Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকমুক্ত ওয়ার্ডের প্রতিশ্রুতি

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন : ২৯, ৩২, ৩৩ নং ওয়ার্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। নির্বাচন কমিশন থেকে নেতাকর্শীদের শোডাউন দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে প্রার্থীরা জনগণের কাছে যাবার আগে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই দৌড়ঝাপ চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজ নিজ সমর্থক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং সেই নেতাদের নিয়ে স্থানীয় এমপি এবং প্রভাবশালী নেতাদের দারস্থ হচ্ছেন মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য। দেখানোর চেষ্টা করছেন তার সঙ্গে দলের বড় একটি তার পক্ষে রয়েছেন এবং কাউন্সিলর হিসেবে তাকে সবাই চান। বিএনপির প্রার্থীরা কিছুটা ভয়ে থাকলেও ভিতরে ভিতরে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯, ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত করতে চান সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা বৃক্ষরোপণ করে সবুজায়নও করার অঙ্গীকার করেছেন। নাগরিকের সর্বোচ্চ অধিকার নিশ্চিত করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুন্দর করা, ভূমিদস্যু ও ফুটপাত দখলমুক্ত, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও লাইব্রেরি নির্মাণ করতে চান সম্ভাব্যরা।

শিয়া মসজিদ, তাজমহল রোড, শ্যামলী ক্লাব, শাহজাহান রোড, বাবর রোড জুড়ে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে ৪০ হাজার ভোটার থাকলেও প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। ৪টি খেলার মাঠ থাকলেও সেগুলো খেলার অনুপযোগী।

ডিএনসিসির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন থানা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রতন, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. সামিউল আলিম চৌধুরী, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন মাহমুদ বাবু।

এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পানিবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। ফুটপাতে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুদের দখলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। মাদকের কারণে সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা। খেলার মাঠে মেলা বসায় সবাই ক্ষুব্ধ। ফুটপাতের হাঁটার রাস্তার দু’পাশজুড়েই সাজানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান। যানজটের সমস্যাও ভোগান্তির অন্যতম কারণ।

বর্তমান কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রতন বলেন, আমি পরপর দু’বার বিজয়ী হয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। এলাকার বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান করেছি। কিন্তু মাদক এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। মাদক সেবনকারীদের অনেককে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি। আমি আমার ওয়ার্ডের চারটি খেলার মাঠকে পুনর্র্নিমাণ করেছি। শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ করেছি, এছাড়াও সার্বিক উন্নয়নে সর্বদা নিয়োজিত ছিলাম।

আরেক প্রার্থী মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মো. সামিউল আলিম চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার আমি একজন আদর্শ সৈনিক। আমি অতীতেও তা প্রমাণ দিয়েছি। আওয়ামী লীগের জন্য আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমি গতবার নির্বাচনের প্রার্থী ছিলাম, কিন্তু জনগণের সেবা করার সুযোগ পাইনি। এবার আশাবাদী, সুযোগ পেলে নতুন প্রজন্মের জন্য মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজ ভূমিদস্যুতা ও দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর পরিচ্ছন্ন ডিজিটাল ওয়ার্ডে রূপান্তর করব।

মাহাম্মদপুর থানা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন মাহমুদ বাবু ইনকিলাবকে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে আমার ওয়ার্ডের সন্ত্রাস, দখলদারি চাঁদাবাজি, মাদক নিয়ন্ত্রণ করব। ৪টি খেলার মাঠ থাকলেও খেলার কোনো পরিবেশ নেই। খেলার বদলে মাঠে মেলা বসে। আমি সেগুলোকে খেলার উপযুক্ত করব। কাঁচাবাজারগুলোতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করব।

৩২ নম্বর ওয়ার্ড:
ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত করে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঠে নেমেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখার অঙ্গীকার করছেন তারা। আওয়ামী লীগের আলোচিত নেতা বর্তমান ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা বেশ সক্রিয়। যা অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতে কম দেখা গেছে।

শ্যামলী রিং রোড, শ্যামলী সিনেমা হল, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর ও লালমাটিয়া এলাকাজুড়ে ৩২নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটার। ওয়ার্ডে মাদকের সমস্যাটাই মূল। ওয়ার্ডে অবস্থিত জেনেভা ক্যাম্পে মাদকের আখড়া। এছাড়াও চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত রয়েছে এখানে। লালমাটিয়া একটি আবাসিক এলাকা হলেও এলাকাজুড়ে রয়েছে আবাসিক হোটেল ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বেশ কিছু খেলার মাঠ থাকলেও সেগুলো খেলার অনুপযোগী। খেলার বদলে মাঠে বসে মেলা।

ডিএনসিসি ৩২নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন- ৩২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রন, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন লাবু, মোহাম্মদপুর থানা যুবদলের সভাপতি জাহিদ হোসেন, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাসির আহমেদ।

সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রন বলেন, আগামী নির্বাচনে আমি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব। আমি প্রশানের সহযোগিতায় জেনেভা ক্যাম্পের মাদক অনেকটা কমিয়ে ফেলেছি। নির্বাচিত হলে বাকিটা শেষ করে দেব। ডেঙ্গু মশা নিধনের জন্য সারাবছর মশক নিধনের কাজ করব। প্রতিটি রোডভিত্তিক এলাকার সার্বিক সমস্যা ও পরিষ্কার রাখার জন্য কমিউনিটিভিত্তিক কমিটি সেন্টার নির্মাণ করব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ময়লা নির্ধারিত জায়গায় যাতে ফেলা হয় সেই ব্যবস্থা নেব। একটি আদর্শ ও মডেল ওয়ার্ড হিসেবে যেভাবে গড়ে তোলা যায় আমি সেই চেষ্টা করব।
বিএনপির প্রার্থী মোঃ জাহিদ হোসেন মোহাম্মদপুর থানা যুবদল সভাপতি। এর আগে ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক থানার। জিয়া মঞ্চের সভাপতি মুহাম্মদপুর থানা। ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, আমার জন্ম স্থান লালমাটিয়া। ১২ বছর ধরে দেখছি আড়ংয়ের পেছনে মাঠে ইয়াবা ব্যবসা ও সেবন হয়। শ্যামলী, লালমাটিয়া ডি ব্লক মাঠেও একই অবস্থার। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে এসব হয়েছে। এখনো চলছে। উনি জেলে আছে কিন্তু ব্যবসা চলছে। ছিনতাই ডাকাতি এসবও হয়। তাদের লোকজন করে। নির্বাচন করতে চাই, জন্মস্থানে এসব হতে দিতে চাই না।

কাউন্সিলর হতে পারলে মাদকমুক্ত করবো। জেনেভা ক্যাম্পের মাদক সমস্যা দূর করবো। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক নিয়ে প্রায় মারামারি হয় এবং হত্যাকাণ্ডও হয়েছে। কাউন্সিলরের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১২ বছর ব্যবসা হয় প্রকাশ্যে। এটাকেও মাদকমুক্ত করতে চাই।
রাস্তাগুলো ছোট জ্যাম পড়ে। স্কুলের সামনে হকার বসে। মানুষ হাটাচলা করতে পারে না। স্কুলের সামনে। রাস্তা বড় করতে চাই। আবাসিক এলাকার ভেতরে ময়লা যাতে না ফেলা হয় সে ব্যবস্থা করবো।

মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন লাবু ইনকিলাবকে বলেন, এলাকাবাসীর ভোগান্তি দূর করতে নিয়মিত কাজের পাশিপাশি মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত মডেল ওয়ার্ড গড়ে তুলব। জেনেভা ক্যাম্পে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো এক এক করে সমাধানের চেষ্টা করব। এলাকার রাস্তাঘাট ও ফুটপাত দখলমুক্ত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব। নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বিক উন্নয়ন বজায় রাখব। ময়লা সংগ্রহের কোনো বিল নেয়া হবে না।
৩৩ নং ওয়ার্ড:

এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জমান রাজীব ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন। ফলে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দলের মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন প্রায় অর্ধ ডজন নেতা। দলের মনোনয়ন পেলে নিশ্চিত কাউন্সিলর এমনটাই ভাবছেন সবাই। মোহাম্মদপুর হাউজিং, কাটাসুর, জাপান গার্ডেন সিটি, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান নিয়ে এই ওয়ার্ড।

৩৩ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৩৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সেন্টু, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সায়েম শাহিন, থানা আওয়ামী লীগ নেতা আসিফ আহমেদ। বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদপুর থানা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মান্নান হোসেন শাহিন।

৩৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেহর সভাপতি নূর মোহাম্মদ সেন্টু ইনকিলাবকে বলেন, মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন। নির্বাচিত হলে, রাস্তাঘাট সংস্কার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, গ্যাসের সমস্যা নিরসন, স্কুল মাদরাসার উন্নয়ন, এলাকার সন্ত্রাস চাঁদাবাজি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

এছাড়া ৩১, ৩৩, ৩৪ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা আসনে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদপুর থানা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাড. রুনা লায়লা। তিনি বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে এই এরকার নারী উন্নয়নে কাজ করবেন। নারী যাতে সস্তিতে রাস্তায় চলাফেলা করতে পারে তার নিরাপ্তÍার ব্যবস্থা করবেন। নারী নির্যাতন বন্ধে সচ্চার হবেন। পথ শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।



 

Show all comments
  • ShamimChowdhury ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 0
    29 Ward Samiul Alim Chowdhury ka daktay chai sha ak jon valo manus sob shomoi manus dar pashay taklay tar jono aj amra khalar mat a khaltay partache ar agay mat of chelo 29 no ward a amra Samiul Alim Chowdhury ka daktay chai
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Musarrof Hossain ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়- সনতাস,দুর্নিতী,মাদক মুক্ত করবে আমার দেশের...
    Total Reply(0) Reply
  • Gulam Subahani ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    সুন্দর উদ্যোগ। শুভ কামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • Anisur Rahman ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    ভাল কথাতো অনেকেই বলতে পারে কিন্তু কে শোনে কার কথা।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
    ভোটের আগে এরকম কত প্রতিশ্রুতি শোনা যাবে????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি কর্পোরেশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ