Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও ছিনতাই

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত বৃহস্পতিবার গাবতলী বাস টার্মিনালে আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাজধানীতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ঠেকাতে প্রয়োজনে পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেন। তার এমন কঠোর নির্দেশ সত্ত্বেও রাজধানীতে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই কমেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বরং ঈদ সামনে রেখে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, তাদের কাছে অভিযোগ এলে দ্রুত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেফতারেরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বাস্তবে এর কোনো নিদর্শন দেখা যায় না। পুলিশের এসব বক্তব্য এখন অনেকটা দায়সারা বক্তব্যে পরিণত হয়েছে। অথচ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের উৎপাতে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ চাঁদাবাজদের হুমকিতে জীবন নিয়ে সংশয়ে আছেন। দেশ ও বিদেশের অজানা নম্বর থেকে ফোন করে নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা চেয়ে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। জেল ও দেশের বাইরে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকেও চাঁদা চেয়ে হুমকি আসছে। শুধু শীর্ষ সন্ত্রাসীই নয়, উঠতি সন্ত্রাসীরাও বেপরোয়া। সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তারা এখন চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। এমনকি চাঁদাবাজি ঠেকানোর দায়িত্বে থাকা পুলিশের বিরুদ্ধেও উল্টো চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে অত্যন্ত পেরেশানি ও আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
এ কথা সবাই জানেন, ঈদ এলে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। পুলিশও তা ভাল করে জানে। প্রতিবছরই পুলিশের তরফ থেকে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। চাঁদাবাজি ঠেকাতে বিভিন্ন মার্কেটে র‌্যাব-এর ক্যাম্পও বসানো হয়। এবার তো প্রয়োজনে গুলি করারই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে কিভাবে? এর কারণ হচ্ছে, কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথাগুলো বাস্তবে প্রয়োগ হতে দেখা যায় না, কেবল লিপ সার্ভিস হয়েই থাকে। বলা বাহুল্য, পেশাদার চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীর সাথে এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যের সখ্যতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। এটি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। অনেক সময় পুলিশের সামনে ছিনতাই হলেও পুলিশ না দেখার ভান করে। এজন্য যে, তারা চায় ছিনতাইটি হোক। এতে তাদেরও কমিশন থাকে। এমনও উদাহরণ রয়েছে, প্রভাবশালী কেউ ছিনতাইয়ের কবলে পড়লে সংশ্লিষ্ট থানার এক শ্রেণীর পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে দিতে পারছে। এটা সম্ভব হচ্ছে এ কারণে যে, উক্ত পুলিশ সদস্যরা সংশ্লিষ্ট এলাকার কারা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত তা ভাল করে জানে এবং তাদের সাথে সম্পর্কও রয়েছে। চাঁদাবাজদের সাথেও এই শ্রেণীর পুলিশের তদ্রƒপ সখ্য রয়েছে। অসৎ পুলিশ সদস্য সরাসরি না জড়িয়ে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের সাথে প্রচ্ছন্নভাবে জড়িয়ে থাকে। এতে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীর বেপরোয়া হয়ে উঠাই স্বাভাবিক। এর উপর ব্যবসায়ীদের উপর সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি তো রয়েছেই। ঈদের সময় যেন তাদের জন্য বিশেষ আনন্দের সময় হয়ে আসে। দোকান, মার্কেট ও ব্যবসায়ীরা তাদের টার্গেটে পরিণত হয়। চাঁদা দিতেই হবে। না দিয়ে নিস্তার নেই। বাধ্য হয়ে তাদের চাঁদা দিতে হয়। গতকালের বেশ কয়েকটি দৈনিকের খবর থেকে জানা যায়, অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদাবাজরা মোটা অংকের টাকা দাবী করেছে। না দিলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে। এসব ব্যবসায়ী এখন অত্যন্ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি ঘর থেকেও বের হচ্ছে না। বের হলেই যদি মেরে ফেলে, এমন এক অনিশ্চিত সময় পার করছে। এসব ঘটনার বাইরে আরও এমন অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে দিন অতিবাহিত করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে আশ্রয় চাইবে, তার কোনো ভরসা তারা পাচ্ছে না। তারা ভাল করেই জানে, বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে করতে তার জীবন বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। কারণ, সর্ষের ভেতরেই ভূত রয়ে গেছে। ফলে এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। উপায় হচ্ছে, হয় চাঁদাবাজদের দাবী মোতাবেক চাঁদা দিয়ে দিতে হবে, নয়তো গুলি খেয়ে প্রাণ দিতে হবে। এমন এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বসবাস করছে।
ঈদে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে কেনা-বেচার কাজটি করতে চায়। ক্রেতা চায় পছন্দের জিনিসপত্র কিনে আনন্দ পেতে, ব্যবসায়ী চায় তার কাক্সিক্ষত মূল্য পেয়ে খুশি হতে। বড় ব্যবসায়ীদেরও একই চাওয়া-পাওয়া। এর মধ্যে যদি চাঁদাবাজি ও ছিনতাই ঢুকে পড়ে, তখন তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। ঈদের পুরো আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। এমন অনেক মানুষ আছে, যারা নিজেদের জন্য না ভেবে অনেক কষ্ট করে ঈদে শুধু ছেলে-মেয়ের আনন্দ দেখার জন্য শপিং করতে রওনা দেয়। পথিমধ্যে যদি ছিনতাইকারী তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়, তখন তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। এ ধরনের ঘটনা যে ঘটছে না, তা নয়। সব ঘটনা পত্র-পত্রিকায় আসে না। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইকারীরা যে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, তাতে সন্দেহ নেই। আমরা আশা করব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মানুষের কেনা-কাটা ও ব্যবসায়ীদের আনন্দকে নির্বিঘœ করতে বাস্তবিকই চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীকে অপরাধী হিসেবেই চিহ্নিত এবং দমন করতে হবে। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। চাঁদাবাজি ও ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ পরিকল্পনা করতে হবে এবং এ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদেরও এসব অপকর্ম থেকে দূরে থাকতে এবং রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও ছিনতাই
আরও পড়ুন