পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনীতিতে একদিকে বিপুল সম্ভাবনা অন্যদিকে মন্দা ও অনিশ্চয়তার আশঙ্কাও বিদ্যমান। এখনো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকে ইতিবাচক প্রবণতা থাকলেও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স আয়, রফতানী বাণিজ্য ও রাজস্ব আয়ে কাঙ্খিত গতি দেখা যাচ্ছে না। বিপুল পরিমান বাজেট ঘাটতি ও ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা নিয়ে চলছে সরকারি ব্যয় ও উন্নয়ন কর্মকান্ড। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখেই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী দুই দশকের মধ্যে ধাপে ধাপে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার চিত্র উপস্থাপন করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম ৩০টি বড় অর্থনীতির দেশের তালিকায় যুক্ত হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৪৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিনত হবে বলে অর্থমন্ত্রী আশাবাদ প্রকাশ করেন। দেশীয় হাইটেক কোম্পানী ওয়ালটনের র্যাম উৎপাদন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী ওয়ালটনের মত দেশীয় হাইটেট জায়ান্ট কোম্পানীর হাত ধরে অর্থনৈতিকভাবে দেশ সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ আরো প্রশস্ত করবে বলে প্রত্যাশা রাখেন। এ ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষিত যুব সমাহের মেধা ও কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন অর্থমন্ত্রী।
মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর এগিয়ে যাওয়ার ক্রমেই দুরূহ ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বিগত দশকে বিশ্বের একনম্বর অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অর্থনীতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছিল তা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেনি। তবে চীন ও ভারতের মত এশিয়ার বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর প্রবৃদ্ধির গতি যে সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল বর্তমানে তাতেও ছন্দপতন ঘটেছে। বিশেষত: ভারতের অর্থনীতিতে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ম মন্দাবস্থা দেখা দিয়েছে। ভারতের বিজেপি সরকার যখন নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যার চেয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়েই বেশি মশগুল ও ত্রস্ত হয়ে আছে, তখন ভারতের অর্থনৈতিক মন্দায় ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়েছেন। বিশ্বের এগিয়ে থাকা অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম শীর্ষ দেশ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পরও ভারতের এই হঠাৎ অবনমন ও মন্দায় আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের(আইএমএফ) পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইএমএফ-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রনিল সালগাডো মন্দা কাটিয়ে উঠতে মোদি সরকারকে দিক নির্দেশনাসহ নীতিগত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কর্মসংস্থানের গতি শ্লথ হয়ে পড়া, কৃষিপণ্যের মূল্য না পেয়ে কৃষকদের আত্মহত্যার হার বৃদ্ধির মত সামাজিক সমস্যা বেড়ে চলেছে। শতকোটি মানুষের বড় অর্থনৈতিক শক্তির নিকটতম প্রতিবেশী ও অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে ভারতের অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের জন্যও হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কিছুদিন আগেও ভারতের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার সম্ভাবনার কথা জোরের সাথেই বলা হচ্ছিল। এখন অর্থনীতির সব সূচকেই মন্দা দেখা দেয়ার পাশাপাশি ভারতের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা দেখা দেয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় প্রবাহমান থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে আশঙ্কার বিষয়গুলো এখনি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতের অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের জন্য বিশেষ সতর্কতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় বাজার সউদী আরবেও হঠ্যাৎ করেই এক ধরণের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের পটভূমিতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও তা পুরোপুরি দূরিভূত হয়নি। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রফতানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স আয়ে গতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সামাজিক-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে ভারতের এনআরসি ও সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকে আক্রান্ত করতে পারে বলে যে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে আমরা যতই অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলি, স্বপ্ন দেখি না কেন, চলমান আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতি এবং দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা যেন অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলোকে পেছনে ফেলে অনাকাঙ্খিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে না পারে, সে বিষয়ে যথাযথ সতর্কতা ও রাজনৈতিক উদ্যোগ থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।