পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আদমশুমারি ও জনসংখ্যা জরিপ (ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার) হবে আগামী বছর। তবে, সমালোচকেরা বলছেন, তালিকাটি হবে মুসলমান বিরোধী তালিকা। জরিপ চালানোর সময় কোন নাগরিক সম্পর্কে যদি কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়, তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ভারতের নাগরিক। ভারতে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অব্যাহত বিক্ষোভের মধ্যেই, নতুন করে একটি আদমশুমারি ও জনসংখ্যা জরিপের জন্য তহবিল অনুমোদন করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, এই জরিপ ভারতের সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের ওপর চালানো হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই আদমশুমারি ও জনসংখ্যা জরিপ চালানো । এজন্য সরকার প্রায় চার হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। এছাড়া আরো প্রায় নয় হাজার কোটি রুপি ব্যয় হবে আদমশুমারি চালানোর জন্য। দেশটির একজন মন্ত্রী প্রকাশ জাভেদাকার বলেছেন, নতুন ডেটাবেইস সরকারকে নতুন নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি হবে একটি প‚র্ণাঙ্গ জরিপ, অর্থাৎ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল রাজ্যের সব সাধারণ বাসিন্দার ওপর একযোগে এই জরিপ চালানো হবে।
সরকার বলছে, কোন নাগরিক যদি কোন এলাকায় অন্তত ছয় মাস বাস করে অথবা কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ছয় মাস বা তার বেশি সময় বসবাসের পরিকল্পনা করে, তাহলে তাকে সাধারণ বাসিন্দা হিসেবে গণ্য করা হবে। এর মানে হচ্ছে এখন ভারতে বসবাসরত বিদেশীরাও এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের অন্তর্ভুক্ত হবেন। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, জরিপ চালানোর সময় কোন নাগরিক সম্পর্কে যদি কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়, তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ভারতের নাগরিক। এর ফলে যে কোন নাগরিকের অ-ভারতীয় হিসেবে হেনস্থা হবার আশঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করেন সমালোচকেরা।
সিএএ-এনআরসি-এনপিআর নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য, বিভ্রান্ত আম জনতা
তিনটি বিষয়। কিন্তু বিভ্রান্তি-বিতর্ক-ধোঁয়াশা বহু। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্ট্রার (এনপিআর)। কেউ বলছেন, তিনটি আলাদা বিষয়। কারও মত, একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সেই সব দূর করা যাঁদের দায়িত্ব, সেই কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি নেতৃত্ব যেন আরও অস্পষ্টতা বাড়িয়ে চলেছে। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ইচ্ছে করেই এই ধোঁয়াশা-বিভ্রান্তি জিইয়ে রাখা হচ্ছে।
রাজনীতির এই দড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে সাধারণ মানুষ চ‚ড়ান্ত বিভ্রান্ত। কোনটার সঙ্গে কার যোগ, কোনটা দরকারি, কোনটা নয়, সে সব বাছবিচার করতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। কখনও ছুটছেন এনআরসির জন্য নথি জোগাড় করতে, কখনও বা সিএএ অনুযায়ী নাগরিক হতে কী কী লাগবে, এ সব হাজারো প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।
বিভ্রান্তি যে কতটা, তার নজির ভুরিভুরি। অমিত শাহ এক সময় বললেন, আধার, ভোটার, পাসপোর্ট, এসব কোনওটাই নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়। আবার তিনিই অন্য সময় বলছেন, রেশন কার্ড না থাকলেও সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেতে কোনও সমস্যা হবে না। সংসদে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সারা দেশে এনআরসি হবে। আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন, সরকারিভাবে এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। পরে আবার অমিত শাহও ঘুরে গিয়ে বলছেন, মোদি ঠিকই বলেছেন। এখানেই শেষ নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি এবং সরকারি বক্তব্যেও বিভ্রান্তির ছড়াছড়ি।
অমিত শাহ স¤প্রতি বলেছেন, এনপিআর-এর সঙ্গে এনআরসির কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হরিভাই পি চৌধুরী বলেছিলেন, এনপিআর-এর তথ্য এনআরসির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আবার ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক রিপোর্টের বক্তব্যও আলাদা। ১৭-১৮ সালে এনপিআর আপডেট করার কথা বলা হলেও এনআরসির কথা বলা হয়নি। কিন্তু পরের বছরের রিপোর্টে বলা হল, এনআরসি তৈরির প্রথম ধাপ হল এনপিআর।
এনআরসির সঙ্গেই সম্পর্কিত ডিটেনশন ক্যাম্প। নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়লে তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। এ নিয়েও বিভ্রান্তির অন্ত নেই। আসামে ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত্যুর খবর এসেছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদি ২২ ডিসেম্বর রামলীলা ময়দানের সভায় বললেন, ‘দেশের কোথাও কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই।’ ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে লোকসভা ভোটের প্রচারে আসামে গিয়ে এই মোদিই আবার বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে রাজ্যের সব ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবেন। যদি ডিটেনশন ক্যাম্প না-ই থাকে, তাহলে ভাঙার কথা বললেন কেন? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
আবার ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোনও বিদেশি নাগরিকের কাছে পর্যাপ্ত নথি না থাকলে তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে। কারণ, তাদের জেলে রাখা যায় না।’ কর্নাটকেও স¤প্রতি এই রকম ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির খবর এসেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিটেনশন ক্যাম্প নয়, বিদেশি নাগরিকরা অপরাধ করলে তাদের রাখার জন্য ওই ক্যাম্প তৈরি হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হওয়ার পর আইনে পরিণত হতেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে অশান্তি। সেই সিএএ-এনআরসি নিয়ে নাগরিকদের একাংশের মধ্যে আতঙ্ক-বিভ্রান্তি ছিলই, মঙ্গলবার তার সঙ্গে যোগ হয় এনপিআর। এনপিআর ও আদমশুমারির জন্য বাজেট বরাদ্দে সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সব মিলিয়ে আম জনতার মধ্যে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, ‘একেই তিন-তিনটে বিষয়। তার উপর একেক জনের একেক রকম বক্তব্য, অথবা একই নেতার ভিন্ন সময়ে ভিন্ন বক্তব্যে সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।’
আসামে ১ লাখ মানুষের বিক্ষোভ
গত মঙ্গলবার প্রায় এক লাখ মানুষ আসামের রাজপথে নেমে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা সর্বানন্দ সোনোয়ালের নিজ জেলা ডিব্রæগড়ে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে অল আসাম স্টুডেন্ট’স ইউনিয়ন। আয়োজকদের দাবি বিতর্কিত ওই আইনের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
ভারতের স¤প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ওই বিক্ষোভ। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আসাম। ওই আইনে প্রতিবেশি তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিতর্কিত ওই আইনটি চলতি ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর রাজ্যটিতে জোরালো হয় বিক্ষোভ। এসব বিক্ষোভে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত পাঁচ জন নিহত হয়েছে। বিক্ষোভে সহিংসতা এড়াতে ডিব্রæগড়ে মিছিলের উদ্যোগ নেয় অল আসাম স্টুডেন্ট’স ইউনিয়ন। মঙ্গলবারের মিছিল শেষে ইউনিয়নটির সাধারণ সম্পাদক লুরিনজ্যোতি গগৈ বলেন, সব সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জানিয়ে দিয়েছে আমরা হিন্দু-মুসলমানের নামে আর বিদেশি শরণার্থীদের ভার নেবো না। ডিব্রæগড় ছাড়াও মঙ্গলবার বড় ধরনের মিছিল হয়েছে আসামের তেজপুর, দেরাগাও ও গোলাহাটে।
অভিযুক্ত আলিগড়ের ছাত্র নেতাসহ ১৩০০
পুলিশের রিভলবার ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নেতা-সহ ১৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত ১৫ ডিসেম্বর ছাত্র নেতাদের নেতৃত্বে মোমবাতি মিছিল করা হচ্ছিল। পুলিশ সেই মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে। সেইসময় এক ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে রিভলবার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষে নাইন এমএমের পাঁচটি কার্তুজ লুঠ করে আন্দোলনকারীরা। তারপরই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংসদে ওঠার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরই সেই বিল আইনে পরিণত হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতিবাদের ঝাঁজও। পড়ুয়া থেকে বর্ষীয়ান নাগরিক, খেটে খাওয়া মজদুর থেকে রূপালি পর্দার তারকান্ডএকসঙ্গে সকলে পথে নেমেছেন। বির্তকিত আইন প্রত্যাহারে দাবিতে গলা মিলিয়েছেন সকলেই। তবে সেই প্রতিবাদী স্বর রোধ করতে পুলিশ-প্রশাসনও আগ্রাসী হয়েছে বলে অভিযোগ। আন্দোলনে নেমে গোটা দেশে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২৬ জন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আক্রান্ত হয়েছে শিক্ষকরাও। তাও প্রতিবাদ চলছে। বিক্ষুব্ধ জনতার অভিযোগ, ধর্মের উপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভেদাভেদের চেষ্টা চলছে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র বদলের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
এই পরিস্থিতিতে ১৫ ডিসেম্বর আগ্রায় মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে সিএএ বিরোধী স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। মিছিল আটকাতেই পুলিশের সঙ্গে বচসা বেঁধে যায় তাদের। কথা কাটাকাটি চরমে ওঠে। এমনকি পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে পাথরও ছেঁাঁড়ে তারা। দায়ের করা এফআইআর-এ সাব ইন্সপেক্টর নিজামুদ্দিন জানান, ‘ছাত্রদের হস্টেলে ফিরে যেতে বলেছিলাম। তখনই ওরা আমাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। পুলিশ আধিকারিকের হাত থেকে রিভলবার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও সেই কাজে তারা সফল হয়নি। পরে কার্তুজ নিয়ে চম্পট দেয় তারা’। এরপরই একাধিক ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। এদের মধ্যে ৫২ জনকে পুলিশ ইতিমধ্যে শনাক্তও করেছে। সূত্র : এনডিটিভি, বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।