পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে সিনিয়র নেতাদেরকে রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতারা। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন সফল করারও অঙ্গীকার করেছেন তারা। গতকাল (বুধবার) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা বার বারই সিনিয়র নেতাদের কাছে কর্মসূচির ঘোষণা চান।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলেন, গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনভাবে মুক্ত করা সম্ভব নয়। আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করার জন্য রাজপথে লড়াই করতে চাই, জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতিটি নেতাকর্মী রাজপথের লড়াই করার জন্য প্রস্তুত, তারা কর্মসূচি চায়। এমন কর্মসূচি চাই যার মাধ্যমে সরকার পতন হবে এবং বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবে। সেই কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনে আমরা মরতে রাজী, মারতে রাজী। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে আমরা কর্মসূচি চাই, আশা করি জাতীয় নেতৃবৃন্দ সেটা বিবেচনা করবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক শামসু বলেন, আমরা নেতৃবৃন্দের কাছে কর্মসূচি ঘোষণা চাই। কারণ আন্দোলন ছাড়া দেশনেত্রী মুক্ত হবেন না তা প্রমাণিত। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা কর্মসূচি দিন। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল রহমান খোকন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন না ঘটালে বেগম জিয়া মুক্ত হবেন না। তাই সরকার পতনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ছাত্রদল যে কোন কর্মসূচি রাজপথে থেকে সফল করার জন্য অঙ্গীকার করছে।
অঙ্গসংগঠনের নেতারা কর্মসূচি দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় নাট্যমঞ্চের মিলনায়তনে উপস্থিত নেতাকর্মীরা আন্দোলন-কর্মসূচি, খালেদা জিয়ার মুক্তি শ্লোগান দেন। এছাড়া সিনিয়র নেতারাও বক্তব্য দেয়ার সময় তারা কর্মসূচি চাই, কর্মসূচি চাই আওয়াজ তুলেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার,
যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ প্রমূখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে আজকে আমাদের অর্জন কি? রাজনৈতিক যে মুক্তি চেয়েছিলাম তা পাইনি। আজকে স্বৈরাচারি, অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শক্তির অধীনে মানুষ নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগ) তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন আর নির্বাচনে কেউ আগ্রহী নয়, ভোটাররাও ভোট দিতে যান না। কেউ গেলে বলে আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে অথবা ভোট দেয়া লাগবে না। এজন্য ৫ ভাগের বেশি ভোট পড়ে না।
তিনি বলেন, আজকে লেখার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। দারিদ্র সীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আয়ের বৈষম্য বেড়েছে আকাশচুম্বি। অর্থনৈতিক যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে সেটা অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন ভেঙে খান খান করেছে। বিচার বিভাগে মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। উপর থেকে নির্দেশ আসে। খালেদা জিয়ার রায়ে প্রমাণ হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। ৪৮ বছর পরও আমাদের বলতে হচ্ছে আমরা স্বাধীন নই। স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। যারা গণতন্ত্রে, মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, শুধুমাত্র তাদের উন্নয়নে তারা বিশ্বাস করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অতীতে যেভাবে স্বৈরাচারকে পরাজিত করা হয়েছে, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে একইভাবে স্বৈরাচার, হানাদার, দখলদার বাহিনী আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করা হবে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। একভাগে- গণতন্ত্রের পক্ষে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি। তারা দেশের স্বার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করছে। অন্যভাগে-একনায়ক ও স্বৈরাচারের পক্ষে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। তারা নতজানু হয়ে স্বার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, এনআরসির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু সরকার তার প্রতিবাদ করতে পারছে না, একটি কথাও বলতে পারছে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারতের এনআরসি নিয়ে সারাভারত উত্তপ্ত কিন্তু আমরা চুপচাপ। এনআরসি বাস্তবায়ন করতে পারলে আক্রমণ হবে বাংলাদেশের ওপর। যাদেরকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে চায়না তাদেরকে বলবে বাংলাদেশী। সুতরাং এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও সরকারের মন্ত্রীরা যে বুলি আওরাচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারও সেই একই কথা বলছেন।
তিনি বলেন, সব বিষয় আভ্যন্তরীণ হয় না। কোন দেশের সিদ্ধান্ত যদি অপর দেশকে আঘাত করে, স্বার্থহানী করে, জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করে। তখন সেটিকে আভ্যন্তরীণ ব্যপার বলে ধামাচাপা দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না। ভারতেই এনআরসির বিরুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আন্দোলন করছে। বাংলাদেশেও প্রতিবাদ করতে হয়। কিন্তু হচ্ছে না।
অমিত শাহের সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের মতো বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যেসব কথা বিএনপির বিরুদ্ধে বলে তিনি সেসব কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন বিএনপির আমলে এদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। বিএনপির এই নেতা অমিত শাহকে বাংলাদেশে এসে জরিপ করার আহŸান জানিয়ে বলেন, জরিপ করলে দেখবেন হিন্দুদের সম্পত্তির ৯০ শতাংশ দখল করেছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বেলন, আওয়ামী লীগ যে ভাষায় বাংলাদেশে কথা বলে সেই ভাষায় যদি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলে তাহলে কাকে আমরা বন্ধু ভাববো? কাকে শত্রæ ভাববো? আমরা ভারতকে শত্রæ ভাবি না। কিন্তু তাদের কথাবার্তায় মনে হয় তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে। বাংলাদেশে শান্তি, অগ্রগতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক তা কখনো তারা চায় না। সুতারাং আমাদের বোঝাপড়ার ব্যপার আছে। চুপ করে থাকলে হবে না। কারণ আমরা মনে করতাম ৭১ সালে ভারত আমাদের সহযোগিতা করছে। কিন্তু এখন মনে হয় তারা ভাবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বিনিয়োগ করেছে।
রাজাকারের তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগেরই ৮ হাজারের বেশি নেতাকর্মী রয়েছে। শেখ মুজিবের ফুঁফাতো ভাই রাজাকারের তালিকায় রয়েছে, শেখ মুজিবের চাচা, ৪৩জন এমপি যারা পাকিস্তানের পক্ষে স্বাক্ষর করেছিল তারা রয়েছেন।রাজাকারের তালিকা যদি ঠিক মতো দেখা যায় তাহলে দেখবেন সবচেয়ে বেশি রাজাকার গোপালগঞ্জে এবং পারিবারিকভাবে দেখলে সবচেয়ে বেশি রাজাকার শেখ মুজিবের বংশে। এতো চেষ্টা করেও কিন্তু জিয়াউর রহমানের পরিবারের কারো নাম রাজাকারের তালিকায় আসেনি।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, রাজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। সাংবাদিক এবিএম মূসা আজকে জীবিত থাকলে বলতেন, আওয়ামী লীগকে দেখলেই বলতে হবে, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার। তারাই প্রমাণ করেছে ১০ হাজারের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি রাজাকার তারাই। তিনি বলেন, রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে ভারতের এনআরসি, ভারতের সাথে স্বার্থবিরোধী চুক্তি এবং ভারত থেকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে যে দলে দলে লোক বাংলাদেশে আসছে সেই দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর জন্য সরকার রাজাকার রাজাকার নামক ভানুমতির খেলা শুরু করেছে।
হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, রাজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগে রয়েছে ৮ হাজার ৬০ জন। জোর করে বিএনপির নাম দিয়েছে এক হাজার ২৪ জনের। আজকে রাজাকারের দল ক্ষমতা দখল করে আছে। অনতিবিলম্বে রাজাকারদের দলকে পদত্যাগ করতে হবে। রাজাকারদের হাতে ক্ষমতা দেশের মানুষ দেখতে চায় না। রাজাকারদের বলতে চাই- অনতিবিলম্বে স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রীকে মুক্তি দিন। যদি না দেন জাতি কিন্তু আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের প্রসব যন্ত্রণায় আছে। আরেকটি মুক্তিযোদ্ধা সামনে। এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হচ্ছে। রাজাকারদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে দিয়ে দেয়া সময়ের ব্যপার মাত্র।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, আওয়ামীলীগের কোন নেতা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছে তা কেউ বলতে পারবে না। আমরা বলতে পারি জিয়াসহ অসংখ্য যোদ্ধা বিএনপিতে। মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষকে অরক্ষিত রেখে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। তালিকা যেটা প্রকাশ করেছে সেটা নিয়ে তারা নিজেরাই এখন বিব্রত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।