পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পঞ্চম শ্রেণী শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত বদলের কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শিক্ষাবিদরাও বলছেন, শিশুদের সাথে এভাবে ছেলেখেলা ঠিক হচ্ছেনা। মাত্র একসপ্তাহ আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী প্রাথমিকের সমাপনী পাবলিক পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, অষ্টম শ্রেণীতেই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তার এই ঘোষণা শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে স্বস্তি বিধান করলেও মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত নতুন উদ্বেগের কারণে পরিণত হয়েছে। শিশুদের উপর অতিরিক্ত চাপের বিবেচনায় পঞ্চম শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তকে শিক্ষাবিদরাও অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এই বাস্তবতায় গত সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে মন্ত্রী সভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী পরিষদ সচিব জানিয়েছেন, পঞ্চম শ্রেণীর পরিবর্তে অষ্টম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব মন্ত্রী সভা অনুমোদন করেনি। বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবটি আরো পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদের এ ধরনের সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরি। তিনি একটি ইংরেজি দৈনিককে বলেছেন, এধরনের সিদ্ধান্ত থেকে আমরা কি পাচ্ছি? সিদ্ধান্তের উপকারিতা কি এবং কারা এ থেকে উপকৃত হচ্ছে? বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম একটি বাংলা দৈনিককে বলেছেন, শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা ও উদ্দেশ্যবিহীন কা- করা উচিত হয়নি। তিনি মনে করেন, পরীক্ষাকেন্দ্রিক পড়াশোনায় শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল আগ্রহ চলে যায়। তাই সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করতে হবে, পরীক্ষা কমাতে হবে।
পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের সুস্পষ্ট ঘোষণাই দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। এই পরীক্ষা শুরুর প্রথম থেকেই এর বিরুদ্ধে গণ ক্ষোভ রয়েছে। নতুন করে সিদ্ধান্ত বাতিলের পর অভিভাবকরা বলছেন, সরকারের একজন মন্ত্রী যখন একটা বিষয়ে ঘোষণা দেন, তখন জনগণ একে সরকারি ঘোষণা বলেই মনে করে। গত ২১ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এবার থেকেই সমাপনী পরীক্ষা বাদ। কথা হয়ে গেছে। এখন বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা। মন্ত্রী সভার সিদ্ধান্তের পরও আলোচ্য মন্ত্রী বলেছেন, আলাপ-আলোচনা করেই তারা একটি পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মন্ত্রী সভার বৈঠকের পর সভার সদস্যদের কেউ কেউ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রায় সোয়াঘন্টা ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসময়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের কয়েকজন আকস্মিকভাবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি তোলেন। সংগত বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, কেন তারা এমনটি করলেন? এদিকে আগামীতে পঞ্চম শ্রেণীতে পরীক্ষা বাতিল হবে এ ঘোষণার পরপরই অভিভাবকরা আন্দোলনে নেমে পড়েছিলেন। তাদের যৌক্তিক দাবি ছিল এই পরীক্ষা শিশুদের বাড়তি মানসিক চাপে ফেলেছে। রাশেদা কে চৌধুরিও মনে করেন, এই পরীক্ষা শিশুদের খেলার সময়, সাংস্কৃতিক কর্মকা- অথবা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছিনিয়ে নিয়েছে। বস্তুত এবছর থেকে সমাপনী পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে এই ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন অভিভাবকবৃন্দ। তার সংগতকারণও রয়েছে। বিদ্যমান পরীক্ষার নেতিবাচক প্রভাব কেবলমাত্র কোমলমতি শিশুদের উপরই পড়েছে তেমনটা মনে করার কোন কারণ নেই বরং এর সাথে অভিভাবকরাও জড়িত। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে জমজমাট কোচিং বাণিজ্য। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্রের সেট কেনাবেচার মত মারাত্মক ঘটনাও শিশুদের এ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ঘটেছে। এত ছোট শিশুদের নিয়ে ব্যস্ত এই নগরীতে সকাল-সন্ধ্যা অভিভাবকদের ছুটাছুটি কতটা বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বোঝেন। একথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষামন্ত্রী এ পরীক্ষা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার যত কথাই বলুন না কেন বাস্তবতা হচ্ছে, এসবের গুরুত্ব অনুধাবনের চেয়ে একে একটা বোঝা বলেই শিশুরা মনে করে। আর এই প্রবণতা শিশু মননে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবই ফেলছে। একথাও যথার্থ যে এসব পরীক্ষার আয়োজন করে আমরা শিশুদের শিক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার্থী বানিয়ে ফেলেছি। অন্যদিকে এ ধরনের পরীক্ষা নিয়ে মন্ত্রী সভার সিদ্ধান্ত কার্যত ২০১০ সালের শিক্ষানীতি পরিপন্থী। ওই নীতি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, দেশব্যাপী পঞ্চম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা একই প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হবে এবং পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে অষ্টম শ্রেণীতে। বাস্তবত, পঞ্চম শ্রেণীতে যে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা নজিরবিহীন।
শিক্ষা কারিকুলাম ও নিয়মনীতি নিয়ে এদেশে তেলেসমাতি এ পর্যন্ত কম হয়নি। যে কোন ইস্যুতে নানা আলোচনা-আন্দোলনের ইতিহাসও কম নেই। কার্যত শিক্ষার উন্নতির কথা বলা হলেও বাস্তবে ঘটছে তার বিপরীত। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে দেশে শিক্ষার মান এখন সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। সার্টিফিকেটকে এখন আর যোগ্যতার যথাযথ সনদ বলে মনে করা হয় না। যেকোন ভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। পরিকল্পিতভাবে শিশুদের গড়ে তোলা না গেলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। শিশুদের গড়ে উঠতে তাদের মেধা-মননের প্রতি নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সে বিবেচনায় শিশুদের গড়ে তুলতে শিক্ষা কার্যক্রমের অবদান এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই। পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত একটি শিশুর যে বয়স তাতে তার পক্ষে পাবলিক পরীক্ষা অনেক বড় বোঝা। তার কচি মাথা এতটা বোঝা বহনে কার্যতই অক্ষম। এমনিতেই পঞ্চম শ্রেণীতে মেধা যাচাইয়ের জন্য বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সে জন্য যোগ্যদের নির্ধারণে বিদ্যালয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এর উপর উপরের শ্রেণীতে ওঠার জন্য আলোচ্য বাধ্যতামূলক পরীক্ষা মূলত শিশুদের প্রতি বড় ধরনের অবিচারের শামিল। সে বিবেচনায় উঠিয়ে দেয়ার ঘোষণা ছিল যৌক্তিক ও সুবিবেচনা প্রসূত। যেসব খোঁড়া যুক্তিতে মন্ত্রী পরিষদের কোন কোন সদস্যের চাপে বা অন্যকোন কারণে ঘোষণাটি বাতিল করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে অগ্রহণযোগ্য। আমরা মনেকরি, অবুঝ শিশুদের উপর চাপ এবং অভিভাবকদের গভীর উদ্বেগকে বিবেচনায় নিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীর পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এটি সরকারের ইমেজের সাথেও জড়িত। অভিভাবকরা ধরেই নিয়েছিল যে পরীক্ষাটা হবে না। সেখানে নতুন সিদ্ধান্ত থেকে মনে হতে পারে একাধিক কর্তৃপক্ষ সরকার চালায়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে সুবিবেচনা করবেন এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।