Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতে কাহিল জনজীবন

কনকনে ঠান্ডা-ঘনকুয়াশার কবলে দেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

এ যেন প্রকৃতির অপর খেলা। অস্ট্রেলিয়ায় এখন প্রচন্ড গরমে মানুষের নাভিশ্বাস; অথচ বাংলাদেশে তীব্র শীতে কাঁপুনি জনজীবন হয়ে পড়েছে জবুথবু। পৌষের শুরুতেই গত তিনদিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সর্বত্রই শীতের প্রকোপ বেড়েছে। হাড়কাঁপানো শীতে সাধারণ মানুষের বিপর্যস্ত অবস্থা। গত তিনদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না; তাপমাত্রাও ওঠা-নামা করলেও দিনে কনকনে ঠান্ডা এবং রাতে কুয়াশায় কোথাও কোথাও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঘনকুয়াশায় বিমান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, রাতে নৌ চলাচল বন্ধ থাকছে। আবহাওয়া অফিস বার্তা দিয়েছে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ১৯ ডিসেম্বর দশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গতকাল দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী নওগাঁ, জয়পুরহারসহ উত্তরের জেলাগুলোতে তীব্র শীত আর কনকনে ঠান্ডা বাতাসে গ্রামীণ জনপদ স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে হিমেল বাতাস নিম্নআয়ের মানুষকে নিদারুণ কষ্টে ফেলেছে। মানুষ শীত থেকে বাঁচতে খড় জ্বালিয়ে শরীর গরম করছে। কর্মজীবী মানুষের কষ্ট আরো বেশি।

পঞ্চগড় জেলার সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় হাড়কাঁপানো শীত। সূর্যের দেখা নেই; বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দিনে বেশিরভাগ সময়ই হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করছে যানবাহন। গতকালও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর বার্তা দিয়েছে আগামী ৭২ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে কনকনে ঠাÐা বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। মূলত ঘনকুয়াশায় ঢেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল।

শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানী ঢাকার ভাসমান ও নিম্নআয়ের মানুষও। অনেককেই সড়কের পাশে কাগজ-খর-কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীর উষ্ণ করতে দেখা গেছে। শুক্রবার ভোরে রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান জানান পৌষের শুরুতে হিমালয়ের কোলঘেঁষা উত্তর জনপদের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে ছিন্নম‚ল আর ভাসমান মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। রংপুর শহরের জাহাজ কোম্পানি মোড়ের পান দোকান দার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকাল বেলা ঠাÐার কারণে দোকানেই আসতে পারি না, আবার ঠাÐার কারণে সন্ধ্যার পর দোকানে বসে থাকা যায় না। কাউনিয়ার তিস্তাপাড়ের আবদুল জলিল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অভাবের তাড়নায় কাজের জন্য বের হলেও কাজ মিলছে না। এই শীতে আর জীবন বাঁচে না। এখন পর্যন্ত একখানা গরম কম্বল পাইনি। রংপুর রেল স্টেশন এলাকার শহিদুল হক বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। গরম কাপড় কেনার হামার সাধ্য নেই। সরকারও হামার দিকে দ্যাখে না। আপনারা যদি পান তাহলে হামাক একখান করে গরম কম্বল দেন।
কুড়িগ্রাম জেলায় কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। জেলার শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ চরমে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর চরাঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে রয়েছে। বাইরে প্রচÐ ঠাÐা বাতাস।
হিমালয়ের পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাটে জেঁকে বসেছে পৌষের শীত।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তবে কাল রোববার থেকে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তবে স্থানভেদে কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি হিমেল হাওয়ায় এই জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে তীব্র শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। শীতের হাত থেকে বাঁচতে হতদরিদ্র মানুষ রাতে ও সকালে খড়কুটো জ্বেলে এবং দিনের বেলা রোদকে ভরসা করে শীত মোকাবেলা করছেন।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে গতকাল শুক্রবার তাপমাত্রা কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শৈত্যপ্রবাহ রয়ে গেছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার অভ্যন্তরীণ আকাশপথে পাঁচটি ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আকাশপথের ফ্লাইটগুলো সময়মতো ঢাকা ছেড়েছে।
হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীর ছিন্নম‚ল ও শ্রমজীবী মানুষ। কমলাপুর, খিলগাঁও, আজিমপুর ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় তীব্র ঠান্ডায় ফুটপাথেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন মানুষ। কেউবা আবার পাতলা চাদর জড়িয়ে রাস্তার কোণায় শুয়ে পার করছেন রাত। বৃদ্ধ ও ছোট শিশুরা নিদারুণ ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছেন।

ছিন্নম‚ল মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কষ্টের এই চিত্র এবারের নয়, প্রতি শীত মৌসুমের। এরপরও বিত্তবানদের কাউকে পাশে পাচ্ছেন না বলে অভিমানী সুর এসব অসহায় মানুষের। রাজধানীবাসী ছিন্নমূল এক নারী বলেন, এমন ঠান্ডায় মানুষ বাঁচে না। রাতে আমরা ঘুমাতে পারি না। আমাদের কাঁথা-কাপড় কিছুই নেই।
শুধু শুয়ে বসে থাকা নয়, প্রচন্ড শীত সহ্য করেই নিম্ন আয়ের মানুষের বড় একটি অংশ রাত পার করছেন এই রাজধানীতে। কেউ রিকশা চালিয়ে, কেউবা মাথায় পণ্য-বোঝাই করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পেটের দায় শীতের কামড়ের চেয়েও আরো কষ্টের- এমনই জবাব তাদের মুখে। শ্রমজীবী জহির নামের একজন বলেন, এই শীতের মধ্যে কাজ করতে অনেক কষ্ট। তবুও, কাজ তো করতেই হবে। আমরা গরিব, কাজ করেই আমাদের বাঁচতে হয়।

শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় কর্মজীবী মানুষের অধিকাংশই গতকাল ঘর থেকে বের হননি। তবে যারা বের হয়েছেন তাদের দেখা গেছে গরম কাপড়ে মোড়ানো শরীর।
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান: টানা ৩ দিন ধরে শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকায় জুবুথুবু হয়েছে সব বয়সী মানুষ। গত ৩ দিন ধরে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরছে। সে সাথে উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে মারাত্মকভাবে।

বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরতে থাকায় দিনের বেলাতেও যান বাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চালাতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন বেলা ১/২টা পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকছে। হঠাৎ করে শৈত্য প্রবাহ এবং তীব্র শীত পড়ায় এ অঞ্চলের মানুষ চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে। দিন-রাত খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের তাপ নিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শীতের কারনে মানুষ রাতেও ঠিকমত ঘুমোতে পারছে না। রাতের অধিকাংশ সময়ই খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের তাপ নিয়ে কোন রকমে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতার কারনে চরাঞ্চলের মানুষগুলোর অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হিমেল হাওয়ার কারনে কাঁথা-কম্বল হিম শীতল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ৩ দিন ধরে সুর্যের দেখা না পাওয়ায় খড়-কুটো শুকাতে পারছে না মানুষ। ফলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। দু’দিন ধরে কাজে বের হতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

স্টাফ রির্পোটার, চাঁদপুর থেকে জানান : সকাল থেকে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে, চাদর, কানটুপি ও গলায় মাফলার পেঁচিয়ে সব বয়সের মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে। অথচ দুদিন আগেও তারা সাধারণ পোশাকেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। দুদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে তিন ডিগ্রি নীচে নেমেছে। অর্থাৎ বুধবার চাঁদপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল এই তাপমাত্রা ছিলো ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীত বাড়ায় শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় দুর্ভোগ বাড়ছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের। সেই সাথে সর্দি-কাশি, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপও বাড়ছে তীব্র শীতে ছিন্নমূল ও গরিবের কষ্টের সীমা থাকে না। বেড়েছে শীতবস্ত্রের দাম। শহরের চৌধুরী জামে মসজিদের সামনে এবং চৌধুরী ঘাট এলাকায় ও চাঁদপুর ডিসি অফিসের পশ্চিম পাশে গরম কাপড় বিক্রির ভাসমান দোকানগুলোতে সারাদিনই মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
চাঁদপুরের এনডিসি মো. মেহেদী হাসান মানিক জানান, এবার শীত শুরুর আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং নদীর পাড়ের বেদে পল্লীতে গিয়ে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওগণ কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। বড় স্টেশন ও লঞ্চঘাট এলাকায় ডিসি স্যার নিজেই যাবেন এবং পর্যবেক্ষণ করে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন।

চান্দিনা (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : পৌষ মাসের শুরুতে ঘনকুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থায় শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে দুর্ঘটনাও ঘটছে একের পর এক। তাই ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে আসায় দুর্ঘটনা রোধে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনে ফগলাইট জ্বালিয়ে পাশাপাশি গতি কমিয়ে চলাচলের পরামর্শ দিচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফেনী, চৌদ্দগ্রাম, পদুয়ার বাজার, চান্দিনা, দাউদকান্দি, মেঘনা ও গোমতী ব্রীজের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে মহাসড়কে কর্ত্যবরত হাইওয়ে পুলিশ গাড়ী চালকদের ফগ লাইট ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে দেখা যায়।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে তাপমাত্রা কমে এসেছে। জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। চলতি বছরে প্রথমবারের মতো বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এর প্রভাবে তাপমাত্রা দেশের কোথাও কোথও ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। যার ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র বাতাস ও কুয়াশা। মেঘাচ্ছন্ন থাকায় সামান্য দূরের গাড়ী খালি চোখে দেখা যায় না। তাই তিনি সকল চালকদের ফগ লাইট জ্বালিয়ে গতি কমিয়ে নিরাপদে চলাচলের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিরামপুর (দিনাজপুর)উপজেলা সংবাদদাতা জানান : কনকনে হিমেল হাওয়া, শৈত্য প্রবাহে খেটে খাওয়া মানুষেরা ঘরের বাহিরে বের হতে পারছে না। বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,শীত নিবারনের জন্য আগুন জ্বালিয়ে ছোট ছোট দলে ভুক্ত হয়ে ছোট-বড়রা আগুন পোহনোর কাজে ব্যস্ত।কনকনে ঠান্ডায় আগুনের উত্তাপ নিচেছন।কনকনে শীতে ও হিমেল হাওয়ায় গবাদি পশুরাও পড়েছে বিপাকে। বাড়ছে শীত জানিত লাম্পি ভাইরাস!এই ভাইরাসটি চিকিৎসা দেওয়ার পর সহজে সারছেনা।পচে খসে পড়ছে গবাদি পশুর মাংসও চামড়া বলে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকেরা জানান।

দিনাজপুর অফিস জানায় : হিমালয় কোল ঘেষে থাকা দিনাজপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশী হয়েই থাকে। এবার শীত এসেছে দেরীতে। গতকাল শুক্রবার ২১ ডিসেম্বর দিনাজপুরে সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াশ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও শীতের তীব্রতা বেশী অনুভ‚ত হচ্ছে। সূর্যের দেখা মেলেনি দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত। বাতাস বইছে। হিমশীতল এই বাতাস যেন শরীরে কাঁটার মত বিধছে। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাহিরে যাচ্ছে না। দিনান্তের খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছে বিপাকে। কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এরপরেও খাদ্যের প্রয়োজনে কষ্ট করে হলেও কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দিনান্তের খেটে খাওয়া মানুষেরা কুয়াশাছন্ন পথ-ঘাট পেরিয়ে কর্মের সন্ধানে ছুটছে শহরের দিকে। কৃষক কৃষানীরা কাস্তে হাতে মাঠের পথে। আপাদমস্তক গরম কাপড় মুড়িয়ে অফিস কর্মীরা ছুটছে কর্মস্থলে।

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান : ক্রমাগত তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে প্রচন্ড শীতের প্রকোপে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস সুত্রে জানা গেছে শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশী।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের কৃষি আবহাওয়া উচ্চ পর্যবেক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, দুই একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে। এ অবস্থায় জেলার চরাঞ্চলের মানুষেরা খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, গত তিন দিন ধরে শীতের প্রার্দুভাবটা বেড়েছে। তবে মানুষ যে খুব কষ্টে আছে সেটা আমরা মনে করছি না। শীতের যে প্রস্তুতি সরকারী ভাবে সেটা আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে আছে। ইতিমধ্যে আমরা সরকারীভাবে যথেষ্ট শীতবস্ত্র বরাদ্দ পেয়েছি। নগদ কিছু টাকাও আমাদের হাতে আছে। প্রয়োজন মনে করলে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানায় : কনকনে ঠান্ডার সাথে হিমেল বাতাস যোগ দেয়ায় শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ উঠেছে চরমে। দিন ও রাতে খরকুঠোর আগুন জ¦ালিয়ে শরীরে তাপ দিয়েও ঠান্ডার কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছেন শীতার্তরা। এদিকে, প্রচন্ড শীতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন চরম দুঃখে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। অপরদিকে, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে ঘন কুয়াশার কারনে লোকাল ও আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ধীরগতিতে চলায় সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের সহকারী বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তা সাজ্জাত হোসেন জানান, ঘন কুয়াশার কারনে ট্রেনের গতি কমিয়ে আনার কারনে সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানায় :শীতার্ত মানুষরা তাদের আয়ের কিছু অংশ দিয়ে হলেও শীত বস্ত্র ক্রয়ের জন্য ভিড় করছে কাপড়ের দোকানগুলোতে। এ বছরে শীতবস্ত্রের চড়ামূল্য হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতারা পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে উপচে পড়ছে। শৈত্যপ্রবাহের কারনে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে সর্দি-কাশি, জ্বর, এজমাসহ শীতজনিত রোগ। দুইদিন ধরে জেলার ৪ টি উপজেলায় শিশুসহ বয়োবৃদ্ধরা শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন শীতবস্ত্র। বিতরন করা হয়নি বলে জানাগেছে।

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানায় : নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে নওগাঁয় কুয়াশা না থাকলেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। গত তিন যাবত নওগাঁবাসীরা সূর্যের মুখ দেখতে পায়নি। দুপুরের দিকে নিরুত্তাপ সূর্যকে একটু সময়ের জন্য পাওয়া গেলেও তা অস্ত যাবার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যার পর থেকে কনকনে শীতের সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। কনকনে শীতের কারণে কাজে ফিরতে পারছে না সাধারণ মানুষরা। এতে করে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান : পাহাড়, নদী ও হাওর বেষ্টিত নেত্রকোনায় তীব্র শীত ঝেঁকে বসেছে। হঠাৎ করেই শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সহায় সম্ভলহীন অসহায় হত দরিদ্র ও ভাসমান সাধারণ নিন্ম আয়ের মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়ছে। শহরে লোকজনের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরণের স্থবিরতা। ঠান্ডাজনিত কারণে ধানের বীজ তলা বিনষ্ট হচ্ছে। শীত নিবারণের জন্য অনেকেই মোটা কাপড়ের দোকানে ভীড় জমাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের হত দরিদ্র মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতার্ত অসহায় মানুষ শীত নিবারণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কম্বল বিতরণের জোর দাবী জানান।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান : শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত কয়েকদিনে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত প্রায় শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আবু শফি মাহমুদ জানান শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত রোগে বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন। শুক্রবার সারাদিন সূর্যের দেখা মিলেনি। এদিকে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সুত্র মতে গতকাল শুক্রবার নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ফুলপুর(ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : শীতে কাপছে ফুলপুরবাসী। গরম কাপড়ের দোকানে উপছে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। গত তিন দিন যাবৎ সূর্যের দেখা মিলছে না। খেটে খাওয়া মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শীতকালিন ফসল সরিষা, গম, আলু, বেগুন, পিয়াজ, মরিচ ও বোরো ধানের বীজতলায় শীত রোগ আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে তাপমাত্রা কমে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শীতবস্ত্রের দোকানে ভীড় জমে ওঠেছে। চাদর, সোয়েটার, কম্বল, তোষকসহ গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে।



 

Show all comments
  • Jahid Hasan ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:০২ এএম says : 0
    no comment
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ পিএম says : 0
    Where is our humanity ???? --- Government and rich people have the responsibility to help these poor people ......
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ