Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্যুত খাতে অস্বাভাবিক ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিদ্যুত খাতের ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারের জরুরি উদ্যোগ হিসেবে নেয়া রেন্টাল ও কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে এসব উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও সাময়িক ও স্বল্প মেয়াদি উদ্যোগ হিসেবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের ১০ বছর পেরিয়ে এসেও কেন জনগণের অর্থের অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা অনেক বড় প্রশ্ন। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কোনো বিদ্যুৎ না নিয়েই গত ৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের বিল পরিশোধে ৩১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। এ খাতে খরচের হার ক্রমেই বাড়ছে। গত অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। বিদ্যুতের জরুরি চাহিদা না থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করছে। এমনিতেই পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে বেসরকারি খাত থেকে অনেক বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। চুক্তি অনুসারে ক্যাপাসিটি চার্জের মূল্য দিতে গিয়ে বিদ্যুতের মূল্য আরো বেড়ে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের এই বাড়তি মূল্যের বোঝা গিয়ে চাপছে সাধারণ গ্রাহকদের উপর। বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও ক্রমবর্ধমান ভর্তুকির ঘাটতি মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আপদকালীন চাহিদা মিটানোর জরুরি প্রয়োজনে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার শর্তে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা না থাকলেও ১০ বছর ধরে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাড়তি মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে জনগণের উপর বোঝা চাপিয়ে দেয়ার অপরিণামদর্শী তৎপরতা চলছে। গত ১০ বছরে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা এবং উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বেশি হওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জের খরচ আদায় করছে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উদ্যোক্তারা। প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, গত গ্রীষ্মকালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার মেগাওয়াট, আর উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াট। সম্প্রতি প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪০ শতাংশই অব্যবহৃত বা উদ্বৃত্ত থাকছে, যা সরকারের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পিডিবি বা সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা সংকুচিত করে বেসরকারি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত এক দশকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর আয়ের হিসাব লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এ সময়ে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয় কয়েকগুণ বেড়েছে। বার বার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে এই অর্থের যোগান দিয়েছে সরকার। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে চুক্তির পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎখাতে বড় প্রকল্পগুলো গত ১০ বছরেও তেমন কোনো কাজে আসেনি।

বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে রাজনৈতিক বেøইম গেম ও সরকারি মহলের আত্মতুষ্টির প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এক সময় চারদলীয় জোট সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা না করেই শুধু পিলার বসিয়ে সরকারের শত শত কোটি টাকা খরচের বিষয়টি প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হলেও বর্তমানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যবহারের পর্যাপ্ত খাত না থাকলেও বাড়তি উৎপাদনে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার গচ্চা সরকার ও জনগণের অনেক বড় অপচয় ও বোঝা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বিদ্যুৎ না নিয়েও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ৫ বছরে ৩১ হাজার কোটি টাকা দেয়ার এই ধারাবাহিকতা বন্ধের কোনো আসু সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু নতুন নতুন রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। ক্রমবর্ধমান ভর্তুকি ও লোকসান সামাল দিতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে চুক্তির নবায়ন স্থগিত করার বদলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ধারাবাহিক প্রবণতা বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নের সাথে বিনিয়োগ, উৎপাদনব্যবস্থা জীবন মানের উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল। গত এক দশকে বিদ্যুৎখাতে সরকারের অর্জন অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে জনগণের উপর বাড়তি মূল্যের বোঝা চাপিয়ে এ খাতে শ্বেতহস্তি পালনের কোনো মানে নেই। বিদ্যুৎখাতের অস্বচ্ছ, দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার বিষয়টি জনমনে বড় ধরনের সংশয় সৃষ্টি করেছে। কার স্বার্থে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে, এ বিষয়ে উত্থিত প্রশ্ন ও সমস্যাগুলো নিয়ে জাতীয় সংসদে খোলামেলা আলোচনা করে জনমনের সংশয় দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের এড-হক ভিত্তিক পদক্ষেপ ও অপরিণামদর্শী চুক্তিগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুত খাত
আরও পড়ুন