা বা বৈঠক হয়। প্রায় এক বছরের বেশী সময় পর স্ত্রী ওই স্বামীকে এক উকিলের মাধ্যমে ডাকযোগে ডিভোর্সলেটার পাঠায়। স্বামী বলে সে ওই লেটার রিসিভ ও সাইন করেনি। এর প্রায় এক বছর পর তার স্ত্রী ওই গোপন ফোনালাপের অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই বিয়ে করে। প্রশ্ন হলো স্ত্রীর এ তালাক ও পরবর্তী বিয়ে ইসলামের বিধান মতে সঠিক ভাবে হয়েছে কি না? আর না হলে এখন করনীয় কি?

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ