মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কাজে গিয়েছিলেন বাবা-মা। বাড়িতে দুই সন্তান। দূর থেকে দেখতে পেয়েছিলেন, বাড়িতে আগুন লেগেছে। পড়িমড়ি করে দৌড়ে এসে দুই সন্তানকে উদ্ধার করেছিলেন মা। দেওয়ালে ঝোলানো কিম ইল-সাং এবং কিম জং-ইলের ছবি বাঁচনোর কথা তখন মাথায় ছিল না। কিন্তু প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাদের ছবিকে এ ভাবে অপমান! ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে খবর, গ্রেপ্তার হন মা। আইন যা, তাতে এই ‘অপরাধে’র জন্য সশ্রম কারাদণ্ডের মুখে পড়তে হতে পারে তাকে।
অবাক লাগলেও দেশটা যে উত্তর কোরিয়া! কিম জং উনের দেশে আইন-কানুন খুব কঠিন, আর সে কারণেই সন্তান বা প্রিয়জনের জীবন নয়, প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাদের ছবি বাঁচানোই এখানে জাতীয় কর্তব্য! রাষ্ট্রনেতাদের ছবি বাঁচাতে গিয়ে কেউ যদি জীবন হারান, তবে দেশবাসীর চোখে তিনিই ‘হিরো’।
ঘটনাটি চীন সীমান্ত সংলগ্ন নর্থ হ্যামগঙ্গ প্রদেশের। সেখানের অনসং কাউন্টির বাড়িটিতে দুই পরিবারের বাস। দুই পরিবারের মা-বাবাই কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। দু’টি বাচ্চা ছিল বাড়িতে। বাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে দৌড়ে আসেন বাবা-মা। বাচ্চা দু’টোকে উদ্ধার করা গেলেও বাঁচানো যায়নি উত্তর কোরিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাদের ছবি দু'টি। খবর পেয়েই তদন্ত শুরু করে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গ্রেপ্তার হন দুই মা। দোষী সাব্যস্ত হলে দীর্ঘ কারাবাস!
উত্তর কোরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি বাড়িতে প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতা কিম ইল-সাং এবং কিম জং-ইলের ছবি রাখা বাধ্যতামূলক। সকলে সেই নিয়ম পালন করছে কি না, দেখতে বাড়ি বাড়ি চলে সরকারি পরিদর্শন। শুধু বাড়িতেই নয়, দেশের সবক'টি স্কুল, রেলস্টেশন, সাবওয়ে ট্রেনে প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাদের ছবি রাখা বাধ্যতামূলক এবং তা যথেষ্ট সম্মান ও যত্ন সহকারে। কিম জং-উনের ছবি অবশ্য এই তালিকায় যুক্ত হয়নি। ক্ষমতায় আসার সাত বছর পর, ২০১৮ সালে তার প্রথম অফিসিয়াল পোট্রেট সামনে আসে। কিন্তু তা এখনও পাবলিক প্লেসে রাখা বাধ্যতামূলক হয়নি। তবে, শুধু ছবি বা পোট্রেট রেখেই দায়িত্ব শেষ নয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাদের ছবির কোনও রকম অবমাননা গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হবে, সেই অনুযায়ীই হবে শাস্তি।
ঘটনার পর পরই গ্রেপ্তার হওয়ায় আহত সন্তানদের হাসপাতালেও নিয়ে যেতে পারেননি দুই মা, দিতে পারেননি ওষুধও। প্রতিবেশীরা সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিজেদের বিপদ আঁচ করে নিরস্ত থেকেছেন। তদন্ত শেষ হলে তবেই বাচ্চাদের চিকিৎসা করানোর অনুমতি পাবেন দুই মা।
উত্তর কোরিয়ার এই ‘একুশে আইনে’র কথা প্রকাশ্যে আসে ২০১৫ সালে। ২০০৫ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা জুন ইয়ো-সাং এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘একটা বাড়িতে আগুন লাগার পর বেশ কয়েকটি বাচ্চার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। প্রত্যেকে রাষ্ট্রনেতাদের ছবি আঁকড়ে ধরেছিল। অর্থাৎ, নিজেদের জীবন নয়, ছবি বাঁচানোই মূল লক্ষ্য।’ ২০১২ সালে সিনহাং কাউন্টিতে হড়পা বান এসেছিল। তখন কিমের ছবি বাঁচাতে গিয়ে ডুবে মারা যায় ১৪ বছরের এক কিশোর। মৃত্যুর পর তাকে ‘কিম জং-ইল ইয়ুথ অনার’-এ সম্মানিত করা হয়। তার নামে নামাঙ্কিত করা হয় তার স্কুলটিকে। অনসং কাউন্টির এক যুবক কিমের ছবি বাঁচিয়ে এমন সম্মান পেয়েছিলেন, যে অপরাধে জেল খাটা সত্ত্বেও তিনি এলাকার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি বলে গণ্য!
মার্কিন শিক্ষার্থী ওত্তো ওয়ার্মবিয়ার এক বার কিম ইল-সাংয়ের নাম লেখা পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছিলেন বলে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল। মার্কিন পর্যটক রে কানিংহাম ছয়বার উত্তর কোরিয়া গিয়েছেন। তার কথায়, ‘ওদের কাছে দেশাত্মবোধ আর কিমের পরিবারের প্রতি আনুগত্য সমার্থক। আমাদের কাছে এটা পাগলামো ছাড়া আর কিছুই নয়।’
ছবি রাখার নিয়ম: লিভিং রুমের চোখে পড়ার মতো জায়গায় ঝোলাতে হবে ছবিগুলো, সেটাও পরিবারের সবচেয়ে লম্বা সদস্যের মাথার চেয়ে বেশি উচ্চতায়, যাতে আর কেউ প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাদের থেকে বেশি মাথা উঁচু করে না থাকতে পারেন। ছবিগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এতটুকু ধুলোর পরত থাকলে হবে জরিমানা। ধুলোর পরত যত মোটা, তত মোটা জরিমানার অঙ্ক। ছবিগুলির সঙ্গে একই দেওয়ালে শুধু প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া কোনও পুরস্কার বা রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি ঝোলানো যাবে। সূত্র: দ্য গল টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।