বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামী ১০ জানুয়ারি হতে শুরু হতে যাচ্চে বিশ্ব মুসল্লিম উম্মাহ ও তাবলীগ জামায়েতের ৫৫তম গণজমায়েত বিশ্ব ইজতেমা।
মুসলমানদের এ মহাসমাবেশে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটি।
ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রস্তুতি কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১৬০ একর বিস্থৃত এলাকা জুড়ে ইজতেমা ময়দানে বিশাল সামিয়ানা টানানোর কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এছাড়াও খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাধাঁ ও বৈদ্যুতিক তার ও বাতি টানানোর কাজ। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে তাবলীগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ময়দানে এসেছে। ময়দানের প্রস্তুতি কাজ শেষে আগামী ১০ জানুয়ারী প্রথম পর্বে তারা অংশ নিবেন এবং তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শুনবেন। সেই সাথে ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাত বদ্ধ হয়ে ১, ২, ৩ চিল্লায় বেরিয়ে যাবেন।
এদিকে, বিশ্ব ইজতেমাকে উপলক্ষে করে শিল্পাঞ্চল খ্যাত টঙ্গীর আবাসিক বাসা বাড়িতে চলছে সাজসজ্জার কাজ আর গৃহীনিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ঘর গোছানো ও আত্বীয় স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবদের থাকা খাওয়ার আপ্যায়নে প্রত্যাশা নিয়ে।
ইজতেমা সূত্রে জানা যায়, ইজতেমার দুই পর্বের প্রথম পর্ব শুরু আগামী ১০ জানুয়ারি প্রথম ধাপ আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। মাঝখানে ৪ দিন বিরতির দিয়ে ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে ১৯ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ।
ইজতেমা ময়দানে টাঙাইল থেকে কাজ করতে আসা ইমান উদ্দিন জানান, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য শীত কোন বাঁধা নয়। স্বতর্স্ফত ভাবে কাজ চলছে।
ইজতেমা ময়দানের মুরব্বী মাওলঅনা জোবায়ের অনুসারী ডা. কাজী সাহাবুদ্দিন জানান, বিদেশী ওলামা মাশায়েখরা বিশেষ করে বিদেশী মেহমান সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা এ দেশে অবস্থান করে দাওয়াতী কাজ করছেন। ইজতেমা ময়দানের সব কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ভুমিকা পালন করছেন।
মেয়র জাহাঙ্গীর জানান, ইজতেমার প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষের দিকে।
ইজতেমা সফল করার জন্য সিটি কর্পোরেশনে পক্ষ থেকে সব ধররে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ময়দানে বালি ফেলা, ময়লা আর্বজনা পরিকার পরিচ্ছন্নসহ বিভিন্ন উন্নয়ণমূখী কাজ চলছে। মেয়র নিজে প্রায় প্রতিদিন ময়দানের খোজ খবর নিচ্ছেন।
গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল জানান, ইজতেমা ময়দানে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে কোন ধরনের অসুবিধায় না হয় তার জন্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, নিরাপত্তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ময়দান পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।
ইজতেমা ময়দানে জেলাওয়ারি প্রথম ধাপে অংশ নেয়া মুসল্লিদের জন্য ৮৭ টি (খিত্তা) নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ৬৪ জেলার মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন। প্রথম পর্বে ঢাকা জেলার জন্য পুরো ময়দানকে ২৩ টি এবং ময়মনসিংহ জেলার জন্য ২ টি খিত্তা আলাদা করা হবে। এছাড়া ময়দানে প্রবেশের জন্য ২০টি প্রবেশ পথ করা হচ্ছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ও ব্যবসায়ীসহ কলকারখানার শ্রমিক-মালিক এবং বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আল্লাহর বিশেষ রহমত হাসিলের আশায় বিশ্ব ইজতেমা মাঠে কাজ করছেন। কেউ প্যান্ডেলের চট টানাচ্ছেন, কেউ খুঁটি পুতছেন, কেউ মাঠ পরিস্কার করছেন। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতির প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ময়দানে মুসুল্লিদের কাতারবদ্ধ হওয়ার জন্যে পুরো ময়দানের দাগ কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানের উন্নয়ন কাজে অংশ নেয়া মুসল্লিরা জনান, ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজ তাবলীগের মুরুব্বীদের তদারকি করছেন। সব কাজ করা হচ্ছে মোশাহারার (পরামর্শ) মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরী, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। বিদেশী মুসল্লিদের থাকার জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিশেষ কামরা তৈরীর কাজ ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের তুরাগ নদের পারাপারের জন্য ভাসমান সেতু (পল্টুন) স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড ওই ব্রীজ স্থাপনের কাজ করেছেন। এছাড়া
ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের ওজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্যে ইজতেমা ময়দানে গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন ঘন্টায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ওজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনী স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
ইজতেমা উপলক্ষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রাস্তার উপর পার্কিং করা গাড়ি সরানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সি ইজতেমা মাঠের চারপাশের রাস্তার ধূলাবালি নিয়ন্ত্রনে পানি ছিটানোর জন্য গাজীপুর সিটি কপোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।
ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
এদিকে গত শনিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতিকাজ ও মাঠ পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনারসহ গাজীপুর জেলা প্রশাসক। আগামী ১০ জানুয়ারী ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গত শনিবার দুপুরে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ জয়নুল বারী টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেন। এসময় কমিশনার ইজতেমা ময়দানে প্যান্ডেল তৈরী কাজের খোজ খবর নেন এবং মুসল্লীদের চলাচলের রাস্তা ও সকল সুযোগ-সুবিধার খবর নেন।
ইজতেমা ময়দান পরিদর্শনে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহীনুর ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু নাসার উদ্দিন, পুলিশের এডিসি ক্রাইম শাহাদত হোসেন, এসি আহসান উল্লাহ।
ময়দান পরিদর্শনের সময় কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১০ জানুয়ারী থেকে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আমরা প্রতিদিন বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে নানান সমস্যা সমাধানে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তদারকি করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের সুবিধার জন্য সরকার সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।