Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে হত্যা রহস্য উদঘাটন

স্টিলের পাতটিকে চাকুর মতো ব্যবহার করে গলা কেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেয় মোজাম্মিল

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৬:০৩ পিএম

সিলেটে আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। ফলে মস্তকবিহীণ সেই তরুণীর পরিচয় এবং খুনের সাথে তার স্বামীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি ও খোলাসা হল। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় গেল ২ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাত এক তরুণীর (২০) মাথাকাটা দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এর সাতদিন পর, গত ৯ ডিসেম্বর সকালে ওই তরুণীর ছিন্ন মস্তক উদ্ধার করা হয়। উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের যুগিনীঘর হাওর থেকে উদ্ধার করা হয় এ ছিন্ন মস্তক। চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনার পর প্রথম দুই সপ্তাহে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিল না পুলিশ। অবশেষে মিলেছে ক্লু, বেরিয়ে এসেছে প্রকৃত ঘটনা, জানা গেছে ওই তরুণীর পরিচয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণীর নাম সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজ। তিনি খ্রিস্টান থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বিবাহিত। স্বামী মোজাম্মেল মিয়া ওরফে মুজাম্মিলের (২৪) হাতে খুন হন শাহনাজ। ‘পরকীয়ার কারণে’ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করেন মোজাম্মেল। পরে গলা, নাক, কান ও স্তন কেটে ফেলেন। মোজাম্মেল মিয়া ওসমানীনগর উপজেলার দক্ষিণ কলারাই (গোয়ালাবাজার) গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার ছেলে। গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজের বাড়ি বরিশালে। তার এর বেশি পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া স্থানীয় মোহন নামের এক যুবকের সাথে শাহনাজের ‘পরকীয়া’ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানাতে চাননি সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম।

গত বুধবার রাতে পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণীর খন্ডিত মাথা উদ্ধারের পর আগে উদ্ধারকৃত দেহের সাথে মিল আছে কিনা, তা পরীক্ষার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে রহস্য উদঘাটনে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. লুৎফুর রহমান ছিলেন। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা এলাকা থেকে মোজাম্মেল মিয়া ওরফে মুজাম্মিলকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই তরুণীকে নিজের স্ত্রী সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজ হিসেবে সনাক্ত করেন মোজাম্মেল। তিনি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার লোমহর্ষক বিবরণ প্রদান করেন।


পুলিশ কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, গত ৩০ নভেম্বর বেলা ১টার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডীপুল থেকে গোয়ালাবাজার যান মোজাম্মেল ও শাহনাজ। সেখান থেকে ওসমানীনগরের উনিশ মাইল এলাকার আগে শাটকিলা নামক স্থানে অটোরিকশা থেকে নেমে পড়েন তারা। ধানী জমির মধ্য দিয়ে তারা উনিশ মাইলে মোজাম্মেলের বড় খালা ফুলমতির বাড়িতে রওয়ানা দেন। এর মধ্যে রাত হয়ে গিয়েছিল। মোজাম্মেল ও শাহনাজ হাওরের (বিল) মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে থাকেন। মোজাম্মেলের হাতে ছোট গ্যাস লাইটার ছিল। যাওয়ার সময় তারা খানিক দূরে টর্চলাইটের আলো দেখে থেমে যান। তিনি আরো জানান, হাওর দিয়ে যাওয়ার পথে শাহনাজ দৈহিক মিলন করতে চাইলে মোজাম্মেল ধমক দেন। তখন শাহনাজ মোজাম্মেলকে গালিগালাজ করে বলেন, তিনি মোহন নামের এক যুবককে বিয়ে করবেন। শাহনাজ তাকে ‘আম্মা’ ডাকতে বলেন মোজাম্মেলকে। এতে ক্ষিপ্ত হন মোজাম্মেল। পরে শাহনাজের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। তার লাশ লুকানোর চিন্তা করেন মোজাম্মেল। তিনি শাহনাজের বোরকা, জামাকাপড় সব খুলে ফেলেন এবং তার হাতব্যাগ, মোবাইল সবকিছু একত্র করেন। এরপর নিজেও উলঙ্গ হয়ে হাওরের কাদাপানি গায়ে মেখে উনিশ মাইল বাজারে যান। সেখানে ওয়ার্কশপের দোকানের বাইরে পড়ে থাকা চিকন স্টিলের পাত ও সিমেন্টের দুটি প্লাস্টারের টুকরো তুলে নেন। প্লাস্টারের টুকরো দিয়ে স্টিলের পাত ঘষে ধারালো করতে থাকেন মোজাম্মেল।

আমিনুল ইসলাম জানান, মোজাম্মেল ফের হাওরে শাহনাজের লাশের কাছে ফিরে যান। স্টিলের পাতটিকে চাকুর মতো ব্যবহার করে তার গলা কেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর তার নাক, কান, স্তন কেটে ছুড়ে ফেলেন মোজাম্মেল। এছাড়া স্টিলের পাত দিয়ে শাহনাজের উরু ও পেটে একাধিক কোপ দেন তিনি। এছাড়া তার ছিন্ন মাথা একটু দূরে কাদার মধ্যে চাপা দেন। পরে সেখান থেকে সরে এসে পশ্চিম কালারাই গ্রামের দক্ষিণে নাটকিলা নদীতে ওই স্টিলের পাত ছুড়ে ফেলেন তিনি। এছাড়া শাহনাজের কাপড়চোপড়, মোবাইল সব পার্শ্বস্থ একটি ইটভাটার জ্বলন্ত চুলি­তে ফেলে দেন।

মোজাম্মেলকে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় নিজের স্ত্রী শাহনাজ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রহস্য উদঘাটন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ