Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রাকৃতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় সচেতন হতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনজীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কর্মসূচীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যা সাইক্লোনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত ৬ বছরে প্রায় ১৮ হাজার ৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই সঙ্গে দেশের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ প্রাকৃতিক ঝুঁকিতে রয়েছেÑ যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এসব মানুষ বিদ্যুৎ পানি ও সেনিটেশন ও অন্য সুযোগ-সুবিধা কম পাচ্ছে। এদিকে আলোচ্য প্রতিবেদন প্রকাশকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকায় বর্তমান শিক্ষার হার হতাশাজনক।এই এলাকায় বর্তমানে স্নাতক পাস করেছে মাত্র ১ শতাংশ। এইচএসসি পাসের হার মাত্র ৯ শতাংশ। পঞ্চম শ্রেণী ৩৩, নবম শ্রেণী ১৯ শতাংশ। মন্ত্রী বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। তিনি বলেছেন, আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যেই উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও বনায়নের কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমে আসবে। পাশাপাশি পাহাড়ী, উপকূলসহ দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল শ্রোতে আনতে পারলের দেশের অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা নিয়ে এধরনের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে অভিনন্দন যোগ্য। একথা অস্বীকারের উপায় নেই, নানা কারণে উপকূলীয় এলাকার মানুষ সুবিধা বঞ্চিত। আলোচ্য প্রতিবেদনেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক আলোর ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত। প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ৫৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ও সোলার থেকে আলো পায়। অথচ দেশে ৭৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে বলে সরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছে। শিক্ষার আলো থেকেও প্রায় বঞ্চিত রয়েছে এরা। গড়ে ৩৮ শতাংশ মানুষ কোন শিক্ষাই গ্রহণ করছে না। যদিও দেশের প্রায় শতভাগ শিশু বিদ্যালয় যায় বলে সরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উল্লেখিত সময়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় যেসব খাতে ক্ষতি হয়েছে তার মধে রয়েছে, শস্যখাত, প্রাণীসম্পদ, পোল্ট্রি, মৎস্য, বসতঘর রান্নাঘর ও গোয়ালঘর ইত্যাদি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগে অক্রান্ত ৭৪ শতাংশ পরিবারকে সরকার ১৫ শতাংশ পরিবার এনজিও বা আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৪ শতাংশ পরিবার স্থানীয় ধনীব্যক্তি ৩ শতাংশ পরিবার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ২ শতাংশ অন্যান্য উৎস থেকে অর্থিক সহায়তা পেয়েছে। বলা হয়েছে, আলোচ্য সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৪ জন পরিবার সদস্য অসুস্থ ও আহত হয়েছিল। এদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৪০ শতাংশ পুরুষ ও৪৭ দশমিক ৬০ শতাংশ মহিলা অসুস্থ এবং ৫৮ দশমিক ১২ শতাংশ পুরুষ, ৪১ দশমিক ৮৮ শতাংশ মহিলা আহত হয়েছিল। এসব আহত ও অসুস্থ লোকর চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে শিশুদের পিছনে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষেরা অনেকটাই বৈরি পরিবেশ মোকাবিলা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে শিক্ষার অভাব থাকার ফলে প্রয়োজনীয় সতর্কতার গুরুত্ব অনুধাবনেও তারা সক্ষম নয়। জীবনের চেয়ে সম্পদকে গুরুত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে কার্যত তাদের অসহায়ত্বই প্রকাশিত হয়। ঐসব এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিয়ে প্রতিবছরই অনিয়ম দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এসবের স্থায়ী কোন সমাধান করা যায়নি। আগে বন্যা সাইক্লোনে যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখনও তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এর উপর ভারতের বৈরি পানিনীতির কারণে ঐসব এলাকায় ইতোমধ্যেই সুপেয় পানির সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। এরচেয়েও বিপজ্জনক বাস্তবতা হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সুরক্ষাদুর্গ সুন্দরবন এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবনায় বন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এসব থেকে একথা সহজেই অনুমান করা যায় আগামীতে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ঝুঁকি আরো বাড়বে।
যে কোন উন্নয়নে গোটাদেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে তাকে প্রকৃত উন্নয়ন মনে করার কোন কারণ নেই। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবই বলছে দেশের একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষ কার্যত বঞ্চিত। এঅবস্থা সুখকর নয়। পরিস্থির উন্নয়নে এই বিশেষ অঞ্চলের প্রতি নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোরে কারণে গোটাবিশ্ব আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থা আরো বেশি বিপজ্জনক। সে কারণে সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। কেবল আপদকালীন নয় বরং আলোচ্য এলাকার উন্নয়নে নিয়মিত আন্তরিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে আন্তরিক হবেন এবং আলোচ্য অঞ্চলকে অর্থনীতির মূলবৃত্তে নিয়ে আসতে সচেষ্ট হবেন -এটাই প্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রাকৃতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় সচেতন হতে হবে
আরও পড়ুন