পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছোট আর পরিষ্কার, সবুজঘেরা, অনেকটা পেন্সিলে আঁকা ছবির মতো এক শহর। যে শহরের বাড়িগুলো আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা নয়, প্রতিটা রাস্তাই যেন আলাদা সাজানো। বহির্বিশ্বের কোন শহর নয়, বলছি আমাদের বরেন্দ্র ভ‚মি সিল্কসিটি রাজশাহীর কথা।
এ শহরে গরমকালে এক আবার শীতে আরেক রূপ। গরমকালে খুব সকালে বেরিয়ে পড়লে রাস্তার আশে পাশে চোখে পড়বে পরিষ্কার পরিছন্নতা, আর অনুভ‚ত হবে ফ্রেশ হিমেল হাওয়া, যা দোলা দিবে আপনার মন ও শরীরকে। রাজশাহীর পদ্মা নদীর কথাটা না বললেই নয়, সকালে এক কাপ চা খেয়ে সোজা চলে যেতে পারেন পদ্মা পাড়ে। হাঁটার মাঝে দেখবেন সকালের স্নিগ্ধতা, ঠান্ডা বাতাস আর চারপাশের পরিবেশ, ভালোলাগার মাত্রাটা অন্যরকম বাড়িয়ে দিবে। হালকা ঠান্ডা শীতল বাতাস আপনার মনকে করে তুলবে আরও আনন্দময়।
সূর্যের আলোটা তীব্র না হওয়ার আগপর্যন্ত আরও কিছুটা সময় বসুন। নদীর পানিতে একটু দ‚রে তাকালেই দেখবেন হাল্কা কুয়াশার আবির্ভাব ঘটেছে পানির উপর। খরার সময় পদ্মার বিশাল বালিচর দেখে মনে হতে পারে মরু সাহারার কথা। আবার চরের বুকে হাঁটতে গিয়ে নজর এড়ায়না বালিচরের মাঝে কত পরিশ্রম করে তৈরি করেছে সবুজ ফসলের ক্ষেত।
আবার বর্ষার সময় পদ্মার তীরে দাঁড়িয়ে মনের অজান্তে গুনগুনিয়ে উঠতে পারেন মরহুম আব্দুল আলীমের ভরাট কন্ঠের নদীর কুলনাই কিনার নাইরে.......। নদীর দক্ষিণ পারের চরের বাসিন্দাদের জীবন যাপন অন্যরকম অভিজ্ঞতা দেবে। কি মরা কি ভরা পদ্মার রুপ দেখতে বছরজুড়েই মানুষ ভীড় জমায় পদ্মার তীরে। সুবিধার জন্য সিটি কর্পোরেশন পদ্মার তীরের বিভিন্নস্থানে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা করেছে। শহররক্ষা টি-বাঁধে হাজারো মানুষ ভীড় জমায়। প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ রাজশাহী এলে ক্ষনিকের জন্য হলেও টি-বাঁধের উপর বসেন। নৌকায় চড়েন।
শুধু কি পদ্মা। রয়েছে বিরাট বিরাট বিল। চলনবিল, হালতির বিল, মহানগরসহ অনেক বিল। এসব বিলে নৌকায় বেড়াতে পারেন। হালতির বিল পরিচিতি পেয়েছে ‘‘মিনি কক্সবাজার’’ হিসেবে। কুড়ি হাজার একর বিলের বিভিন্নস্থানে উচু ঢিবির উপর ছোট ছোট গ্রাম। চারিদিকে থৈ থৈ পানির মধ্যে ঘর বসতি। আবার পানি শুকিয়ে গেলে বিল জুড়ে সবুজ ধানের ক্ষেত। এ এক অসাধারন দৃশ্য। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। ভরা বিলে ভ্রমনের সময় দেখতে পাবেন মাছ ধরার দৃশ্য। বিলের বিভিন্ন ধরনের টাটকা মাছের স্বাদই যে আলাদা। খাবার কথা এলেই চলে আসে মাষ কালাইয়ে রুটি সাথে ঝাল মরিচ পেয়াজ বেগুন ভর্তা ও হাঁসের ভ‚না গোশত কথা। আপনারা এলেও নিশ্চয় এ ভ‚লটি করবেন না।
সিলেটের সবুজ চা বাগান যেমন শিহরন জাগায়। তেমনি গাড়ি নিয়ে মাইলের পর মাইল চলার পথে শুধু নজরে পড়বে আ¤্রকানন। লাখ লাখ গাছে কোটি কোটি আমের দুলনি আপনাকে স্বাগত জানাবে। আমের ভারে ডাল নুইয়ে পড়েছে। বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় থোকায় থাকা আম আপনার শরীর ছুয়ে যাবে। সে ছোঁয়ায় মনে জাগবে অন্যরকম শিহরন। পথ চলতে আপনার সামনে যদি ধপাস করে পড়ে একটি আম। তবে ব্যাপারটা কি দাঁড়াবে গাছ পাকা আমের স্বাদই যে আলাদা। তাছাড়া কাঁচা আম টক ঝাল দিয়ে খাবার স্বাদ না খেলে বোঝা যাবেনা। আমতো সব স্থানে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু দেখার মজার সাথে খাওয়ার মজাটাই যে অন্যরকম। যাবার সময় দু’চার ঝুড়ি আম সাথে নিয়ে যাবেন নিশ্চয়।
শুধু আমের জন্য আসা নয়। এসময় বাড়তি পাবেন অনেক কিছু। বরেন্দ্র ভ‚মির লাল উচু নিচু ভ‚মি। ভ্রমন পিপাসুদের আকর্ষণ করার মত দর্শনীয় অনেক স্থান, একেক স্থানের একেক রকম খাবার ছড়িয়ে রয়েছে রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে। এসব স্থান পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। ভ্রমনের সকল ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।
তারপর রয়েছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা, শিবগঞ্জের চম চম তিলে ভাজা খাজাসহ আরো কত কি। বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটের শিক্ষার্থীদের কাছে এখানকার বট পরোটা (গরুর ভুড়ি) ভীষণ প্রিয়। পর্যটকরা একটু স্বাদ নিয়ে দেখতে পারেন। মন্দ লাগবে না। তাছাড়া বিভিন্ন মোড়ে মিলবে দশ প্রকারের চা। ইচ্ছে করলে তার স্বাদ নেবার জন্য লাইন ধরতে হবে।
রাজশাহী শিক্ষা নগরীও বটে। এখানে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী পড়তে আসে বিভিন্ন স্থান থেকে। তাদের কল কাকলিতে মুখরিত থাকে নগরী। আ¤্র কাননে ঘেরা বিশাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখলে সত্যি অনুভব হবে সত্যি শিক্ষা নগরীইতো। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহশালা, ঐতিহাসিক বরেন্দ্র মিউজিয়াম। দেশের একমাত্র দৃষ্টি নন্দন সারদা পুলিশ একাডেমী। রাজশাহী নগরীর পরিচ্ছন্নতা দেখে ধন্যবাদ জানাতে দৃষ্টিনন্দন নগরভবনও দেখে আসতে পারেন।
রেশম নগরী হিসাবেও রাজশাহীর পরিচিতি কম নয়। বস্ত্রের রানী রেশম। যা সবার প্রিয়। লাখো গুটি পোকার জীবনের বিনিময়ে তৈরী হয় রেশম সুতা। এখানে এলে দেখা যাবে কিভাবে রেশম সুতা হয়। আর সপুরার সিল্ক পাড়ায় গেলে হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো সিল্ক বস্ত্রের প্রদশনী। কোন একটা না কিনে ফিরতেই পারবেন না। নিজের জন্যতো বটেই। স্বজনদের জন্য কিনতে মন চাইবে। তাই আসলে প্রস্তুতি নিয়েই আসতে হবে।
ঘোরাঘুরির এক ফাঁকে জেয়ারত করতে পারবেন রাজশাহীর দরগা পাড়ায় শায়িত হযরত শাহমখদুম (রহ:) এর মাযার শরীফ, বাঘায় হযরত দানিশমান্দ, শিবগঞ্জে হযরত শাহনেয়ামত উল্লাহসহ অসংখ্য অলি আউলিয়ার মাজার। মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। সব ক্লান্তি মুছে যাবে। দেখবেন ছোট সোনামসজিদ, যেখানে শায়িত রয়েছেন বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দন জাহাঙ্গির। দারাস বাড়ি মসজিদ যে কারো নজর কাড়বে। দশ টাকা ও পঞ্চাশ টাকার নোটে ছবি রয়েছে ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ ও মান্দার কুসম্বা মসজিদের। নাটোরের রাজবাড়ি উত্তরা গণভবন, পুঠিয়ার রাজবাড়ি ও মন্দির এখনো পর্যটকদের আকর্ষণ করে। নওগার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার দিব্যক স্তম্ভ আর আলতা দিঘী দেখে ফেলা যাবে এক সফরেই। এর বাইরে রয়েছে অসংখ্য পূরাকীর্তি।
ভাবছেন রাজশাহী এলে থাকবেন কোথায় ? এখানে রযেছে পর্যটন মোটেলসহ সব শ্রেণীর মানুষের উপযোগি অনেক আবাসিক হোটেল। রয়েছে রেস্টহাউজ। আ¤্রকাননের মাঝে গড়ে উঠছে রিসোর্ট। ফলে থাকার কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া রয়েছে এখানকার মানুষদের সরলতা যে কাউকে মুগ্ধ না করেই পারেনা। এখানকার মানুষ ভীষন অতিথি পরায়ন।
এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা মন্দ নয়। সড়ক রেল ও আকাশ পথে সহজেই যাতায়ত করা যায়। ঢাকার কল্যানপুর, গাবতলী থেকে এসি ননএসি বাস যাতায়াত করে বেশ কয়েকটি কোম্পানীর। সকাল বিকেল তিন জোড়া বিমান যাতায়াত করে। রয়েছে রাজশাহী-ঢাকার মধ্যে বিরতিহীন ট্রেন বনলতা, সিল্কসিটি, আন্ত:নগর, পদ্মা আন্ত:নগর, ধুমকেতু এক্সপ্রেস, দিবারাত্রি চলাচল করে। ট্রেন ভ্রমনও বেশ আরামদায়ক। এছাড়াও রাজশাহীর সাথে সরাসরি বাস যোগাযোগ রয়েছে কক্সবাজার, সিলেট, বান্দরবান, ময়মনসিংহসহ বেশকটি জেলার সাথে। উত্তরাঞ্চলের সব জেলার সাথে সড়ক নেটওয়ার্ক বেশ ভাল। অতএব আসা যাওয়ার কোন সমস্যা নেই। ভাড়াও নাগালের মধ্যে।
রাজশাহী অঞ্চলের বেশ ক’বছর ধরে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বিনোদন কেন্দ্র। একেবারে অজ পাড়াগায়ের মধ্যে দেখা মিলবে পিকনিক স্পট, শিশুপার্ক। কামারুজ্জামান উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, গ্রীনভ্যালি. শখের পল্লী. নাইসপার্ক, নাচোলের স্বপ্ন পল্লী, সাফিনাপার্ক, সরমংলা, চৈতীর বাগানসহ নানা ধরনের বিনোদন কেন্দ্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।