পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুসলিমদের মতো টুপি আর লুঙ্গি পরে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগে এক বিজেপি কর্মী ও তার পাঁচ সঙ্গীকে আটক করেছিলো মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। গত ১৮ ডিসেম্বর ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার সময় তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ভারতজুড়ে অশান্তির ঘটনায় কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘পোশাক দেখেই বোঝা যায়, কারা হিংসা ছড়াচ্ছে।’ কিন্তু এই গ্রেফতারের ঘটনায় ধরা খেল বিজেপি। এর আগে দিল্লিতে জামিয়া মিল্লিয়ার শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপাতে ১৫ ডিসেম্বরে পুলিশ নিজেই কিছু বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। মুর্শিদাবাদের ঘটনার পরের দিন (১৯ ডিসেম্বর) কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে বিক্ষোভরত আন্দোলনকারীদের ওপর দোষ চাপাতে হাসপাতালে তাÐব চালায় পুলিশ বাহিনী। হাসপাতালে হামলা চালানোর একটি ভিডিও এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে যা দেখে বোঝা যায় ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন-এর মাস্টার মাইন্ড কারা।
প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপাতে এই ধরনের হামলা/আক্রমণের নাটক তৈরি করাকে সামরিক/গোয়েন্দা পরিভাষায় বলা হয় ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন। আর এভাবেই ফলস ফ্ল্যাগ হামলা চালিয়ে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ জুড়ে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে সেই দাঙ্গার আগুনে এনআরসি-নাগরিকত্ব আইনের আলুপোড়া খেতে চাচ্ছে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা। সুতরাং সাবধান ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ!
যদিও এই ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের ইতিহাস অনেক পুরনো। প্রাচীন রোমের সম্রাট নিরোর বিরুদ্ধেও কড়া অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি নিজেই রোমে আগুন লাগিয়ে তৎকালীন রোমের খ্রিস্টানদের ওপর দোষ চাপিয়েছিলেন। তবে আধুনিক বিশ্বে সফলভাবে ফলস ফ্ল্যাগ টেকনিক ব্যবহার শুরু করেছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনী। ১৯৩৩ সালে হিটলারের নাৎসি সরকার নিজেরাই জার্মান সংসদ ভবনে আগুন লাগিয়ে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টিকে দোষারোপ করে এবং এই আগুন-সন্ত্রাসের দায়ে পরবর্তীতে জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির ওপর ভয়াবহ দমন-নিপীড়ন চালায় হিটলারের নাৎসি বাহিনী। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড দখলের বাহানা তৈরি করতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী জার্মানির রেডিও স্টেশন-এ নিজেরাই হামলা করে পোল্যান্ডের ওপর দোষ চাপিয়েছিল। এই কুখ্যাত ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনটির মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পতনের পর সিআইএ, মোসাদ ও কেজিবি এই ধরনের ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন বহুবার ঘটিয়েছে। বিশেষত মোসাদ এই ফলস ফ্ল্যাগ কৌশল প্রয়োগে সিদ্ধহস্ত। ১৯৫৪ সালে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড ও কমিউনিস্ট নেতাদেরকে ফাঁসাতে মিসরের বিভিন্ন মার্কিন ও ব্রিটিশ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন তৎকালীন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিনহাস লেভোন। (উইকিপিডিয়া; লেভোন এফেয়ার)
২০১৬ সালে পাকিস্তানে গ্রেফতারকৃত ‘র’-এজেন্ট কুলভ‚ষণ যাদবকে ২০১৫ সালে করাচিতে ইসমাইলি শিয়া বাসযাত্রীদের ওপর হামলা করে ৪৬ জনকে হত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
বিজেপি ও আরএসএসের হিন্দুত্বের মূলে আছে নাৎসিবাদ ও ইহুদিবাদ :
বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্ববাদের জনক বিনায়ক দামোদর সাভারকর ছিলেন একই সঙ্গে হিটলারের উগ্র নাৎসিবাদ ও ইসরায়েলের ইহুদিবাদ উভয়ের প্রকাশ্য সমর্থক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিবাদের পতনের পরও সাভারকর তার ‘হিন্দু রাষ্ট্র দর্শন’ বইতে ১৯৪৯ সালে লিখেছিলেন, ‘নাৎসিবাদ অনস্বীকার্যভাবে জার্মানির ত্রাণকর্তা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল’ (ঘধুরংস ঢ়ৎড়াবফ ঁহফবহরধনষু ঃযব ংধারড়ৎ ড়ভ এবৎসধহু)।
সেই একই সাভারকর ১৯৪৮ সালে আরবভ‚মিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোরতর সমর্থক ছিলেন। তবে জওহরলাল নেহরুর ভারত তখন ইসরায়েল প্রতিষ্ঠাকে অফিসিয়ালি সমর্থন দেয়নি।
তাই নাৎসিবাদী, ইহুদিবাদের সমর্থক, খুনি-সন্ত্রাসবাদী সাভারকরের উত্তরসূরী মোদি-অমিত শাহরা দিল্লির মসনদে যতদিন থাকবে, ততদিন ফলস ফ্ল্যাগ হামলা হতেই থাকবে এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীকেও বলির পাঁঠা বানানো হবে।
সাবধান হে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষেরা, বড় ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদীরা এখন ভারতের ক্ষমতায়। মুসলিমদের ওপর দোষ চাপাতে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দু-খ্রিস্টান-শিয়া-কাদিয়ানী-শিখ যে কারো ওপর হামলা চালাতে পারে গেরুয়া উগ্রবাদীরা। ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র উপমহাদেশের মুসলমানদের সাবধান হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।