পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোদীর মুসলিম বিদ্বেষী এনআরসি আর নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতে তোলপাড় চলছে। ১৪৪ ভেঙ্গে প্রতিবাদ করছে সে দেশের নাগরিকরা। নতুন আইন সংখ্যালঘু মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করবে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মিডিয়া এএফপি ‘ভারতীয় মুসলমানরা এখন কোথায় যাবেন’ শীর্ষক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি ইনকিলাব পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
হাবিব-উর রহমান গত চার বছর ধরে কারাগারে ছিলেন। ভারতীয় হিসেবে নিজের নাগরিকত্বের নথিপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। এবার দেশটি থেকে বের করে দেয়া হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। উগ্র হিন্দুত্বাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনে মুসলমানদের একটি বড় অংশই শঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন।
স¤প্রতি এই আতঙ্ক ক্ষোভে রূপ নিয়েছে। ধর্মভিত্তিক ও মুসলমানবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের পর তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এতে বাংলদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
৫০ বছর বয়সী হাবিব বলেন, এই গ্রামে আমাদের পাঁচটি প্রজন্ম বসবাস করেছি। আজ বলা হচ্ছে আমি একজন অনুপ্রবেশকারী। কারণ আমি মুসলমান।
উত্তর-প‚র্ব ভারত আসামে অন্তরীণ থাকার পর স¤প্রতি তিনি ছাড়া পেয়েছেন। আসাম থেকে বহিরাগতদের বের করে দেয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ২০১৫ তাকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে নাগরিকত্ব নিবন্ধন শুরু হলে চলতি বছরের শুরুতে এ প্রক্রিয়া আরও ব্যাপকতা লাভ করে। মোদি সরকার এখন এই নাগরিকপঞ্জি দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে চার সন্তানের এই জনক বলেন, বহু নির্বাচনে আমি ভোট দিয়েছি। সারাজীবন ভারতীয় আইন মেনে চলেছি। আর আজ তারা আমাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করতে চায়।
ইতিমধ্যে আসামে ১৯ লাখ লোককে রাষ্ট্রহীন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের ক্যাম্পে অন্তরীণ কিংবা দেশ থেকে বের করে দিতে পারে ভারতীয় সরকার।
স্থানীয় গবেষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা এখন রাষ্ট্রহীন, অস্তিত্বহীন। সরকারি কার্যক্রমের বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকবে না। তারা ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা কিংবা সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন না। তিনি বলেন, যারা ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হবেন, তাদের শেষ পরিণতি হিসেবে সারাজীবন ক্যাম্পে অন্তরীণ থাকতে হবে, অথবা সারাজীবন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হবে।
বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ থেকে অভিবাসন ও নৃতাত্তি¡ক উত্তেজনার কয়েক দশক পর আসামের ঘটনাবলি ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। রাজ্যটিতে ব্যাপকসংখ্যক হিন্দু ও মুসলমান তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
অসমীয়দের অভিযোগ, বাংলাভাষী এসব মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি পুরো ভারতের মুসলমানদের আতঙ্কিত করে তুলছে। ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির মাধ্যমে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ভারত থেকে সব অনুপ্রবেশকারীকে বের করে দেয়া হবে। আর মোদি বলছেন, সত্যিকার ভারতীয়— যাদের মধ্যে ২০ কোটি মুসলমান রয়েছেন তাদের কোনো ভয় নেই।
কিন্তু লোকজনের আসামের অভিজ্ঞতা কিন্তু সেই কথা বলছে না। বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের আগ থেকে তারা সেখানে বসবাস করছেন, সেই প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু দরিদ্র রাজ্যটির বড় একটি সংখ্যক বাসিন্দার শিক্ষার অভাব রয়েছে। কাজেই নিজেদের নাগরিকত্বের নথিপত্র হেফাজত করে রাখা তাদের অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কাজেই এই প্রক্রিয়া অযৌক্তিক ও অসঙ্গতিতে প‚র্ণ। দেখা যাচ্ছে, নাগরিকপঞ্জিতে সহোদরদের একজন নথিভুক্ত হলেও অন্যরা বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া নথিপত্রের টাইপের ভুল ও অতিরিক্ত কাজের চাপে কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিতে বাদ পড়েছেন অনেকে।
দেশজুড়ে যখন এই নিবন্ধন করা হবে, তখনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাড়বে। যার মাসুলও হবে অনেক চড়া। বিশেষ করে মুসলমানদের ক্ষেত্রে এটা ঘটবে বেশি। কারণ তাদের শিক্ষার হার নিতান্তই কম। ২০১১ সালের এক আদমশুমারিতে দেখা গেছে, ৪৭ শতাংশ ভারতীয় মুসলমান পড়তে কিংবা লিখতে পারেন না।
গবেষক আজাদ বলেন, আসামের লোকজন এনআরসির জন্য প্রস্তুত ছিল। তবু ১৯ লাখ লোক তা থেকে বাদ পড়ে গেছেন। কাজেই ভারতের অন্যত্র মুসলমানদের ক্ষেত্রে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা কল্পনা করা সহজই হবে।
আসামের বাইরে মুসলমান ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের সমর্থকরা যন্ত্রণা বোধ করতে শুরু করেছেন ইতিমেধ্য। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে তারা এখন বিক্ষোভ-প্রতিবাদে নামছেন।
মুম্বাইভিত্তিক আইনজীবী জুবাইর আজমি বলেন, দেয়ালে লেখা রয়েছে। ইসরাইলি নীতি অনুসরণ করে তারা ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। এসব সত্তে¡ও আমার মনে হচ্ছে, দেশ জেগে উঠেছে।
৪৬ বছর বয়সী এই মুসলমান নাগরিক বলেন, আমি জানি, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা আমাদের হয়ে লড়াই করছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ ইসলামের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রপাগান্ডা তারা বিশ্বাস করছেন। সোনিপাথের ও পি জিন্দাল গেøাবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমরিন আগা বলেন, গত মে মাসে পুননির্বাচিত হওয়ার পর মোদির অধীন আরেক হতাশাজনক ঘটনা হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।
গত আগস্টে মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় নয়াদিল্লি। নভেম্বরে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় হিন্দুদের মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর মসজিদটি ধ্বংস করে দিয়েছিল কট্টর হিন্দুরা।
মোদির প্রথম আমলে গরুর গোশত ও ধর্মীয় বিদ্বেষকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যার সংখ্যা বেড়েছিল। যেসব শহরের নাম মুসলমানদের নামে ছিল, সেগুলো বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ ভয়ঙ্কর ঘটনা হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। যদিও মোদি জোর দিয়ে বলছেন, এটা মুসলমান বিদ্বেষী না।
দিল্লিতে অস্ত্রধারী পুলিশের হাত থেকে সহপাঠীকে রক্ষায় পত্রিকার খবরে শিরোনাম হওয়া আয়েশা রেন্না নামের এক মুসলমান মেয়ে বলেন, প্রথমে এটা কাশ্মীর দিয়ে শুরু হয়েছে। যখন আমরা নীরব রয়েছি, তখন বাবরি মসজিদ মামলার রায় এসেছে। তিনি বলেন, এরপর তারা পুরো ভারতের মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন। তবে অধ্যাপক আগা বলেন, আইনের বিরোধিতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অতীতেও প্রতিরোধ হয়েছে। কিন্তু এখন রাস্তার এই বিক্ষোভ নজিরবিহীন। আধুনিক ভারতের ইতিহাসে যা একেবারে বিরল। তাদের আর কিছু হারাতে হবে না। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।