চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
অজু নামাজের চাবি। অজু ছাড়া নামাজ হয় না। তাই নামাজে দন্ডায়মান হওয়ার পূর্বে অজু করতে হয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।’ (সূরা মায়িদাহ:৬)। অজুর মধ্যে আল্লাহতায়ালা এতো নেয়ামত বরাদ্দ রেখে দিয়েছেন, যা শুনলে অনেকে হয়তো আর্শ্চান্বিত হয়ে যাবে। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূল (সা) বলেছেন,‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু।’(মুসনাদে আহমাদ-৩:৩৪০পৃ.)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূল (সা) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি অজু থাকা সত্ত্বেও নতুন অজু করে সে দশটি নেকী লাভ করে।’ (মু.হা. অজুর ফাজায়েল:২৫৩)।
অজুর বরকতে বান্দার অতীত জীবনের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হযরত আমর ইবনে আবাসা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি একদিন প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অজুর ফায়দা কী? তিনি বলেন, ‘যখন তুমি অজু করবে ও দুই হাতের কব্জি পরিস্কার করে ধৌত করবে, তখন গোনাহসমূহ আঙ্গুলের অগ্রভাগ ও নখ দিয়ে বের হয়ে যাবে। এরপর যখন তুমি কুলি করবে, নাকে পানি দিয়ে দু’নাকের ছিদ্র পরিস্কার করবে, মুখ ও হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে, তখন তুমি যেন তোমার গোনাহসমূহকে ধুয়ে পরিস্কার করে দিলে। এরপর যখন তুমি তোমার চেহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে জমিনে রাখবে, তখন তুমি এমনভাবে গোনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিলো।’ (নাসাঈ:১৪৭)।
অজুকারী ব্যক্তি হাশরের ময়দানে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হবেন। হাশরের ময়দানে উপস্থিত সকলে অজুকারী ব্যক্তির দিকে বারবার তাকাতে থাকবে। অজুকারী ব্যক্তির হাত-পা ও মুখমন্ডল চমকাতে থাকবে। হযরত নোয়াঈম মুজমির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ হোরায়রা (রা) এর সাথে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি অজু করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূল (সা) তে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল থাকবে। অতত্রব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা রাখে সে যেন তা করে নেয়।’ (বোখারী:১৩৮)।
অজুকারীদের অনেকে দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ পেয়েছেন। যেমনটি হযরত বেলাল (রা) পেয়েছিলেন। একবার রাসূল (সা) ফজরের নামাজের সময় হযরত বেলাল (রা) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে বেলাল! তুমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে আমল করেছ তার কথা আমাকে বল! কেননা জান্নাতে আমি তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। হযরত বেলাল (রা) বললেন, দিন বা রাত্রে যখনই আমি অজু করি তখনই আমি সামার্থ্য (তাহিয়্যাতুল অজু) অনুযায়ী নামাজ পড়ি। এ ছাড়া আর তেমন কিছুই করি না।’(বোখারি:১০৮৩)।
অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠকারী ব্যাক্তির জন্য আরো সু-সংবাদ রয়েছে। অজু শেষ করে যে কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্যে জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেয়া হয়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সকল নিয়ম কানুনসহ উত্তমরূপে অজু করবে। এরপর ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু’ পাঠ করবে, তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ ( মুসলিম-তিরমিযি ও মিশকাত,পৃ.নং ৩৯)। আল্লাহতায়ালা অজুর উপর আমল করার তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।