পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
কাশ্মীরে সশস্ত্র পন্থার শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। এর আগে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল। পাকিস্তানের পতাকা উঠিয়ে ‘তেরি জান, মেরি জান/পাকিস্তান পাকিস্তান’ শ্লোগানও হয়েছে। এখনও মাঝেমধ্যে হয়। কিন্তু, সশস্ত্র পন্থা ছিল না। ১৯৫৩ সালে শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের পর তার দল ন্যাশনাল কনফারেন্সকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে শেখ-এর এক সাগরেদ মির্জা আফজাল বেগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গণভোটের দাবিতে পিলবিসাইট ফ্রন্ট। ১৯৬৪ সালে শেখকে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তান পাঠিয়েছিলেন নেহরু। উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে শেখের উদ্যোগে আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার একটা সমাধান হবে। কিন্তু, যখন শেখ পাকিস্তানে পেঁৗঁছালেন তখনই নেহরু মারা গেলেন। আলোচনা ভেস্তে গেল। এরপর থেকে শেখও গণভোটের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। এরই মধ্যে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলো ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে। তাসখন্দ ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধ থামল। আবদুল্লাহ তখনও আশা করেছিলেন গণভোট পাবেন। কিন্তু পাননি। বরং নিক্ষিপ্ত হয়েছেন জেলে।
১৯৭১ সালে শুরু হলো বাংলাদেশ যুদ্ধ। শেখ আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘১৯৭১-এ যুদ্ধের মাধ্যমে দুর্র্ভাগ্যজনকভাবে সকল উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেল’। শিমলায় চুক্তি হলো ১৯৭২-এর। তাতে বলা হলো, দুই দেশ তাদের মধ্যকার বিভেদগুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে ‘দ্বিপক্ষীয়ভাবে’ অথবা ‘দুই পক্ষের ঐক্যমতে অন্য কোনোভাবে সমাধান করবে। কিন্তু সমাধান হলো না। বরং, ভারতীয় রাজ্য হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরে ভোটের ঘোষণা দিলেন ইন্দিরা গান্ধী। শেখ আবদুল্লাহর দল তখনও নিষিদ্ধ। তাই তারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেনি। ইন্দরা গান্ধীর তত্ত¡াবধানে সরকার গঠন করল কংগ্রেস। আবদুল্লাহ দিল্লিকে জানালেন, ‘ভারতে যোগ দেওয়া নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই। আমি শুধু চেয়েছিলাম ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৭০ (স্বায়ত্তশাসন) তার মূল অবস্থায় বহাল থাকুক। ১৯৭৫ সালে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কাশ্মীর অ্যাকর্ড স্বাক্ষর করলেন। আবদুল্লাহ নতুন নির্বাচন চাইলেন। ইন্দিরা ছিলেন ‘অনাগ্রহী’ তিনি কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির মিটিংয়ে আবদুল্লাহকে টেকনোক্র্যাট হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বানালেন। আবদুল্লাহ বলছেন, ‘আমি সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু দ্রæতই আমাকে অনুতপ্ত হতে হয়েছিল। পরে ১৯৮২ সালে নির্বাচন হয় রাজ্যে। আবদুল্লাহ এবার বিজয়ী হন। তার ন্যাশনাল কনফারেন্স পুনরায় চালু হয়। বলা হয়ে থাকে কাশ্মীরের ইতিহাসে এই হচ্ছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ১৯৮৩ সারে আবদুল্লাহ মৃত্যু হলো। তার ছেলে ফারুক আবদুল্লাহ হন মুখ্যমন্ত্রী। মনে করা হচ্ছিল ভারতবিরোধিতা চুপসে গেছে। দিল্লির ইচ্ছায় চলছে সবই। আবদুল্লাহ পরিবারও দিল্লির অধীনে ভালভাবেই চালাচ্ছে কাশ্মীর। এরপরই হঠাৎ সব গোলমেলে হয়ে গেল। ঘরে ঘরে যুবকেরা তুলে নিল অস্ত্র।
শান্তি অধ্যয়নের প্রতিষ্ঠাতা ইয়োহান গালটুংসহ গবেষকরা কোনো সংঘাতের তিন ধরনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ১. মূল কারণ ( জড়ড়ঃ পধঁংব), ২. প্রভাবক কারণ (অপপবষবৎধঃরহম ঈধঁংব) ও ৩. বিস্ফোরক কারণ (ঞৎরমমবৎ ঈধঁংব)। যে কোনো সংঘাত নিরসনে এই কারণগুলো সুচিহ্নিত করা জরুরি। ব্রিটিশ ও মহারাজার ভূমিকা, পাক-ভারত দ্ব›দ্ব-যুদ্ধ এবং ১৯৮৭-এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অসচ্ছতা-এগুলো কাশ্মীর সমস্যার মূল কারণ। ক্রমে সাম্প্রদায়িকতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া, কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের আস্থার সংকট, পাকিস্তানাইজেশন, কাশ্মীরিদেরকে নিয়ন্ত্রণের ভারতীয় প্রচেষ্টা আর আইনের শাসন দিতে অসামর্থ্যতা-ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হওয়ার প্রভাবক কারণ। এসব কারণ ক্ষোভ বৃদ্ধি করেছে। সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য এগুলোর অবসান দরকার। কিন্তু, হাজার হাজার যুবকের হঠাৎ করে সশস্ত্রপন্থা গ্রহণের কারণ এগুলো নয়। এর বিস্ফোরক কারণটি হলো, ১৯৮৭ সালের নির্বাচন। ওই নির্বাচনটিতে ব্যাপকমাত্রায় কারচুপি হওয়ার পরই বিরোধী মহল ব্যালটের প্রতি আস্থা হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বুলেট আর বন্দুকের ছায়ায়। নির্বাচনটি সম্পর্কে কাশ্মীরি সাবেক জেলা জজ ও লেখক জিএন গওহর মন্তব্য করেছেন, ‘চরমতম জোচ্চুরি,’ যা ব্যাখ্যা করার জন্য ‘রিগিং শব্দটি খুবই সংকীর্ণ। ওই নির্বাচনে রাজিব গান্ধীর সঙ্গে ফারুক আবদুল্লাহর একটি ‘সমঝোতা’ হয়েছিল বলে জনগণ বিশ্বাস করে। তাতে ন্যাশনাল কনফারেন্সের বিরোধী সকল পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রণ্ট (এমইউএফ) নামে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিল। তারা ৭৫টি আসনের মধ্যে মাত্র পাঁচটি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। পরে, নির্বাচনে কারচুপি অভিযোগে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। এরপরই ইয়াসিন মালিক, মকবুল ভাইসহ চার-পাঁচজন যুব নেতা জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রণ্ট (জেকেএলএফ)-এর ব্যানারে সশস্ত্র পথে ছুটে যায়। জিএন গওহর লিখেছেন, ‘নির্বাচনটি কাশ্মীরিদের এমন একটা ধারণা দিয়েছিল যে শাসক নির্ধারণে তাদের কোনো অধিকার নেই। এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে যুবকরা সীমান্তের ওপারে ছুটে যাওয়া ছাড়া’ আর কোনো উপায় খুঁজে পায়নি। সশস্ত্র বিদ্রোহ তখন একটা ‘কালচার’ হয়ে দাঁড়ায়। ‘গানকালচার’। প্রতিবাদ ‘পাথর গ্রেনেড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়’। ‘কাংড়িগুলো (উষ্ণ কয়লাভর্তি মাটির পাত্র) মিসাইলে রূপ নেয়’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।