Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের মিথ্যাচার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ২০১৯-কে হালাল করার জন্য কিছু অস্বাভাবিক কাজ করছে ভারত। দেশটির কিছু ব্যক্তি বাংলাদেশকে এমন সহিংস রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যেখান থেকে হিন্দুরা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে।

এ মাসেই ভারতের রাজ্যসভায় পাস হয়েছে সিএএ। এই আইনের অধীনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সদস্যদেরকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। বিলে মুসলিমদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি, বা রোহিঙ্গাদের মতো নির্যাতিত গোষ্ঠির নামও নেই। জাতিসংঘ এই বিলটিকে ‘প্রকৃতিগতভাবেই বৈষম্যমূলক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

কিন্তু এই পয়েন্টটি ভারতের বিলের পক্ষের লোকেরা স্বীকার করছেন না। তারা বিলের বৈষম্যমূলক বৈশিষ্ট্য থেকে নজর অন্যদিকে সরাতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সামনে নিয়ে আসছেন। আর সুনির্দিষ্টভাবে বললে বাংলাদেশের হিন্দু স¤প্রদায়ের কথা উল্লেখ করছেন তারা।

ইন্ডিয়া টুডের সাথে এক সাক্ষাতকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বিলের স্বপক্ষে বলেছেন যে, বাংলাদেশ একটি ধর্মতান্ত্রিক ইসলামিক রাষ্ট্র। এদিকে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিলের সমর্থনে এমনভাবে কথা বলছেন যেন এই বিলটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সমর্থনে একটা আশীর্বাদস্বরূপ।
তিনি এর আগে পার্লামেন্টে বলেছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, ১৯৪৭ সালে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল পুরো জনসংখ্যার ২২ শতাংশ, আর এখন সেটা ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তাদেরকে কি হত্যা করা হয়েছে? তাদেরকে কি জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছে? তাদেরকে কি ভারতে ঠেলে দেয়া হয়েছে?’ পরে তিনি তার বিবৃতিকে সমর্থন দিতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে হিন্দুদের উপর কোন নির্যাতন করা হয়নি। তার বক্তব্যে সম্পূর্ণভাবে ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং আদমশুমারির তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, দেশভাগের পর থেকেই বাংলাদেশ থেকে অনেক হিন্দু দেশ ছেড়ে গেছে। ১৯৫১ সালের জরিপ অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা ছিল ২৩.১ শতাংশ এবং ২০১১ সালের হিসেবে এটা ছিল ৯.৬ শতাংশ। কিন্তু শুধু এটুকু বললে সত্য অস্বীকার করা হবে। কারণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অব্যাহত নির্যাতনের কারণে তারা দেশ ছেড়ে যায়নি। মানুষের দেশ ছাড়ার ঘটনাগুলো অনেক বেশি সূ² এবং এটা সত্য যে সেখানে কিছু নির্যাতনের ঘটনাও রয়েছে।

শুরুতেই বলতে হবে যে, ১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের অংশ ছিল, তখনই এর বড় একটা অংশের স্থানান্তর ঘটেছে। ১৯৭৪ সালে যে শুমারি করা হয়, সেখানেই দেখা গেছে যে, সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমে এক তৃতীয়াংশ কমে ১৪.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এই হার হ্রাসের একটা বড় কারণ হলো নতুন গঠিত জাতি রাষ্ট্র, যেখানে জনসংখ্যার বিনিময় হয়েছে এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী পরিকল্পিতভাবে জাতিগত স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিধনও চালিয়েছিল যাদের মধ্যে অমুসলিম ও মুসলিম উভয়ই ছিল।

ইতোমধ্যে অমুসলিমদের ভারত গমন বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ ছিল পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বিহার ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে মুসলিমদের আগমন ঘটে। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারির হিসেবে দেখা যায় যে, ১৯৫১ সালে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ এবং ১৯৬১ সালে সেটা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬ কোটি ৫০ লাখ হয়ে যায়। এ কারণে আনুপাতিক হারে তারতম্য ঘটে।
ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে মানুষের স্থানান্তরের ইতিহাস অত্যন্ত জটিল ও এই প্রক্রিয়াটি ঘটেছে প্রায় আধা শতাব্দি ধরে এবং বহু মিলিয়ন মানুষ এ সময়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। ঘরবাড়ি, কাগজপত্রাদি এবং জীবন হারিয়েছে। জনসংখ্যার হাতবদলের সাথে সাথে মানচিত্র বদলেছে। কিছু ধর্মীয় স¤প্রদায়ের লোকদেরকে বিহেসিবী নাগরিকত্ব দিয়ে দিলেই শুধু বহু পুরাতন এই সমস্যার সমাধান হবে না। আইনি এই পদক্ষেপটি শুধু বৈষম্যমূলকই নয়, এটা খুবই সাদামাটা এবং ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াকে এখানে অবজ্ঞা করা হয়েছে।

আর এটাকে বৈধ করার জন্যেই অযৌক্তিকভাবে এবং কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে হিন্দুদের বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

Show all comments
  • Md Nurul Amin ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    যে দেশের ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট আছে। সে দেশের জন্য আর শত্রুর প্রয়োজন হয়না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohosin Hussain ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    আমাদের মন্ত্রীরা সাপোর্ট দিচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Siddiqe Rahman ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    ভারতে সংখ্যা লগু মুসলিম নির্যাতনের জবাব দে
    Total Reply(0) Reply
  • Rayhan Jibon ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    ওরা মিথ্যাবাদী জাতি,,ওরা এরকমই।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Hassan Khan ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    অতিরিক্ত চামচামির সুফল
    Total Reply(0) Reply
  • কল্যাণমূলক চেতনা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    মিথ্যাবাদী রাষ্ট্র একটা!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Faridul.Alan ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:৩৫ এএম says : 0
    ভারত সব। সময় বাংলাদেশের বদনাম করতেই তাকবে কারন বাংলাদেশকে নাকি ওরাই সাধিন করে দিছে .....রা আমাদেরকে লুটিয়েছে একনো আমাদের লুটিয়ে লূটিয়ে কাছছে ................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ