Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তর প্রদেশের মুসলমানরা আতঙ্কে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৫ এএম

উত্তর ভারতের মিরাত শহরের লিসারি গেটের কাছে মানুষেরা রাতের বেলা তাদের বাড়ির বাইরে সংকীর্ণ লেনে বসে পাহারা দিচ্ছে এখন। কোন অপরাধী চক্র বা গ্রুপ বা চোর-ডাকাতের কারণে নয়, বরং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে এই পাহারা বসিয়েছে তারা। এই এলাকাটা উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মধ্যে পড়েছে এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভে এই এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ২০ ডিসেম্বর এই এলাকার বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। লিসারি গেট এলাকায় পাঁচজন মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যেটাকে পুলিশের বাড়াবাড়ি হিসেবে উল্লেখ করছে স্থানীয়রা। পুলিশ বলছে যে, তারা বিক্ষোভকারীদেরকে গুলি করেনি এবং নিহত ব্যক্তিরা সশস্ত্র জনতার অংশ। এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। মুসলিম-প্রধান এলাকাগুলোতে পুলিশের প্রতি আস্থা স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে সিএএ নিয়ে মুসলিমদের পরিণতি কি হতে পারে, সেটা নিয়ে উদ্বেগ অনেক বেড়ে গেছে। ২৫ বছর বয়সী খুচরা কাগজের ডিলার মোহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, “আমি রাতে জেগে থাকি আর দিনে ঘুমাই। মহিলারা বাড়ির ভেতরে ঘুমায়। আমি অন্যান্য পুরুষদের সাথে লেনে বসে পাহারা দিই”। বাড়ির মাত্র কয়েক মিটার দূরে ওয়াসিমের ভাই মোহাম্মদ মহসিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। ওয়াসিম বললেন, “মহিষের খাবার কিনতে সে বাইরে গিয়েছিল। সে এমনকি বিক্ষোভে অংশও নেয়নি”। ওয়াসিম কোনরকমে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং এখন তার কাঁধে তার ভাইয়ের পরিবারের দায়িত্বও চেপেছে। গত মাসে ভারতের পার্লামেন্টে সিএএ পাস হওয়ার পর থেকে পুরো ভারতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অমুসলিম অবৈধ অভিবাসীদেরকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সরকার দাবি করেছে যে, এই তিন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে সাহায্য করার জন্যেই এই আইন করা হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলেছেন যে, এই আইনের সাথেই অবৈধ অভিবাসীদের ছাটাই করার জন্য যে সম্ভাব্য নাগরিকত্ব তালিকা তৈরির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ধর্মকে শর্ত বানিয়ে ভারতের সেক্যুলার সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের সরকার পরিচালনা করছেন বিতর্কিত হিন্দু পুরোহিত যোগি আদিত্যনাথ এবং এই আইনকে ঘিরে রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বিগত চার সপ্তাহে সারা ভারতে যে ২৫ জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে ১৯ জনই নিহত হয়েছে উত্তর প্রদেশে। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যের জনসংখ্যা ২০০ মিলিয়নের বেশি। নিহতদের অধিকাংশই মুসলিম, এবং এদের মধ্যে আট বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকার বিক্ষোভকারীদের দমনে বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘বদলা’ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদিত্যনাথ তার অতি-সমালোচিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন যে, বিক্ষোভকালে যে জনসম্পদের ক্ষতি হয়েছে, তার মূল্য তিনি আদায় করবেন। মিরাতে স্থানীয় প্রশাসন ৫ মিলিয়ন রুপি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের গুলিতে নিহত হয়েছে। তারা অস্ত্রসহ তিনজনকে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের সন্ধান দিলে ২০,০০০ রুপি পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই সাথে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে যে, পুলিশ মিরাত এলাকার সিসিটিভিগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে। লিসারি গেট এলাকার মানুষেরা এখন আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে। যে সব সড়ক সাধারণত গভীর রাত পর্যন্ত প্রাণচঞ্চল থাকে, সেগুলো রাত ৯টাতেই শুনশান হয়ে পড়ছে। বিক্ষোভ এবং এর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের কারণে পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, সিএএ’র বিরুদ্ধে বিরোধীতার বিষয়টিকে এখন নিজেদের মধ্যেই সীমিত রাখতে হচ্ছে বিক্ষোভাকারীদের। এসএএম।

 



 

Show all comments
  • শাহে আলম ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:০৬ এএম says : 0
    সারা বিশ্বের মুসলমানরাই আতঙ্কে
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার আহমেদ ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি তাদের প্রতি রহমত নাজিল করো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ