চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
রমজান মাস মুুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার অশেষ নেয়ামত রয়েছে। রমজানের শেষ দশকে রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর। তাই রমজান মাসের শেষ দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। এজন্য একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের রমজান মাসের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতে হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বারাকতময় মাস। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন।
এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানগুলোকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। (সুনানুন নাসায়ী : ২১০৬)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কদর রাতের সন্ধান পেতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ দশকে খুঁজে নেয়।’ (বুখারি : ১১৫৮)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি : ২০১৭)। উপোরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি যে, রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার সাহাবীরা এই সময়কে খুব গুরুত্ব দিতেন। রমজানের অন্যান্য সময়ে যেই আমলগুলো করতেন, শেষ দশকে এসে তার পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন, যা বছরের অন্য সময়ে করতেন না।’ (মুসলিম : ১১৭৫)। তিনি আরও বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইবাদতের জোর প্রস্তুতি নিতেন। নিজে রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে তুলতেন।’ (বুখারি : ২০২৪)।
রমজান মাসের শেষ দশকের রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতেফাক করতেন। ইতেকােেফ অভিধানিক অর্থ- অবস্থান করা, আবদ্ধ করা, আটকে রাখা। ইতেফাক হলো নিজেকে যাবতীয় পার্থিব বিষয়াবলী থেকে মুক্ত করে শুধুমাত্র মহান প্রভুর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি হাসিলের লক্ষ্যে নিজেকে কোনো নিদিষ্ট স্থানে আবদ্ধ করে রাখা। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর’। আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ‘ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর।’ (সুরা বাকারা : ১২৫)।
একইভাবে হাদিসে রয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আর বলতেন, তোমরা এ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি : ২০২০)। তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, তারপর তার স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি : ২০২৬)।
পুরুষদের জন্য ইতেকাফের সর্বোত্তম স্থান জামে মসজিদ এবং যেগুলোতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা হয় (পাঞ্জেগানা মসজিদ)।
মহিলারা নিজ নিজ ঘরের নির্জন স্থানে বা একটি কক্ষে ইতেকাফ করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ওফাতের বছরে বিশ দিন ইতেকাফ করেন।’ (বুখারি : ২০৪৪)। ইতিকাফে থাকা অবস্থায় ইতেকাফকারীর পানাহার, ওঠা-বসা, ঘুমানো, জেগে থাকা বরং প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়। আয়েশা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বললেন, যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া করব? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফু আন্নি। অর্থাৎ : হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাকারী, ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আমায় ক্ষমা করুন। (তিরমিজি : ৩৫১৩)।
তাই রমজানের শেষ দশকে আমাদের বেশি বেশি নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ পাঠ, আল্লাহর জিকির, দান-সদকা ও তওবা- ইস্তেগফার করা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।