Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভিক্ষুক ও রিকশার দৌরাত্ম্য

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বছরের অন্য সময়ের চেয়ে রমজানের চিত্র একটু আলাদা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, রমজানের শেষের দিকে ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই রাজধানী ঢাকা যে ধরনের মৌসুমী ভিক্ষুক ও রিকশাচালকে ছেয়ে যায় এবারেও তার কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। এ সম্পর্কে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, ঢাকায় অন্তত লক্ষাধিক ভিক্ষুক রয়েছে যার মধ্যে মৌসুমী ভিক্ষুক অন্তত ৩৫ হাজারের উপরে। পরিস্থিতি এমন যে, মৌসুমী ভিক্ষুকের যন্ত্রণায় রাজধানীর ট্রাফিক সিগনাল থেকে শুরু করে বিপণীবিতান, মসজিদ-মাজার এমনকি বিমানবন্দরের মানুষও অতিষ্ঠ। বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী, শিশু কিংবা একবারে ছোট্ট শিশুকে ভিক্ষুক সাজিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। রাজধানীতে দুই শতাধিক স্পটে ভিক্ষুকের আনাগোনা থাকলেও মসজিদ, শপিংমল, ট্রাফিক সিগনালেই ভিড় বেশি। অন্যদিকে বাড়তি আয়ের রাজধানী এখন রিকশায় সয়লাব। এমনিতেই রাজধানীতে শুধু রিকশা আর রিকশা। অভিজাত এলাকা ভিআইপিসহ সব সড়ক, মহাসড়ক সংলগ্ন সড়ক এবং অলিগলি সর্বত্রই রয়েছে রিকশা যার ৯০ শতাংশই অবৈধ। তার উপর ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রাস্তাঘাট চেনে না, জানে না এমন শত শত নতুন রিকশাওয়ালা এখন ঢাকায়। সাধারণ হিসেব অনুযায়ী, রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার আনুমানিক সংখ্যা ২০ লাখ। এর মধ্যে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা মাত্র ৭৯ হাজার ৫৪৭টি। বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতির নামে মূলত প্রভাবশালীদের দৌরাত্মেই এসব রিকশা চলাচল করছে। এর মারাত্মক নেতিবাচকপ্রভাব পড়ছে যানজটে।
মৌসুমী ভিক্ষুক ও রিকশা দু’ক্ষেত্রেই এক ধরনের গডফাদার রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে অবৈধ অর্থের লেনদেন। কে বা কারা এসব অবৈধ অর্থের কারবারে জড়িত সে নিয়ে ইতোপূর্বেও বহুবার লেখালেখি হয়েছে। এমনকি এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টমন্ত্রীও কথা বলেছেন। বাস্তবে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়েছে সেকথা বলার কোন উপায় নেই। পুরনো কথারই প্রতিধ্বনি করা হয়েছে এবারেও। দেখা যাচ্ছে, মৌসুমী ভিক্ষুকের সাথে সম্পর্ক রয়েছে মধ্যসত্ত্বাভোগীর। ভিক্ষুকরা যা পাচ্ছে সেটা বণ্টিত হচ্ছে বিভিন্ন জনের মধ্যে। এটি যেমনি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তবেও এর মিল খুঁজে পাওয়া যাবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনাতে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, ভিক্ষা করার বা ভিক্ষা চাওয়ার সময়ে এদের যত দুর্বল মনে হয় আদতেই সকলে তা নয়। ভিক্ষার স্থান নিয়ে প্রায়শঃই এদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। প্রকৃতপক্ষে, এসব প্রমাণ করে এরা মূলত মস্তান নিয়ন্ত্রিত। এর ফলে একটি মৌলিক বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, সাধারণত অধিকতর সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যেই এই সময়ে যারা যাকাত আদায় করেন তাদের একটি অংশ তাদের অর্থ আলোচ্য ভিক্ষুকদেরও দিয়ে থাকেন। বাস্তবে এই অর্থ ভাগাভাগি হয়ে যায় অবৈধদের মধ্যে। ফলে যাকাতের প্রকৃত নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়। রমজান মাসকে উপলক্ষ্য করে ভিক্ষাবৃত্তি চললেও এদের অনেকেই রোজা থাকেন কিনা সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রোজা যেখানে সংযমী হতে আহ্বান জানায় সেখানে এ ধরনের মৌসুমী ভিক্ষুকের জন্য মূলত তা ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে। এধরনের প্রবণতা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। অন্যদিকে এটাও বোধকরি প্রত্যেক রাজধানীবাসী প্রত্যক্ষ করছে যে, এসময়ে যেসব অবৈধ রিকশা ঢাকায় চলাচল করছে তা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক ধরনের ইদুর বিড়াল খেলা চলে। এমনও দেখা গেছে, অবৈধ রিকশা আটকের পর আবার ফোন পেতে তাৎক্ষণিকভাবেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এর কারণ খুব সহজেই অনুমেয়। প্রকাশ্য যাই বলা হোক, এসব রিকশাও কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে গডফাদাররাই। এসব রিকশার জন্য যে হারে যানজট তৈরি হচ্ছে তার মাশুল দিচ্ছে নগরবাসী। এমনিতেই ঢাকা একটি যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে; তার উপর এসময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা কেবল ভুক্তভোগিরাই অনুভব করতে পারেন। এ ব্যাপারে হরহামেশাই লেখা হচ্ছে, তবে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, যাদের দেখার কথা তারা যত্মবান আন্তরিক না হলে পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা যায় না।
আমরা বোধহয় অনেকেই ভুলে যাই যে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। এই শহরে দেশি-বিদেশি অনেকেই থাকেন। কোথাও গাড়ী থামার সাথে সাথে শত শত ভিক্ষুকের হাত পাতার দৃশ্য দেশের ইমেজকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। মুখে সরকারের সংশ্লিষ্টরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে যত আশাবাদ ব্যক্ত করেন অথবা বড় বড় আলোচনা করেন না কেন, তা যে আষাঢ়ে গল্প সেকথাই প্রমাণ করে ভিক্ষুকের ছেদহীন হাত পাতা। করের অর্থ জনসাধারণের কাজে লাগে কি না বা লাগার মতো কোন বাস্তবতা রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে যাকাতের অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার করা গেলে হয়ত সীমিত আকারে হলেও কিছু মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরানো সম্ভব হতে পারত। এখন পরিস্থিতি সেখানেও নেই। যাই হোক, আলোচ্য মৌসুমী ভিক্ষুক ও অবৈধ রিকশাচালকদের হাত থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এমনিতেই হয়ত তারা কদিন পর চলে যাবে সুতরাং ও আন্তরিক একে সাফল্য হিসেবে না দেখিয়ে এদের আসা কিভাবে ঠেকানো যায় তা নিয়ে কাজ করাই উত্তম। দারিদ্র্য বা অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা ভিক্ষুক ও রিকশাওয়ালার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ যদিও এর সঙ্গে অন্যান্য কারণও রয়েছে। আমাদের ধারণা, মানুষের আর্থিক স্বাচ্ছান্দ্য নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতির আপনা-আপনিই পরিবর্তন ঘটবে। কাজেই সেদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভিক্ষুক ও রিকশার দৌরাত্ম্য
আরও পড়ুন