Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্মরণকালের টানা শীতের কামড়

কনকনে হাওয়া ঘন কুয়াশায় জনজীবনে কষ্ট-দুর্ভোগ অব্যাহত

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

হাড় হিম হওয়া কনকনে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে শীত ও কুয়াশার ঘোর অব্যাহত রয়েছে মাসখানেক যাবৎ। স্মরণকালের টানা শীতের কামড়। শুধু বাংলাদেশেই নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তানের শত কোটি মানুষ প্রচন্ড শীতে এবার জবুথবু। এমনকি মরুর দেশ সউদি আরবের একাংশে জর্ডান সীমান্ত বরাবর পাহাড়-মরুভূমি বরফে আচ্ছাদিত। মরুভূমির জাহাজ উটের বহর সাদা হয়ে গেছে বরফের চাদরে। অথচ গেল গ্রীস্ম মৌসুমে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তানে ভয়াবহ তাপদাহে কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু ঘটে। আবহাওয়া-জলবায়ুর চরম ভাবাপন্ন ও বৈরি আচরণে মানুষের জীবন-জীবিকা ক্রমাগত বিপন্ন দশায় ধাবিত হচ্ছে। সঙ্কটে পড়ছে কৃষি-খামার, উদ্ভিদ, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ।

এদিকে মাঘ মাসের প্রথম দিনটিতে ‘বাঘ কাঁপা’র কিংবা ‘কাঁদা’র মতো অতটা তীব্র আকারে শীতের দাপট ছিল না গতকাল বুধবার। ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার পারদ যথেষ্ট উঁচুতে রয়েছে। তবে উত্তুরের হিমেল হাঁড় কনকনে হাওয়া, ঘন কুয়াশাপাত, বাতাসে জলীয়বাষ্পের মাত্রা বেশি থাকা- প্রধানত এ তিন কারণে জনজীবনে কষ্ট-দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের একাংশ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, শ্রীমঙ্গলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে এসব এলাকার অনেক স্থানে আজ (বৃহস্পতিবার) তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে।

তাছাড়া আজ সার্বিকভাবে সারাদেশে পারদ আরও কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। মাঘের এ সময়ের আবহাওয়ার নিরিখে পারদ এখন সহনীয় রয়েছে। কিন্তু আসছে সপ্তাহে দেশের কোথাও কোথাও ফের ‘শীত নামানো’ বিক্ষিপ্ত হালকা কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তেমনটি গুঁড়ি গুঁড়ি বর্ষে তাহলে চলতি মাঘ মাসে আবারও তীব্র থেকে তীব্রতর শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে দেশ। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৭.৫ এবং সর্বোচ্চ সীতাকুন্ডে ২৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৬ এবং সর্বনিম্ন ১৪.২ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৭ এবং সর্বনিম্ন ১৪.২ ডিগ্রি সে.।

আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ জায়গায় কুয়াশা পড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

রাজশাহী, নওগাঁ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তবে তা কিছু এলাকায় কমে যেতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এর পরের ৫ দিনে হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, ঢাকায় উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় অর্থাৎ শীতের একটি বলয় বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক একটি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন ৮.৮ ডিগ্রি
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ঘন কুয়াশা, হাড় কাঁপানো শীত আর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হিমেল জনজীবন। গত কয়েকদিন থেকে দিনের বেলা সুর্যের দেখা মিললেও বিকেল হওয়ার সাথে সাথে জেঁকে বসছে ঘন কুয়াশা কনকনে শীত।

গতকাল বুধবার ভোর ৬টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল ঠান্ডা হাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও ছিন্নমুল মানুষ। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় বিশেষ কাজ ছাড়া সকালে বাইরে বের হচ্ছে না অনেকেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, চলতি বছর জেলায় ৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা লাগানোর টার্গেট নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয় ৫ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও আলুর টার্গেট ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে এখন পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৬ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। টানা শীতের কারণে কিছু কিছু এলাকায় বোরো ও আলু ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও দিনে রোদের কারণে ক্ষতিটা পুষিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেনালের হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: পুলক কুমার সরকার জানান, প্রচন্ড শীতের প্রকোপে শীতজনিত রোগে প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরমধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। ডায়রিয়া ও নিউমেনিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, আরো কয়েকদিন আবহাওয়া এমন থাকবে। বুধবার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকড করা হয় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহা জানান, শীতকে মোকাবেলায় ইতোমধ্যে ৬৩ হাজার ১৪ পিস কম্বল উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি শিশুদের জন্য ৩ লাখ টাকার শীতের পোষাক কেনা হয়েছে। এছাড়াও শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা ও কম্বল কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। মজুদ আছে ২ হাজার শুকনো খাবার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ