পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শীতের প্রকোপে শিশুদের ডায়রিয়া রোগ বাড়ছে। শীতে সক্রিয় হওয়া রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ কারণে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে আইসিডিডিআরবিতে (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ) ভর্তি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ২৫ জন শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে। আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার আইসিডিডিআরবিতে সরেজমিন দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। অনেকেই এআরআই (একিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা) ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি নিয়ে হাসপাতালে ভিড় করছে। যাদের মধ্যে শিশু-নারী-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সব বয়সের মানুষই রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এআরইউতে ৯২৯ জন ও ডায়রিয়ায় ১ হাজার ৯৫৮ জনসহ মোট ২ হাজার ৮৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা আসমা আক্তার তার সাত মাসের শিশু সন্তানকে আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি করিয়েছেন। গত তিন দিন ধরে তার সন্তানের ডায়রিয়া। এরপর তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। আসমা আক্তার বলেন, হটাৎ করে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় আমার সন্তানের অতিমাত্রায় ডায়রিয়া দেখা দেয়। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। গত তিন দিনের চিকিৎসায় বর্তমানে আগের চেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে। তার সন্তানকে আরও তিন-চার দিন ভর্তি রাখতে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
পাশের বেডে রীনা বেগম তার ৫ মাসের সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। দুই-তিন দিন ধরে তার সন্তানের পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। গতকাল থেকে তা বারবার হতে থাকে। এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় গতকাল মাঝরাতে আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি করান। বর্তমানে তার শরীরে স্যালাইন দিয়ে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
গত চারদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪ বছরের শিশু তাহসীন। তার মা নিপা জানান, ২১ ডিসেম্বর থেকেই পানির মতো পাতলা পায়খানা হতে থাকে। অবস্থার আরও অবনতি হলে ২২ ডিসেম্বর দুপুর ৩টায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাহসীনকে। টানা তিনটি স্যালাইন দিতে হয় তাকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবিতে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫৫০ থেকে ৬০০ জন ডায়ারিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই শিশু। শৈতপ্রবাহের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবি’র চিকিৎসক প্রফেসর ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের ডায়রিয়া বাড়ছে। শীতের কারণে শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া রোগ দেখা দিচ্ছে। এ কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ৫৫ শতাংশই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হচ্ছে। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে ২ বছরের কম বয়সীরা আরও বেশি ঝুঁকিতে। তাই শিশু কি খাচ্ছে, মুখে আঙ্গুল দিচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখতে আর বাইরে থেকে কেনা খাবার না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
আইসিডিডিআরবি’র আরেক চিকিৎসক প্রদীপ বলছিলেন, রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ৬ দিনে এর সংক্রামণ শরীরে বিচরণ করে। এ কারণে ৫-৬ দিন শিশুদের চিকিৎসা দিতে হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ৫৫০-৬০০ জন রোগী ভর্তি হলেও তা স্বাভাবিক, শীত কমে গেলে রোগীর সংখ্যা কমে যাবে বলে মনে করি। তবে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন ৭৫০ থেকে ৮০০ হলে তা মহামারি আকার ধারণ করবে।
এই চিকিৎসক বলেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মুখের মধ্য দিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে যায়। বড়দের ক্ষেত্রে রোটা খুব একটা দুর্বল করতে পারে না। তবে শিশুরা যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মারাও যেতে পারে। এ কারণে ডায়রিয়া দেখা দিলে শিশুদের বেশি বেশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
এটি বেড়ে গেলে দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সবশেষ খবর পর্যন্ত এ বছর কোনও হাসপাতাল থেকেই ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেন এই চিকিৎসক। অপরদিকে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে গত ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৪ দিনে (প্রায় দুই মাসে) সারাদেশের হাসপাতালে মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৫৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।