মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্ব রাজনীতিতে ইতিহাস গড়ার পথে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রেক্সিটপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি
নেতা জাতীয় নির্বাচনে ভ‚মিধস জয় পেয়ে নতুন সরকার গঠনের পথে হাটছেন। যুক্তরাজ্যে ৬৫০ সংসদীয় আসনের মধ্যে সরকার গঠনে প্রয়োজন ৩২৬ আসন। সরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে কনজারভেটিভ পার্টি তার মধ্যে পেয়েছে ৩৬৪টি আসন। নির্বাচনে এই ফলাফল দেশটির ব্রেক্সিট নিয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থার অবসান ঘটাবে। বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন ঢেউ তুলবে।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে কনজারভেটিভ পার্টিম নেতা ডেবিট ক্যামেরুনকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন দলের সিনিয়র নেতা টেরিজা মে। তিনিও ব্রেক্সিটের সুরাহা করতে পারেননি। বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করতে হয় তাকে। টেরিজা মে’র পদত্যাগ এবং সংসদ স্থগিত করা নিয়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে যুক্তরাজ্যে। যে কারণে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য হন মে’র উত্তরসূরি বরিস জনসন। সেই নির্বাচন নিয়েও ছিল আশঙ্কা। বিভিন্ন জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত ছিল। জনমতে একে অপরকে টক্কর দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জনসন ও বিরোধী নেতা লেবার পার্টির সভাপতি জেরেমি করবিন। তবে গত বৃহষ্পতিবার নির্বাচনে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বিপুল আসনে জিতে ঐতিহাসিক জয় পেল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। ‘সকল সমস্যার মূল’ ব্রেক্সিটের পক্ষে ব্রিটেনে গণ জোয়ার দেখল বিশ্ব। ব্রেক্সিটপন্থী নেতা হিসেবে সেই জোয়ারে ভ‚মিধস জয় পেলেন বরিস জনসন।
ব্রিটেনে ৬৫০ আসনের মধ্যে সরকার গঠনে প্রয়োজন ৩২৬ আসন। সরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে কনজারভেটিভ পার্টি তার মধ্যে পেয়েছে ৩৬৪টি আসন। লেবার পার্টি পেতে পেয়েছে ২০৩টি আসন। ১টি আসনের ফলাফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। এ জয়কে তিন দশকের মধ্যে টরিদের জন্য সবচেয়ে বড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেকে একে ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ জয়ের পেছনে কাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের চমক। ‘ব্রেক্সিট সফল করুন’- এ স্লোগান দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। আর এতেই বাজিমাত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সহ ইউরোপ ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে বিজয়ের আগাম বার্তা পেয়ে বরিস জনসন বলেন, ‘বেক্সিট সম্পূর্ণ করতে ভোটাররা তার সরকারকে নতুন করে জোরালোভাবে সমর্থন দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন হিসেবে স্থান পেতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ব্রিটিশ জনগণের গণতান্ত্রিক ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, এ দেশের জনগণের উন্নয়ন ও সমূহ সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে আমাদের।’
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল ব্রেক্সিট। বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্রেক্সিট নীতিই বড় দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালের গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে ব্রিটিশরা ভোট দিলেও এখন পর্যন্ত ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কার্যকর চুক্তি পাস না হওয়ায় বারবার আটকে যায় প্রক্রিয়াটি। ব্রেক্সিট চুক্তি পাস না হওয়ার বড় কারণ পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা।
২০১৭ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, গঠন হয় থেরেসার নেতৃত্বে জোট সরকার। চুক্তির শর্ত নিয়ে জোট ও বিরোধীদের মত-ভিন্নতার কারণে বিলম্বিত হয় ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন। পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ ও দলের নেতাদের আস্থা হারানোর পর পদত্যাগ করেন টেরিজা মে। কনজারভেটিভরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয় জনসনকে। দায়িত্ব নিয়ে তিনিও পার্লামেন্টে নিজের চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ হন। বাধ্য হয়ে ঘোষণা করেন আগাম নির্বাচন, যাতে তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
নির্বাচনি প্রচারণা ও ফলাফল বিশ্লেষণে উঠে আসছে যে, ব্রিটিশ জনগণ গণভোটের রায়েরই হয়তো প্রতিফলন দেখতে চেয়েছিলেন। তাই, দ্রুততম সময়ে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের অঙ্গীকার যে দল করেছে, তাকেই এককভাবে ক্ষমতা তুলে দিতে ভোট দিয়েছেন তারা। দলীয় সমর্থকদের পাশাপাশি দোদুল্যমান ভোটও এককভাবে পেয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। অন্যান্য দলের সমর্থক, কিন্তু ব্রেক্সিট প্রশ্নে বিরক্ত, এমন ভোটারদের ভোটও গেছে ক্ষমতাসীনদের বাক্সে।
পরাজয় মেনে নিয়ে বিরোধী লেবার দলের চেয়ারম্যান ইয়ান ল্যাভেরি হারের কারণ বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘অধিক মাত্রায় ব্রেক্সিট বিরোধী অবস্থানের কারণে হেরেছে লেবার পার্টি। বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের মধ্যে মাত্র একটিই পার্থক্য আছে। তা হলো, লেবার পার্টি আরেকটি ব্রেক্সিট গণভোটের পক্ষ অবলম্বন করছে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ২০১৭ সালের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে লেবার দল বলেছিল, তারা ব্রেক্সিট গণভোটের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ কর্মজীবী সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এখন মনে করেন, এই দলটি ব্রেক্সিট আটকে দেয়ার চেষ্টা করছে।’
এদিকে, স্কটল্যান্ডে ৫৯টি আসনের মধ্যে ৪৮টি আসন পেয়েছে স্বাধীনতাপন্থী দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)। ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থি লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি ১১টি আসন পেয়েছে। দলটির নেতা জো সুইনসন এসএনপি’র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন।
ভোটে ভালো করার পর এসএনপির নেতা নিকোলা স্টরজেন বলেছেন, স্কটল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করার অনুমোদন নেই বরিস জনসনের। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্রেক্সিট চাই না। বরিস জনসন ইংল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার জন্য জনসমর্থন পেতে পারে কিন্তু স্কটল্যান্ডের ক্ষেত্রে সেটি নয়।’
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় ব্রিটেন থেকে বেরিয়ে যেতে এসএনপি দ্বিতীয়বারের মতো স্কটল্যান্ডে গণভোটের ডাক দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের গণভোটে ৫৫ শতাংশ স্কটিশ ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দেয়।
কি কি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন জনসন:
ব্রেক্সিট: কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ব্রেক্সিট। দলপ্রধান জনসন জানিয়েছেন, তিনি বড়দিনের আগেই পার্লামেন্ট চালু করতে চান। ব্রেক্সিট নিয়ে তার চুক্তি পাস করিয়ে ব্রাসেলসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চান। তার প্রতিশ্রুত সময় অনুসারে, আগামী ৩১শে জানুয়ারির মধ্যেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেড়িয়ে যাবে ব্রিটেন।
ফেব্রুয়ারিতে বাজেট: সরকার গঠনের পর ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাজেট পাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। ওই বাজেটে দেশের অভ্যন্তরীন বিষয় যেমন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খরচ বৃদ্ধির প্রতি অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
অভিবাসন: কনরভেটিভ পার্টি সরকার গঠনের পর অভিবাসন নীতিমালা কঠোর করার পরিকল্পনা করছে। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নীতিমালার ঘরানায় পয়েন্ট-ভিত্তিক অভিবাসন চালু করার কথা জানিয়েছে তারা। এই পদ্ধতিতে বৃটেনে সার্বিক অভিবাসন হ্রাস পাবে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ অভিবাসীর হার কমে আসবে। নতুন অভিবাসন পদ্ধতির আওতায়, ইইউ ও এর Ÿাইরে বসবাসকারীরা অভিবাসনের ক্ষেত্রে একই সুবিধা পাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সেখানে অভিবাসনের জন্য চাকরির প্রস্তাব থাকতে হবে। এছাড়া, জনসেবায় লোকবল ঘাটতি পূরণে বিশেষ ব্যবস্থায় অভিবাসী নেয়া হবে।
সরকারি ঋণ গ্রহণ বাড়বে: অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, তিনি দেশের অর্থনৈতিক বিধান নতুন করে লিখবেন। এর মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে দেশে ২ হাজার কোটি পাউন্ড বেশি অর্থব্যয় করতে পারবে সরকার। অবকাঠামোগত উন্নয়নে মোট অর্থনীতির ৩ শতাংশ ব্যয় হবে। বর্তমানে এই হার হচ্ছে ১.৮ শতাংশ। বাড়বে সরকারের ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা।
বাণিজ্য: জনসনের দল জানিয়েছে, তারা আগামী তিন বছরের মধ্যে বৃটেনের মোট বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে চায়। তারা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করার পরিকল্পনা করছে। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।