পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এর জেরে ভারতের উত্তরপ্রদেশে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এদিকে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। মোটরবাইকের আগুন থিতিয়ে এসেছে খানিকটা। তবে দাউ দাউ করে জ্বলছে দুটি গাড়ি। উল্টো দিক থেকে তখনও ইটের টুকরো এসে পড়েছে রাস্তায়। সেফটি জ্যাকেট ও হেলমেট পরে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের দিকে লক্ষ্য করে ফাটানো হচ্ছে কাঁদানে গ্যাসের সেল। তার মধ্যেই বন্দুকের সেফটি ল্যাচ খুলে সামনের দিকে ছুটে গেলেন এক অফিসার। পিছনে থাকা পুলিশদের মধ্যে থেকে তখন উড়ে আসছে, মেরে ফেল সবক’টাকে। সে কথা কানে যেতেই ট্রিগারে চাপ দিলেন তিনি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল উত্তরপ্রদেশ থেকে এবার পুলিশের এমনই ভিডিও সামনে এলো। শনিবার কানপুরে সেটি তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিয়োটি। তাতে বিক্ষোভ থামাতে যোগী সরকারের ভ‚মিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে গত তিন ধরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ গোটা উত্তরপ্রদেশে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে, যার মধ্যে রয়েছে ৮ বছরের শিশুও। পুলিশের গুলিতেই ওই ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও তা অস্বীকার করেছে যোগীর রাজ্যের পুলিশ। বিক্ষোভকারীরাই বন্দুক হাতে মিছিলে নেমেছিল বলে অভিযোগ তাদের।
রাজ্যের ডিজি ও পি সিংহ সংবাদমাধ্যমে বলেন, সবক’টি মৃত্যুই গুলি-বিনিময়ের মধ্যে পড়ে হয়েছে। ময়নাতদন্ত হলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের গুলিতে কেউ মারা গেলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করিয়ে ব্যবস্থা নিতাম। উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভের এলাকা থেকে ৪০৫টি কার্তুজের খোল মিলেছে বলে দাবি করেন আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) প্রভীন কুমার।
পুলিশ পোশাক দেখে দমননীতি চালাচ্ছে : ‘পোশাক’ দেখে পুলিশ লাঠিচার্জ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মুসলিমরা এই নিপীড়নের শিকার বলে মনে করা হচ্ছে। সদ্য পাসকৃত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে প্রতিবাদকে বিজেপি শুধুই মুসলিমদের বিক্ষোভ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। দিল্লির জামে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছেন দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে তার হাতে গীতা বা কোরআন নয়। রয়েছে ভারতের সংবিধান। সøামডগ মিলিয়নেয়ার ছবির সাউন্ড ডিজাইনের জন্য অস্কার-জয়ী রেসুল পুকুট্টি-র কথায়, এটাই আমার কাছে বদলে যাওয়া ভারতের সব থেকে আশা জাগানো ছবি।
‘দেশের যুবদের ভবিষ্যত ধ্বংস করে লুকোতে চাইছেন’ : রাহুল গান্ধী
দেশের যুব সমাজের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিয়ে, দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ করে এখন দেশজুড়ে ঘৃণার বাতাবরণ তৈরি করে, তার পিছনে লুকোতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গতকাল দুপুরে দিল্লির রামলীলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরই মোদি-শাহের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন রাহুল গান্ধী। নিজের টুইট অ্যাকাউন্টকে হাতিয়ার করে যুব সমাজের প্রতি তার বার্তা, ‘প্রিয় দেশের যুবরা, মোদি এবং শাহ আপনাদের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিয়েছেন। কর্মসংস্থানের যে ঘাটতি রয়েছে এবং দেশের অর্থনীতির যে হাল হয়েছে, তারপর তারা আপনাদের ক্ষোভের মুখোমুখি হতে পারছেন না। তাই তারা দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন এবং সেই ঘৃণার বাতাবরণের পিছনে লুকোতে চাইছেন’। মোদি গতকাল রামলীলা ময়দানে ভোটপ্রচারের সময় এনআরসি আর সিএএ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে হিংসা ছড়ানো হচ্ছে বলে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। তারপরই রাহুলের এই টুইট।
৭০ বছর পরেও মর্যাদার জন্য লড়তে হচ্ছে মুসলিমদের : ওয়েইসি
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ফের একবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তার কথায়, শুধু মুসলিমরাই নন, সমস্ত দেশবাসীর উপর এই আইনের প্রভাব পড়বে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। শনিবার সন্ধ্যায় হায়দরাবাদে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম)-এর সদর দফতরে বিশেষ বৈঠক ডেকেছিল ইউনাইডেট মুসলিম অ্যাকশন কমিটি। সেখানেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ওয়েইসি। তিনি বলেন, ‘লাইনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে কেন? এই মাটিতে জন্মেছি আমি। এই দেশেরই বাসিন্দা। তার পরেও ১০০ কোটি মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। প্রমাণ দিতে হবে নাগরিকত্বের। এটা শুধুমাত্র মুসলিমদের সমস্যা নয়, বরং প্রত্যেক ভারতবাসীর সমস্যা। মোদিভক্তদের বলে রাখি, কাগজপত্র হাতে নিয়ে আপনাদেরও কিন্তু লাইনে দাঁড়াতে হবে!’
দেশভাগের সময় ভারতে থেকে গেলেও স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও ভারতে মুসলিমদের সন্দেহের চোখে দেখা হয় বলেও অভিযোগ তোলেন ওয়েইসি। তিনি বলেন, ‘জিন্নার দ্বি-জাতি তত্ত¡ প্রত্যাখ্যান করে দেশভাগের সময় এ দেশেই থেকে গিয়েছিলেন ভারতীয় মুসলিমরা। আঘাত নয়, সর্বতোভাবে এই দেশকে রক্ষা করতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। তা সত্তে¡ও স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও মর্যাদার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে ভারতীয় মুসলিমদের। সকলের সন্দেহ দূর করতে হচ্ছে।’
ওয়েইসি আরও বলেন, ‘বলা হচ্ছে, পৃথিবীতে আরও অনেক মুসলিম দেশ রয়েছে। সেখানে চলে যান। কেন যাব? আপনারা যান দেখি! ভারতে জন্মেছি আমি। ভারতকেই ভালবাসি। তাই এই দেশ নিয়েই যাবতীয় মাথাব্যথা আমার। গুলি চালানোর হলে চালান। আপনাদের গুলি ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু ভারতের প্রতি আমার ভালবাসা ফুরোবে না।’ দেশের সংবিধানকে রক্ষা করতে সিএএ এবং এনআরসি-এর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানাতে সকলকে বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেও আর্জি জানান ওয়েইসি।
যোগীরাজ্যে বহু দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিল প্রশাসন : যেমন কথা, তেমন কাজ। প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানো হলে ‘বদলা’ নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দেরি হয়নি। মুজফ্ফরনগরের ৬০টিরও বেশি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। দোকানদারদের অপরাধ ছিল, তারা নতুন আইনের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে নতুন আইনের প্রতিবাদে হিংসার ঘটনা রাজ্যে সবচেয়ে বেশি যেখানে ঘটেছে, সেই লখনউ ও সম্ভলে এখনও পর্যন্ত কোনও দোকানে তালা ঝোলায়নি যোগী সরকার। লখনউয়ের দু’-একটি জায়গায় শুধু তালা ঝোলানোর নোটিস ধরানো হয়েছে। রাজ্যের আরও ১২টি জেলার সঙ্গে মুজফ্ফরনগরেও হিংসার ঘটনা ঘটেছিল গত শুক্রবার। নামাজের পরেই শুরু হয় সেই সব ঘটনা। ১০টি গাড়ি ও বাইক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়। জখম হন অন্তত ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জনাবারো পুলিশ অফিসারও। ওই ঘটনার পরেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘সব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা বদলা নেব।’ মুজফ্ফরনগরের দোকানগুলিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যোগী সরকার কথা রাখলেন!
জমিয়তে উলেমা হিন্দ নেতার হুমকি : অবিলম্বে সিএএ প্রত্যাহার করা হোক। না হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে বেরুতে দেয়া হবে না। গতকাল কলকাতার এক জনসভায় এমন হুঁশিয়ারি শোনা গেল রাজ্য গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির গলায়। তার দল জমিয়তে উলেমা হিন্দের এক জনসভা থেকে সিদ্দিকুল্লা বলেন, ‘আমরা উনাকে প্রয়োজনে শহরের বিমানবন্দরের বাইরে বেরোতে দেব না। উনাকে থামাতে এক লাখ মানুষ জড়ো করবো। আমাদের লড়াই গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। হিংসায় বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমরা সিএএ ও এনআরসি-র প্রতিবাদ করবো।
উত্তর প্রদেশে ঢুকতে দেয়া হল না তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে : তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে রাজ্যে ঢুকতে দিল না যোগী আদিত্যনাথের সরকার। গতকাল দুপুরে বিমানবন্দরে নামতেই তাদের ঘিরে ধরে পুলিশের একটি দল। তার পর ফাঁকা বাসে তুলে রানওয়ের উপরই একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। সেখানেই ধরনায় বসে যান তৃণমূলের ওই নেতারা। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, ‘অশান্তি পাকাতে তো আসিনি আমরা। মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, দেখতে এসেছিলাম। শান্তিপূর্ণ ভাবেই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিমানবন্দরে আটকানো হয় আমাদের’। এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এর আগে আসামেও আটকেছে আমাদের। এখন উত্তরপ্রদেশে আটকাচ্ছে। আসলে এরা সত্যিটা জানতে দিতে চায় না’। সূত্র : এনডিটিভি, রয়টার্স, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।