Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামরিক সম্পর্ক জোরদার করছে চীন ও পাকিস্তান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:৪২ পিএম

আগামী মাসে আরব সাগরে যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে চীন ও পাকিস্তান। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রেন গুকিয়াং বলেন, এই মহড়া দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক গভীর করতে সহায়ক হবে। এটা চীন-পাকিস্তান সর্ব-মওসুমের কৌশলগত অংশীদারিত্ব উন্নয়ন এবং অভিন্ন ভবিষ্যতের আলোকে একটি মেরিটাইমস কমিউনিটি নির্মাণে সহায়ক হবে।

মহড়ায় চীনের ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, একটি সাপ্লিমেন্ট শিপ ও একটি সাবমেরিন রেসকিউ শিপ অংশ নেবে বলে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিবৃতি থেকে ধারণা পাওয়া যায়। বিশেষ করে চীনের জন্য এই যৌথ মহড়া তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর মধ্য দিয়ে তারা পাকিস্তান উপকূলের অদূরে আরব সাগরে অপারেশন পরিচালনায় অভিজ্ঞ হচ্ছে। এই সাগর ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি, যে এলাকাটি ক্রমেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ চীন তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করছে এবং তারা সেনাবাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তোলা এবং একটি ব্লু-ওয়াটার নেভি গঠন করতে চাচ্ছে।

পাকিস্তান ও চীনের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শাখার মধ্যে আরো অনেক দ্বিপাক্ষিক ও বহুপক্ষীয় মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সন্ত্রাসের হুমকি দমনের জন্য চীন-পাকিস্তানের মধ্যে ‘ওয়ারিয়র’ সিরিজের মহড়া অনুষ্ঠিত হয় নিয়মিত। এর সপ্তম সংস্করণ অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি মাসের গোড়ার দিকে পাকিস্তানে। এতে দুই পক্ষের বিশেষ বাহিনী অংশ নেয় এবং স্থল ও আকাশ পরিবহনের মাধ্যমে সেনা সমাবেশের মহড়া চালানো হয়। চীনের কর্মকর্তারা জানান যে মহড়াটিতে সহযোগিতা ও যোগাযোগ গভীর করার উপর মনযোগ দেয়া হয়।

আরেকটি নতুন মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর যৌথ নিরাপত্তায় এই মহড়া চালানো হবে। চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোরের (সিপিইসি) গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও বিনিয়োগগুলো সুরক্ষার জন্য এই পরিকল্পনা নেয়া হতে পারে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে করাচিতে চীনা কনস্যুলেটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। চলতি বছরের মে মাসে বালুচিস্তানের গোয়াদার বন্দরের কাছে একটি বিলাসবহুল হোটেলে বন্দুকধারীরা হামলা করে। এই বন্দর চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ এবং সিপিইসি’র অন্যতম হাব বলে একে মনে করা হয়।

তাছাড়া দুই বিমানবাহিনী ব্যাপকভাবে যৌথ মহড়া চালায়। এর মধ্যে রয়েছে শাহিন। গত সেপ্টেম্বরে দুই সপ্তাহব্যাপী এই মহড়াটি ছিলো সিরিজের অস্টম আয়োজন। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় দুই দেশের সেরা এয়ারক্রাফটগুলো অংশ নেয়। পাতানো যুদ্ধে অংশ নেয় চীন ও পাকিস্তানের বিভিন্ন ধরনের জঙ্গিবিমান, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র ও রাডার।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বহুজাতিক আমান-১৯ মহড়া আয়োজন করে পাকিস্তান। এতে ৪৬টি দেশ অংশ নেয়। ভারত মহাসাগরে আঞ্চলিক ও এ অঞ্চলের বাইরের নৌবাহিনীগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের উদ্দেশ্যে মহড়াটির আয়োজন করা হয়। এই মহড়ায় নিয়মিত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

বেইজিং ও ইসলামাবাদের সম্পর্কটিকে সবসময় খুবই শক্তিশালী ও বিশেষ ধরনের হিসেবে অভিহিত করা হলেও চীন যেভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ মহড়া সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে তা অনন্য। গত দেড় দশক ধরে বহু দেশের সঙ্গে সামরিক বিনিময় ও মহড়া বাড়িয়ে চলেছে চীন। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, ভারত ও রাশিয়া রয়েছে। এছাড়া সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের আওতায় বহুজাতিক মহড়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজিত বহুজাতিক মিরপ্যাক মহড়ায়ও অংশ নিচ্ছে।

এসব যৌথ মহড়ার মধ্য দিয়ে সামর্থ্যের কূটনৈতিক সামর্থ্যেরও প্রকাশ ঘটে। এর মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ, আন্ত:সমারিক সমন্বয়, প্রস্তুতি ও তথ্য সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হয়। পাকিস্তানে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিবেশ ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে তখন তাদের ‘সর্বমওসুমের বন্ধুত্বের’ পরীক্ষাটি হয়ে যেতে পারে। তবে আপাতত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ২০২০ ও এর পরেও নিয়মিত সামরিক অংশদারিত্ব অব্যাহত থাকবে। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন-পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ