পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একটি চরম উত্তেজনা ও আশঙ্কার মধ্যেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তেজনা পরিহার করে স্বস্তিদায়ক ভ‚মিকা গ্রহণ করায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। ইরাকের মাটিতে ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সুলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করার পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়। এ পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যে ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কণ্ঠে প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি শোনা গেছে। মঙ্গলবার ইরাকের আইন আল আসাদ ও ইরবিল সেনাঘাটিতে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পর মার্কিনীদের পক্ষ থেকে শক্ত প্রত্যাঘাতের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে সে আশঙ্কা ও উত্তেজনা আপাতত কমেছে। গণমাধ্যমে দেয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ১০ মিনিটের বিবৃতিটি ছিল অত্যন্ত পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত। বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সকলের আশঙ্কাকে মিথ্যা প্রমানিত করে তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা বা সামরিক পদক্ষেপ থেকে বিরত থেকেছেন। তিনি সামরিক পদক্ষেপের বদলে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরো জোরদার করার কথা বলেছেন। এমনিতেই ইরানের উপর কয়েক দশক ধরে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ইরান, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এসব নিষেধাজ্ঞা দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ালেও শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উত্তেজনা নিরসনে তেমন কোনো কাজে আসেনা।
কাসেম সুলাইমানি হত্যার পর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও যুদ্ধের আশঙ্কা নিরসনে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ আন্তর্জাতিক মহলের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ ও কুটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ইরানের সাথে ৬ বিশ্বশক্তির পারমানবিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কা অনেকটাই কমে এসেছিল। ২০১৮ সালে মূলত ইসরাইলের চাপে এই যুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনি শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়াকে বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। এহেন বাস্তবতায় ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক কমান্ডারকে ড্রোন হামলায় হত্যা করা ছিল আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মত পদক্ষেপ। সুলাইমানি হত্যার পর যে সব হুমকি ও পাল্টা হুমকির কথা শোনা গিয়েছিল, তাতে ইরাকে মার্কিন সেনাঘাটিতে ইরানের মিসাইল হামলার ঘটনাটি যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অনুঘটক হয়ে উঠতে পারত। সম্ভাব্য যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে বুধবার ট্রাম্পের সংযত বক্তব্য এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ বিশ্বকে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে আপাতত রক্ষা করেছে বলেই ধরে নেয়া যায়।
বিশ্বের এক নম্বর সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অগ্রাহ্য করা যায় না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যর্থাথভাবেই সে অবস্থান ও দাবী তুলে ধরেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকটের অনেকটা দায়ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে সেটা অব্যাহত রয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে অন্তহীন যুদ্ধ এবং বিদেশে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে নেমে বিজয়ী হয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি এবং আঞ্চলিক সংঘাতই এই মুহূর্তে বিশ্বশান্তির অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সুলাইমানি হত্যার মধ্য দিয়ে যে সংঘাতমূখর অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে তা নিরসনের উদ্যোগও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামরিক পদক্ষেপের বদলে ক‚টনৈতিক উদ্যোগই হতে পারে গ্রহণযোগ্য বিকল্প। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছেন। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সমস্যার সমধান ও অনাস্থা-বৈরীতা নিরসন করা যায়নি। এখন ক‚টনৈতিক সমঝোতার কথা ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানি নেতাদেরকেও ধৈর্য, সহনশীলতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি বড় ধরনের যুদ্ধ হলে পুরো বিশ্বই চরম ক্ষতির মধ্যে পড়বে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসলামি বিশ্ব ও মুসলমানরা। যে কোনো অনাকাঙ্খিত যুদ্ধ ও সংঘাত এড়াতে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংহতি প্রতিষ্ঠায় ওআইসিসহ মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ ভ‚মিকা পালন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।