মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বের যে ৯টি দেশের হাতে পরমাণবিক অস্ত্র আছে, তাদের দুইটি হলো পাকিস্তান ও ভারত। কয়েক দশক ধরে পরমাণু শক্তির অধিকারী পাকিস্তান এখন তার নিজস্ব ধরনের পরমাণু ত্রয়ী নির্মাণের চেষ্টা করছে, তার পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারকে প্রতিশোধমূলক হামলায় স্থিতিস্থাপক ও বিপর্যয়কর করতে সক্ষম হিসেবে গড়তে চাচ্ছে। প্রযুক্তিগতভাবে ভারত থেকে এগিয়ে রয়েছে তারা। এর সাথে ‘পরমাণু ত্রয়ী’ সক্ষমতা যুক্ত হলে তা হবে ভারতের জন্য শঙ্কার কারণ।
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির সূচনা ১৯৫০-এর দশকে, ভারতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রথম দিকের সময়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওই সময় ভূখণ্ড হারানোর লজ্জা পাকিস্তানি পরমাণু কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করেছিল। তারপর ১৯৭৪ সালের মে মাসে ভারতের ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ কোডনেমে প্রথম বোমা পরীক্ষার ঘটনায় উপমহাদেশে পরমাণুকরণের যাত্রা শুরু হয়। এর পরে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি, সমৃদ্ধি ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়াম সংগ্রহ শুরু করে। দেশটিকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন বিজ্ঞানী এ কিউ খান। পাশ্চাত্য থেকে ১৯৭৫ সালে দেশে ফিরে তিনি সেন্টিফিউজ ডিজাইন ও সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় কাজের সূচনা করেন। পাকিস্তান ঠিক কখন তার প্রথম পরমাণু বোমা হাতে পেয়েছিল, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো (জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে) দাবি করেছেন যে তার বাবা তাকে বলেছেন যে, ১৯৭৭ সালেই প্রথম বোমাটি প্রস্তুত হয়ে যায়। তবে পাকিস্তান আণবিক জ্বালানি কমিশনের এক সদস্য বলেন, প্রথম বোমাটির নির্মাণ শেষ হয় ১৯৭৮ সালে। আর বোমাটির ‘কোল্ড টেস্ট’ (প্রকৃত বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে) হয় ১৯৮৩ সালে।
পর্যন্ত পাকিস্তানের বোমাটি সংযোজনহীন অবস্থায় রাখা হয়েছিল। তবে ১৯৯৮ সালে পর পর তিন দিন ভারত ছয়টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে এর তিন সপ্তাহ পরে পাকিস্তানও দ্রুততার সাথে এক দিনে ৫টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ষষ্ট বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটায় তিন দিন পর। প্রথম বোমাটি ছিল সম্ভবত ২৫ থেকে ৩০ কিলোটনের। এটি হয়তো ছিল বুস্টেড ইউরেনিয়াম ডিভাইস। দ্বিতীয়টি সম্ভবত ছিল ১২ কিলোটনের এবং পরের তিনটি ছিল সাব-কিলোটনের ডিভাইস।
ষষ্ট ও শেষ ডিভাইসটি ছিল ১২ কিলোটনের বোমা। এটি ভিন্ন টেস্টিং রেঞ্জে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের পর মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘কনস্ট্যান্ট ফোনিক্স’ পরমাণু শনাক্তকরণ বিমান প্লুটোনিয়াম শনাক্ত করেছিল বলে জানা যায়। অনেকে মনে করেন, এটি ছিল আসলে উত্তর কোরিয়ার বোমা। কারণ পাকিস্তান কাজ করছিল ইউরেনিয়াম বোমা নিয়ে এবং উত্তর কোরিয়া (এ কিউ খানের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে গবেষণা বিনিময় বা বেচাকেনা করছিল) প্লুটোনিয়াম বোমা নিয়ে কাজ করছিল। উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততা এড়ানোর জন্য অন্য কোথাও সেটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তানের পরমাণু ভাণ্ডার ধীরে ধীরে বাড়ছেই। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের হাতে ৫ থেকে ২৫টি ডিভাইস ছিল। বর্তমানে দেশটির হাতে ১১০ থেকে ১৩০টি পরমাণু বোমা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড স্টিমসন সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তান বছরে ২০টি ডিভাইস তৈরীতে সক্ষম। এই হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তান অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের মালিক হতে যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান নিকট ভবিষ্যতে আরো ৪০ থেকে ৫০টি বোমার মালিক হতে পারে।
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র থাকে সামরিক বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক প্লানস ডিভিশনের নিয়ন্ত্রণে। এগুলো রয়েছে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত ও তালেবানের নিয়ন্ত্রণ থেকে অনেক দূরে পাঞ্জাব প্রদেশে। ১০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ও গোয়েন্দা এসব অস্ত্র পাহারায় নিয়োজিত। পাকিস্তান দাবি করছে, একেবারে শেষ মুহূর্তে যথাযথ কোডের মাধ্যমে এসব অস্ত্র সক্রিয় করা যাবে। আর এসব অস্ত্র ‘দুর্বৃত্ত নিউকে’ পরিণত হওয়ার শঙ্কা নেই।
পাকিস্তানি পরমাণু মতাবাদ দৃশ্যত ভীতি প্রদর্শনমূলক। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে বেশি শক্তিশালী ভারতকে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করাই এই অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। পরমাণু অচলাবস্থা ত্বরান্বিত হয়েছে এই দুইদেশের দীর্ঘ দিনের বৈরিতা থেকে। দুই দেশ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে মত্ত হয়েছে। চীন বা ভারতের মতো পাকিস্তানের ‘প্রথমে ব্যবহার নয়’- এমন কোনো নীতি নেই। তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার রাখে, বিশেষ করে স্বল্প ক্ষমতার পরমাণু অস্ত্র কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে চায় ভারতের প্রচলিত বাহিনীর অগ্রযাত্রা রোধের ক্ষেত্রে।
পাকিস্তান বর্তমানে পরমাণু অস্ত্রের ‘ত্রয়ী’ ব্যবস্থা বিকাশ ঘটিয়েছে। এর ফলে তারা স্থলভাগের পাশাপাশি আকাশ ও সাগরভাগ দিয়েও এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। ধারণা করা হয, ইসলামাবাদ আমেরিকার তৈরী এফ-১৬এ জঙ্গিবিমান সংস্কার করেছে এবং ফরাসি-নির্মিত মিরেজ জঙ্গিবিমান দিয়েও পরমাণু বোমা নিক্ষেপের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেহেতু ভারতের নগরী ও অন্যান্য টার্গেটে পাকিস্তানি বিমানের আঘাত হানা থেকে বিরত রাখার জন্য ভারত বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তাই পাকিস্তানি বিমান সম্ভবত যুদ্ধক্ষেত্রের টার্গেটগুলোতে কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।
স্থলভিত্তিক নিক্ষেপব্যবস্থাটি ক্ষেপণাস্ত্রের আকারে তৈরী। এসব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরী করা হয়েছে চীনা ও উত্তর কোরিয়ার নক্সায়। হাতাফ সিরিজের মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে কঠিন-জ্বালানির হাতাফ-৩ (১৮০ মাইল), কঠিন-জ্বালানির হাতাফ-৪ (৪৬৬ মাইল) ও তরল-জ্বালানির হাতাফ ৫ (৭৬৬ মাইল)। সিএসআইএস মিসাইল থ্রেট ইনিশিয়েটিভ মনে করে যে হাতাফ ৬ (১২৪২ মাইল) এখন বাহিনীর হাতে রয়েছে। পাকিস্তান শাহিন ৩ নামে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের চেষ্টা করছে। এর পাল্লা হবে ১৭০৮ মাইল। এটির টার্গেট নিকোবর ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে হামলা চালানো।
সাগরভাগ দিয়ে পরমাণু হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তান তৈরী করেছে বাবুর ক্লাস ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র। সর্বশেষ সংস্করণ বাবুর ২ সর্বাধুনিক ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র বলে মনে হচ্ছে। এতে রয়েছে বুলেটের মতো আকার, চারটি ছোট লেজ-পাখা, দুটি প্রধান পাখা ও বিপুল শক্তির টারবোফান বা টারবোজেট ইঞ্জিন। ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪৩৪ মাইল। জিপিএস (যা মার্কিন সরকার আঞ্চলিকভাবে নিস্ক্রিয় করে দিতে পারে) নির্দেশনার বদলে বাবুর ২ পুরনো টেরাইন কন্টুর ম্যাচিট (টিইআরসিওএম) ও ডিজিটাল সিন ম্যাচিং অ্যান্ড এরিয়া কো-রিলেশন (ডিএসএমএসি) নেভিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বাবুর ২ স্থল ও সাগর উভয় স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সাগরে এই অস্ত্রটি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। সাবমেরিনে ব্যবহার করার জন্য তৈরী করা হয়েছে বাবুর ৩। গত জানুয়ারিতে এটি পরীক্ষা করা হয়। এটি হবে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপের সবচেয়ে টেকসই ব্যবস্থা।
পাকিস্তান সুস্পষ্টভাবে জোরালো পরমাণু সামর্থ্য বিকাশ করছে। এই অস্ত্র কেবল ভীতি প্রদর্শন নয়, পরমাণু যুদ্ধের জন্য সক্ষম। পাকিস্তান ও ভারত স্পষ্টভাবেই পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতায় রয়েছে। এটি স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার পরমাণু মজুতের কথা মনে করিয়ে দেয়। ফলে উপমহাদেশের জন্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি খুবই প্রয়োজন। সূত্র: এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।