পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) উপনির্বাচনে নৌকার থাবায় বিএনপির অবস্থা ছিল অসহায়। দুপুরেই মাঠ ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে চলে আসেন ধানের শীষের প্রার্থী। আর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, ক্যাডাররা কেন্দ্রে কেন্দ্রে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তবে ভোটগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বয়ং এবং নেতাকর্মীরা গণরায়ে হারেন কিনা এ নিয়ে ভেতরে-বাইরে ছিলেন তটস্থ।
পৌষের কনকনে শীত ও কুয়াশার কষ্ট সত্তে¡ও ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটারেরা। নবীন ভোটারের পাশাপাশি বয়োবৃদ্ধদেরও লাইন দেখা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে না পেরে হতাশ হয়েই বাড়ি ফেরেন অনেকে। পরিস্থিতি জানাজানি হলে ভোট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যারা তারাও যাননি ভোট দিতে।
দখলবাজি, ককটেলবাজি, কেন্দ্রদখলে নিয়ে নৌকার সমর্থকদের প্রভাব বিস্তার, দেশি অস্ত্রের মহড়া, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং ভোটারদের বাধা দানসহ নানা অনিয়মের মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলার ১৭০টি কেন্দ্রের এক হাজার ১৯৬টি ভোট কক্ষে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শীত আর কুয়াশার মধ্যে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও নৌকার সমর্থকদের দাপট এবং ভীতিকর পরিস্থিতিতে ভোটারের সংখ্যা কমতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফাঁকা হয়ে যায় বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র।
মহানগরীর ১০১টি কেন্দ্রের প্রায় সবকটিতে ছিল নৌকার সমর্থকদের দাপট। তবে বোয়ালখালী উপজেলার কেন্দ্রগুলোতে তার ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। কেন্দ্র দখলে নিয়ে ছাত্রলীগের ও যুবলীগের নামে দাপট দেখানো হলেও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিল নীরব। আর অসহায় ছিল ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় অনেক ভোটার ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন। মহানগরীর কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির এজেন্ট দেয়া হয়। বিএনপি সমর্থক ভোটারদের উপস্থিতিও ভাল ছিল। তবে উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগের কর্মীরা গ্রাম থেকে নিজেদের উদ্যোগে ভোটারদের কেন্দ্রে হাজির করেছে।
মহানগরীর প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন ভোটাররা। ভোট শুরুর পরপরই বহদ্দারহাট মোড়ে এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দফায় দফায় ককটেলবাজির ঘটনা ঘটে। খাজা রোডে নৌকার সমর্থকদের লাঠিসোটা হাতে বিএনপির সমর্থক ভোটারদের তাড়া করতে দেখা যায়। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বাইরে ছিল নৌকার ব্যাজধারী কর্মীদের আনাগোনা। কেন্দ্রে ঢোকার আগে ভোটারদের তাদের জেরার মুখে পড়তে হয়। অনেক ভোটারকে কেন্দ্র থেকে ফেরত পাঠান তারা। বোয়ালখালীর কেন্দ্রগুলোতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিল সক্রিয়।
বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান অভিযোগ করেছেন, ১৭০ কেন্দ্রের মধ্যে ১২০টি দখল করে নিয়েছে নৌকার সমর্থকেরা। তারা সেখানে সাধারণ ভোটারদের বাধা দিয়েছে। ক্যাডাররা নিজেরাই সবুজ বাটন চেপে নৌকায় ভোট দিয়েছে। তিনি নিজেও চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সিডিএ মডেল স্কুলে ভোট দিতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে অবরুদ্ধ হন। পুলিশের সামনেই তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। পরে পুলিশ তাকে কেন্দ্র থেকে বাইরে নিয়ে আসে। তবে যারা অবরুদ্ধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিএনপির সমর্থকদের মারধর এবং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকান পাননি বলে জানান তিনি। দুই দফা সংবাদ সম্মেলন রেখে নির্বাচন স্থগিত রেখে পুনঃনির্বাচনের দাবি করেন বিএনপির প্রার্থী। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ দাবি করেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিএনপি জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারা এসব অভিযোগ করছেন।
কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে ককটেলবাজির ঘটনায় ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বহদ্দারহাট মোড়ের এখলাছুর রহমান স্কুল কেন্দ্রে সকালে পরিদর্শনে আসেন মোছলেম উদ্দিন ও আবু সুফিয়ান। তাদের দুজনের কোলাকুলির কিছ্ক্ষুণ পর শুরু হয় ককটেলবাজি। কেন্দ্রের সামনে নৌকার সমর্থকেরা মিছিলও করে। অনেক কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর লোকেরা দেখে দেখে তাদের লোকজনকে ভোটকেন্দ্রে ঢোকার সুযোগ দিলেও ধানের শীষের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়। নগরীর চান্দগাঁও এনএমসি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে একজনকে ভোট দিতে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ কেন্দ্রের ধানের শীষের এজেন্ট সালাউদ্দিন সাহেদ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আমাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এছাড়া রাবেয়া বসরী ইনস্টিটিউট ও আল হুমাইয়া মহিলা মাদরাসা কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর চান্দগাঁও মজিদিয়া ইসলামীয়া আলীয়া মাদরাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি একবারেই কম। এ কেন্দ্রের ১২টি বুথে ভোটগ্রহণ চলে। এ সময় কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটগ্রহণ কাজে ব্যস্ত দেখা গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার মো. ইউসুফ শীত ও কুয়াশার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম বলে জানান।
এ উপ-নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে সকাল থেকে বয়োবৃদ্ধ ও তরুণ ভোটারদের অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে পারেনি। অনেক ভোটার ককটেলবাজির কারণে ভয়ভীতি নিয়ে বাসাবাড়িতে ফিরে যায়। উপ-নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দায়িত্বরত পুলিশ আনসার ছিল নির্বিকার। কেন্দ্রের ভেতরে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ছিল অসহায়।
বেলা ১২টায় বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একচেটিয়া নৌকার সমর্থকরা ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরে টমটম ও রিকশাযোগে বাসাবাড়ি থেকে নৌকার প্রার্থীর ভোটারদের আনতে দেখা যায়। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের তৎপরতা দেখা যায়নি। বেলা ১টায় পিসি সেন সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে একচেটিয়া ভোটগ্রহণের দৃশ্য দেখা যায়। ভোটারদের কোন লাইন ছিল না। ভোটাররা বিচ্ছিন্নভাবে বাইরে ঘোরাফেরা করছে। বেলা ২টায় উপজেলার মধ্যম শাকপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে কয়েকজন ভোটার কেন্দ্রে ঢুকে ভোট দিচ্ছে। এ সময় তাদের সাথে নৌকার ব্যাজ পড়া লোকজনকে ভোটারদের সাথে বের হতে দেখা গেছে।
বাইরে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ার মার্কা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদকে। ভোট কেমন চলছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেমন চলছে আপনারা তো দেখছেন। এটি কিসের ভোট। আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আমি আর বেশিকিছু বলতে চাই না। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা, মহানগরীর চান্দগাঁও ও বায়েজিদের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনে এ উপ-নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদলের ইন্তেকালে আসনটি শূন্য হয়।
বিজয়ী মোছলেম উদ্দিন আহমদ : চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। রাত পৌনে ৯টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান সিজেকেএস জিমন্যাসিয়াম সংলগ্ন কন্ট্রোল রুম থেকে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী দলের চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ জেলার আহŸায়ক আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট। ১৯৭৩ সালের পর এ প্রথম এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী বিজয়ী হলেন। ফলাফল ঘোষণার পর উল্লাসে ফেটে পড়েন নৌকার সমর্থকেরা। তবে সেখানে ধানের শীষের প্রার্থী এবং তার সমর্থকদের কাউকে দেখা যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।