পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কনকনে শীত জেঁকে বসছে সারাদেশ। শীতের সাথে হিমেল হাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে জীবনযাত্রা। চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রচন্ড শীতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তীব্র শীতে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও ছিন্নম‚ল মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে রোগ ব্যাধি। হাড় কাঁপানো শীতে সাধারণ মানুষের বিপর্যস্ত অবস্থা। দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী নওগাঁ, জয়পুরহারসহ উত্তরের জেলাগুলোতে তীব্র শীত আর কনকনে ঠান্ডা বাতাসে গ্রামীণ জনপদ স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে হিমেল। মানুষ শীত থেকে বাঁচতে খড় জ্বালিয়ে শরীর গরম করছে। শীতের কবল থেকে বাঁচতে খড়-কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে রংপুর অঞ্চলে অন্তঃসত্ত্বাসহ আট নারী দগ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কর্মজীবী মানুষের কষ্ট আরো বেশি।
দেশের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা অল্প বাড়লেও এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ঢাকায়। গতকাল সকালে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে । এছাড়া কুড়িগ্রামে ১২, মাদারীপুরে ১০.৪ ও রাজশাহীতে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, কুয়াশায় বিমান ও সড়কসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক বিঘিœত হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহন চলচলা এখন দুস্কর হয়ে পড়েছে। দিনরাত সাদা ধোঁয়ার মতো কুয়াশা উড়তে দেখা যায়। মহাসড়কে যানবাহন গুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করতে হচ্ছে। পৌষ মাসের শুরুতে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থায় শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে দুর্ঘটনাও ঘটছে একের পর এক। শুধু দুর্ঘটনাই ঘটছে তা নয়, ভেঙে পড়েছে সময়সূচি। ৭ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগেছে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা।
নৌ-যোগাযোগ নির্ভর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিপর্যয়ের এই চিত্র আরো মারাত্মক। তীব্র হিমেল হাওয়ায় উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলসহ সারাদেশে জনজীবনে দুঃসহ যাতনা সৃষ্টি হয়েছে। রাতের নৌযান গুলো সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।
কুয়াশার প্রভাব পড়েছে আকাশ পথেও। গতকাল শনিবার ভোরে ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪ ঘণ্টা জন্য বিমান ওঠা-নামা বন্ধ ছিল। ভোররাত থেকে বিমানবন্দর দুটিতে ঘন কুয়াশায় কয়েকটি ফ্লাইট ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটে। পরে বিমান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে সকাল ৯টা ও সাড়ে ১০টার দিক থেকে বিমানবন্দর দুটিতে বিমান চলাচল শুরু হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরের উপ পরিচালক ও এয়ার স্টেশন ট্রাফিক অফিসার ওয়াহিদুর রহমান জানান, ভিজিবিলিটি ৫০ থেকে ১০০ মিটারে নেমে আসায় শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার পর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো বিমান অবতরণ করতে পারেনি। তিনি জানান, এ কারণে বাংলাদেশ বিমানের কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকামুখী ফ্লাইট, দোহা ও ব্যাংকক থেকে আসা দুটি কার্গো ফ্লাইট কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। চীনের গুয়াংজু থেকে আসা ইউএস বাংলার অপর একটি ফ্লাইট মিয়ানমারের মান্দালয়ে অবতরণ করেছে। মোট চারটি ফ্লাইট কুয়াশার কারণে অবতরণ করতে পারেনি। কুয়াশা কেটে গেলে সকাল ৯টা থেকে বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক হয়।
যশোর : যশোর অঞ্চলের জনজীবন গত দু’দিন দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যশোরের ঐতিহ্য ও গৌরবের খেজুরের রস গুড়ের ব্যবসা বিঘিœত হয়। যত শীত তত মিষ্টি রস, ব্যবসাও হয় রমরমা। কিন্তু ভরা মৌসুমে গাছিরা ঠিকমতো রস সংগ্রহ করতে পারছেন না। পারলেও তা দিয়ে নলেন গুড় ও পাটালি তৈরী করা কঠিন হচ্ছে। রস গুড়ের ব্যবসা অনেকটা মন্দা গত দু’দিন। শীতের তীব্রতায় শীতবস্ত্রের দোকানে উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে। দামও হাকাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ঘন কুয়াশায় রাস্তায় যানবাহন চলচাল কমে গেছে। যশোর এয়ারপোর্ট সূত্র জানায়, যশোর থেকে ঢাকা সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
রাজশাহী : শীতে কাবু রাজশাহীর মানুষ। বইছে হিমেল হাওয়া। তাপমাত্রা খানিকটা বাড়লেও শীতের প্রকোপ একটুও কমেনি। বরং গতকাল দিনভর মুড়ে ছিল কুয়াশার চাদরে। একটি বারের জন্যও উঁকি দেয়নি সূর্য। চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। টানা তিনদিন রাজশাহীর তাপমাত্রা অবস্থান করছিলো এক অঙ্কে। শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রিসেলসিয়াস থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম জানান, ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। এজন্য আজ শীত একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা কমেনি।
কুড়িগ্রাম : দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় সমান হওয়ায় শীতের তীব্রতা একই রকম অনুভূত হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে উত্তরীয় হিমেল হাওয়া। রাত নামলেই শীতের সাথে পড়ছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ফোঁটা। কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্র জানায়, শনিবার জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
লালমনিরহাট : শীতে কাহিল লালমনিরহাটের মানুষ। সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। লালমনিরহাট জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা তে-খামারে দিন মজুরের কাজ করতে পারছে না। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারণে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ছিন্নমুল মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে ১৩টি নদ-নদী তীরবর্তী ৬৩টি চরের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা। গবাদিপশু ও পাখি রেহাই পাচ্ছে না শীতের প্রকোপ থেকে।
মাদারীপুর : মাদারীপুরে জেঁকে বসতে শুরু করেছে হাড় কাঁপানো শীত।টানা ৩ দিন ধরে শীতের প্রচন্ড তীব্রতা অনুভব দেখা যাচ্ছে। এদিকে শীত জেঁকে বসায় সংকিত হয়ে পড়ছেন নিম্নআয়ের মানুষরা। শীত মৌসুমের প্রথমে কিছুটা কম থাকলেও গত ৩ দিন ধরে হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস, শীত জেঁকে বসেছে ও মৃদু বাতাস বইছে। শীতের কামড়ে কাবু হয়ে পড়েছে মাদারীপুরসহ মধ্যাঞ্চলের মানুষ।
প্রচন্ড শীতের কারণে মাদারীপুরের মানুষের জনজীবন থমকে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহ ও মৃদু বাতাসের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন বৃদ্ধ ও কোমলমতি শিশুরা। তীব্র শীতের কারণে গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীরা ক্রেতার সাড়া পাচ্ছেন। তবে বিপাকে দিন খেটে খাওয়া মানুষ গুলো। তারা শীতের মধ্যেও বিভিন্ন পেশার মানুষ করছে কাজ। মাদারীপুর আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আবদুর রহিম সান্টু বলেন, শীত মৌসুম চলে আসায় শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। গতকাল শনিবার তাপমাত্রা সর্ব নিম্ম ছিলো ১০.৪ ডিগ্রিসেলসিয়াস। তিন দিন ধরে মাদারীপুরে শীতের তীব্রতা একটু বেড়েছে। ক্রমে নেমে আসছে শৈত্যপ্রবাহ।
নওগাঁ : কনকনে শীত, কুয়াশা ও পাশাপাশি হিমেল বাতাসে নওগাঁর গ্রমীন জনপদের মানুষেরা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। গত বুধবার মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে না। দুপুরের দিকে নিরুত্তাপ সূর্য্যকে একটু সময়ের জন্য পাওয়া গেলেও তা অস্ত যাবার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যার পর থেকে কনকনে শীতের সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। যার কারনে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এতে করে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
লালপুর (নাটার) : উত্তরাঞ্চলের পদ্মানদীবিধৌত নাটোরের লালপুর উপজেলার উপরদিয়ে গত চার দিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বয়ে যাওয়া হিমশীতল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষেরা।হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
ঘন কুয়াশার কারনে দুপুরেও সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। তীব্র শীত আর এক টানা ঘন কুয়াশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধারা। প্রতিনিয়তই ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি, নিওমনিয়া ও হাপানিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এছাড়াও তীব্র শীতের কারনে ঘরথেকে বেরহতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্নআয়ের পরিবার।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : উত্তরের সীমান্তবর্তী সৈয়দপুরসহ গোটা জেলায় গত ২ দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলেনি। পৌষের শুরুতেই কনকনে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় মানুষ কাতর হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতায় কর্মজীবী মানুষ ঘরের বাইরে বেরুতে পারছে না। এ কারণে পুরানো কাপড়ের দোকানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রাতে ও ভোরে কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ইরি- বোরোর বীজতলা বাঁচাতে কৃষকরা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখছেন। এবছর পুরানো কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় নিæ আয়ের মানুষরা কিনতে পারছেন তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) : প্রচন্ড শীত ও টানা ৪দিন ধরে বয়ে চলা মৃদ শৈত প্রবাহে চলনবিলের তাড়াশ, গুরুদাসপুর, চাটমোহর, সিংড়াসহ ৯টি উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরা ফুটপথের দোকানগুলোয় ভীর জমাচ্ছেন গরম কাপরের জন্য ।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : তীব্র শৈত্য প্রবাহের কারণে উল্লাপাড়ায় ছোট শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে। সেই সাথে বয়স্করাও হাঁপানী ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থিত ৫০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ শয্যায়ই ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা ভর্তি আছে। বাইরের আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত বয়স্ক রোগীদের সংখ্যা ৬০ এর বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।