পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৌষের শুরুতেই হাড় কাঁপানো শীত। তিনদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিপর্যস্ত জনজীবন। কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের সম্মেলনে হাজির হন অর্ধলাখ মানুষ। সবার মুখে শ্লোগান ‘জয় বাংলা’ আর ‘শেখ হাসিনা’। সম্মেলনের মূল মঞ্চ নয়নাভিরাম পদ্মা নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল নৌকা। নৌকার চারপাশজুড়ে প্রমত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পানির ঢেউ, নদীর বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, চরের মধ্যে কাশবন। এ এক অন্যরকম দৃশ্য।
ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সব পথ যেন মিশেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া থেকে এসেছে হাজার হাজার নেতাকর্মী। অধিকাংশে গায়েই মুজিব কোর্ট। সবার আকর্ষন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাউন্সিলে নতুন কমিটিতে কারা আসছেন, কে হচ্ছেন সাধারন সম্পাদক তা নিয়ে যেমন ছিল আগ্রহ; তার চেয়েও বেশি আগ্রহ নেত্রী আগামীর রাজনীতির জন্য কী বার্তা দেন তা শোনার জন্য। দেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্ব›িদ্ব শেখ হাসিনা ‘রাজনীতির কবির’ মতোই শোনালের সেই বার্তা --।
উৎসব উদ্দিপনায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আর দেশাত্মবোধক গান ও নাচের মধ্য দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেষ হল আওয়ামী লীগের দুইদিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিন। গতবারের চেয়ে এবার সম্মেলনে জাকজমক কম হলেও উৎসাহের কমতি ছিল না নেতাকর্মীদের মাঝে। দলটির নেতাকর্মীদের মতে, সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা সবার জানার আগ্রহ-উদ্দিপনা থাকলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কারণেই মূলত প্রাণবন্ত হয় সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রীর টানেই দেশের প্রত্যেক প্রান্তর থেকে সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মী ও বঙ্গবন্ধু প্রেমীরা তীব্র শীতের মধ্যে ছুটে আসেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শীতের মধ্যে মুজিব কোট পরিহিত অনেক ছোট শিশু ও বয়ঃবৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু প্রেমীকে দেখা গেছে। দলে কে কোন পদ পেল, না পেল তা নিয়ে আগ্রহ থাকলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগের কান্ডারী তাতেই সন্তুষ্ট নেতাকর্মীরা। কারণ সবার শেষ ভরসাস্থল শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ প্রবীণ নেতাকর্মীদের মতে, শেখ হাসিনার হাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থাকলে আর চিন্তার কিছু নেই। দল ও দেশ তার একক নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা সভাপতি থাকলে দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে কে থাকবেন না থাকবেন তা নিয়ে কোন চিন্তার কিছু নেই। সম্মেলনে বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ’।
রংবেরঙের পোশাক আর ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সম্মেলন ঘিরে সারাদেশ থেকে অর্ধলক্ষের বেশি নেতাকর্মী জমায়েত হন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সম্মেলন বিকাল ৩টায় শুরু হলেও তীব্র শীত উপেক্ষা করে নেতাকর্শীরা সকাল ৮টা থেকে সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করে। সকাল ১১টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এছাড়াও আশেপাশের শাহবাগ মোড়, রমনা পার্কের ভেতর, হাইকোর্টের মোড়, দোয়েল চত্বর ও টিএসসি এলাকা মিছিলের জনস্রোতে পরিণত হয়। সম্মেলন স্থলেই ছিল জুম্মার নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় নেতা ও সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সির, ডেলিগেটরা একসাথে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে আওয়ামী লীগের বর্ণাঢ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ, আলোকসজ্জায় প্রাণবন্ত ছিল পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং ১৫ হাজার ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী ও আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নেন। যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে। সম্মেলনে শেখ হাসিনা নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। দেশের কয়েকটি টেলিভিশন সরাসরি সে ভাষণ প্রচার করে।
কেন্দ্রীয় কমিটির ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার ছিল ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার ছিল প্রায় ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার ছিল। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হয় সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান। সোহরায়ার্দী উদ্যান ছাড়াও আশে পাশের পুরো এলাকায় ছিল নেতাকর্মীদের ভিড়। ২১তম সম্মেলনে যোগ দিতে নিজ হাতে বানানো নৌকার আদলে তৈরি ভ্যানগাড়ি নিয়ে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন পূর্বধলার পাইলাটি গ্রামের দরিদ্র কৃষক সিদ্দিক মিয়ার। সাথে দুই শিশু সন্তানকেও নিয়ে এসেছেন। ঢাকায় পৌঁছতে তার চারদিন, চাররাত লেগেছে। গতকাল সকালে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে তার দুই শিশু সন্তানকে সাদা পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরিহিত অবস্থায় ভ্যানে বসে থাকতে দেখা যায়। তারা জানায়, তাদের বাবা ভেতরে গেছেন। কার্ড না থাকায় তারা ঢুকতে পারছে না। তাদের ইচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার।
৮৭ বছর বয়সে নীলফামারী থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের টানে ২১তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন জোনাব আলী। জোনাব আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একাধিকবার তিনি নীলফামারী জেলার সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, প্রাণের টানে সম্মেলনে এসেছি। আমি চাই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন যে নেতৃত্ব আসবে, তারা যেন বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের আদর্শকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে লালন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান।
শেখ হাসিনাকে দেখার আগ্রহ বয়সের বাধা হেরে গেছে ১০৪ বছর বয়সী ইসহাক আলী মাষ্টারের কাছে। নেত্রীর প্রতি ভালোবাসার শীত এবং পরিবারের সদস্যদের আপত্তি উপেক্ষা করে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হাজির হন। কুষ্টিয়া জেলার সদর থানার আব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও ৪ বারের ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক আলী বৃটিশ বিরোধী তেভাগা আন্দোলন করেছেন, ভাষা আন্দোলন করেছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বললেন, এটা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ। কোনো বাঁধাই আমাদের কাবু করতে পারেনা।
সত্তোরোর্ধ আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ কর্মী মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্মেলন হল নেতাকর্মীদের মিলন মেলা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যতদিন আছেন ততদিন আমরা নিশ্চিন্ত। ‘শুদ্ধি অভিযানে’ অনেক নেতাই শংকিত কিন্তু আমরা যারা কর্মী তাদের কোন শঙ্কা নেই। কারণ আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ কর্মীদের ভরসার জায়গা ওই একটাই। আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। কর্মীদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার জায়গা তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা শাহীন বলেন, দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আন্দোলন করেছি, পুলিশের গুলিও খেয়েছি। দল করে অনেকে অনেক কিছু পেলেও আফসোস নেই। কারণ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে ভালবেসেই ত্যাগ স্বীকার করেছি। আগামীতেও যখন দলের প্রয়োজন পড়বে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীখার করতে রাজি আছি।
খুলনা থেকে সম্মেলনে আসা আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মী সাইফুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এই প্রথম আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এসেছি। সম্মেলন কেমন হয় তা দেখার জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার জন্য।
সম্মেলনে যোগ দিতে নরসিংদী থেকে আসা আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফা বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ দলটির এবার ২১তম সম্মেলন হচ্ছে। সবাই নতুন নেতৃবৃন্দের নাম শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতেই সরাসরি এখানে উপস্থিত হয়েছি।
আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছেন আকরাম হোসেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাহিরে দেখা গেছে, আকরাম ও তার পরিবারকে। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। আকরামের ৯ বছরের ছেলে নিশাদের মাথায় দেখা গেলো নৌকা। এই নৌকা নিয়েই আকরাম আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে যোগদান করতেন। এবার ২য় শ্রেণি পড়–য়া ছেলের মাথায় সেই নৌকা তুলে দিয়েছেন আকরাম হোসেন। এ বিষয়ে আকরাম হোসেন বলেন, আমরা পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগ করি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের প্রতিটি প্রোগ্রামে আমি উপস্থিত থাকি। এবার আমার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছি। ওই নৌকাটা আমার মাথায় থাকে, এবার বড় ছেলের মাথায় তুলে দিয়েছি। আমার মত সেও বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও নৌকা ভালোবাসে। সম্মেলনে উপলক্ষে তার চাওয়া কি জানতে চাইলে আকরাম বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার চাওয়া হচ্ছে- এবারের সম্মেলনে যেন দুর্নীতি-সন্ত্রাসমুক্ত কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব উপহার দেয়া হয়।
এদিকে সম্মেলনের মূল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, দেখলে মনে হবে, যেন পদ্মা নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা। সেই নৌকার চারপাশজুড়ে থাকছে প্রমত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি। এর মধ্যে ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতুও। পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতি। সম্মেলন নাচে গানে ছিল পরিপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সম্মেলনে জাপার ৯ নেতা: আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনে আমন্ত্রিত হিসেবে যোগ দিয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরসহ নয় নেতা। গতকাল আড়াইটার দিকে ৯ নেতার প্রতিনিধি দলটি রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনস্থলে পৌঁছান। জিএম কাদের ছাড়াও এ দলে ছিলেন পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতি, মুজিবুল হক চুন্নু, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।