Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জ্বলছে পশ্চিমবঙ্গ, ট্রেন-বাসে আগুন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ পিএম

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও ঘেরাও, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজ্যটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও রেল-সড়ক অবরোধের পাশাপাশি ৫টি ট্রেনসহ ১৫টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহিংসতা বন্ধ করে সবাইকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে সম্প্রতি আইন সংশোধন করেছে ভারত। ১২ ডিসেম্বর রাতে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পরেই আইনে পরিণত হয়েছে বিতর্কিত বিলটি। তারপর থেকেই সহিংসতা বেড়েছে সমগ্র ভারতে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) মুর্শিদাবাদের লালগোলা স্টেশনে খালি পড়ে থাকা পাঁচটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। মুর্শিদাবাদের পোড়াডাঙ্গা, জঙ্গিপুর ও ফারাক্কা স্টেশন এবং হাওড়ার বাউরিয়া ও নালপুর রেলস্টেশন অবরোধ করা হয়। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সংযোগস্থল ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪ অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। ১৫টি বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে তাতে আগুন দেন তারা।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা রেল ও সড়কপথ বন্ধ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ার করেছেন, যারা জনগণের সম্পদের ক্ষতি করছেন তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
হাওড়ার সাঁকরাইলে এবং মুর্শিদাবাদের একাধিক রেল স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। হাওড়ায় অন্তত পনেরোটি সরকারি ও বেসরকারি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আবার, হাওড়া এবং মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে রাখেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এসব বিক্ষোভের নেতৃত্বে কোন একটি সংগঠন ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিক্ষোভ হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত। এইসব সহিংসতার পটভূমিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর একটি ভিডিও বার্তা শনিবার সকাল থেকেই স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে প্রচারিত হয়েছে, যেখানে তিনি রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করবেন না, উত্তেজনা বা আতঙ্ক ছড়াবেন না এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে পা দেবেন না। তিনি এটাও বলেছেন যে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হলে কাউকে ছাড়া হবে না। এর আগে তিনি গণতান্ত্রিক উপায়ে বিক্ষোভ করার পরামর্শ দিলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুব্ধ জনগণ তা দৃশ্যত উপেক্ষা করেছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে যে প্রতিবাদ হচ্ছে, সেখানে এ নতুন আইন ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়া সংবিধানের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজ্যের মুসলমানদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে যে তাদের একটা অংশকে এই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন বানানো হচ্ছে।
এই একই উদ্বেগ রয়েছে আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যেও। তারা বলছেন, এনআরসি থেকে যে ১৯ লক্ষ লোকের নাম বাদ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে থেকে অমুসলিমদের নতুন এই আইনের মাধ্যমে নাগরিক করে নেয়া হতে পারে, কিন্তু মুসলমানরা হয়তো বাদই থেকে যাবেন। যার কারণেই বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলমানরা।
ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গে এই আইনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে যেসব মুসলিম সংগঠন তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে রাজ্যের দলিত এবং উদ্বাস্তু সংগঠনগুলোর একাংশ। আবার ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, বামপন্থী দলগুলো এবং মানবাধিকার কর্মীরাও এই আইনটির বিরোধিতা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এনআরসি

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
১৪ জানুয়ারি, ২০২০
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ