Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতজনিত রোগ বাড়ছে

এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি ৩৬ হাজার ৫৩৮ জন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

রাজধানীসহ সারাদেশে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতদিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৩৮ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে মৌসুমি রোগের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। শীতকালীন বিভিন্ন রোগের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। আর এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে সচেতনতার অভাবকেও দায়ী করছেন তারা। আর এমন পরিস্থিতিতে শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদা যতœ নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালের সাবেক প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, শীতজনিত কারণে শিশু ও বয়স্কদের নানা রকম স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা দেয়। এই সময়টা যাদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা আছে তাদের জন্যও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শীতের সময় তাদের আলাদা যতœ নিতে হবে। যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে গরম কাপড় পরিধান করা, ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি ব্যবহার ও গরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা। এই সময়টাতে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বয়স্ক ও শিশুদের ঘর থেকে বের না হওয়াই ভালো। তিনি বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসজনিত রোগ জ্বর, সর্দি ও কাশিও হয়ে থাকে এই সময়ে। আর এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। কারণ এইসব রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অনেক সময়েই কার্যকর হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার পর থেকে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ বাড়তে থাকে। এ সময়ে ডায়রিয়া (রোটা ভাইরাস) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ে তেমনি বৃদ্ধি পায় শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন সমস্যার রোগী। মূলত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই এমনটি হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১২ হাজার ৯৩০ জন ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণে পাঁচ হাজার ৫১৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও শীতকালীন নানা রোগে (জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ, জ্বর ইত্যাদি) আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮ হাজার ৯০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
এই সাত দিনে চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এই বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৯৫ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার মধ্যে এক হাজার ৪১ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণে, দুই হাজার ৫৮৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এবং ছয় হাজার ৯৬৭ জন শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। খুলনা বিভাগে ৯ হাজার ৯৩১ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে মধ্যে ৯৪৬ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণে, দুই হাজার ২৪৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এবং পাঁচ হাজার ৯৮৮ জন শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সবচাইতে কম সংখ্যক রোগী ভর্তি (শীতজনিত কারণে) রাজশাহীতে। এই বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭৮ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণে, ৮৭৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এবং ৯১ জন শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়াও ঢাকা বিভাগে পাঁচ হাজার ৯০৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুই হাজার ৮৮৭ জন, রংপুর বিভাগে দুই হাজার ৬২২ জন, সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৭১ জন রোগী বিভিন্ন শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সবচেয়ে কম সংখ্যক রোগী দেখা গেছে বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে এক হাজার ৯৫৯ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে।

এছাড়াও এই সাত দিনের (১৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর ছয় হাজার ১৭১ জন এবং ২০ ডিসেম্বর ছয় হাজার ৭১ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। উল্লেখ্য, এই সময়েই দেশে বয়ে গেছে এ বছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ।

চলতি বছরের নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ৫২ হাজার ৭৫৮ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৭১৬ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণে, এক লাখ দুই হাজার ৭৯৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এবং এক লাখ দুই হাজার ৯৪৩ জন শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় সবচাইতে বেশি রোগী ৭৩ হাজার ৫৮২ জন ভর্তি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে। বরিশাল বিভাগে সবচাইতে কম ১২ হাজার ৪৯০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

এই ৫৩ দিন সময়ে সারাদেশে শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে ১৬ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণে, চারজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এবং ২৯ জন শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি মারা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে (২২ জন)। জেলা হিসেবে পঞ্চগড় ও খাগড়াছড়ির মানুষ বেশি মারা গেছে এই সময়ে।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, আমাদের হাসপাতালে আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী আসতো। কিন্তু শীতের প্রকোপ বাড়ার পর গত দুইদিন গড়ে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী এসেছে। এদের বেশির ভাগই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। অনেকেই আসছে জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে স্বাভাবিকভাবেই শীতজনিত রোগ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আমাদের হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশুরা আসছে। এক্ষেত্রে তাদের পরিচর্যার বিষয়টি বাসায় রেখেই সচেতনভাবে করা উচিত। শিশুদের এই যতটা সম্ভব ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাদের বাইরে না নেওয়াই ভালো। আর যদি একান্তই যেতে হয় সেক্ষেত্রে শিশুর শরীর, মাথা ও কান ভালোভাবে গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে নিয়ে যেতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ