পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত ১০ বছরে দেশে ভিন্নমত ও ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার কারণে প্রায় ৩৫ লাখ আসামী, ১ লাখ ৪ হাজার ৮১৪টি রাজনৈতিক মামলা, ১ হাজার ৫২৬ জন নিহত এবং ৭৮১জন গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ আর কখনোই ছিলো না। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হয়ে গেলো, আগামী বছর আমরা ৫০ বছর পালন করতে যাচ্ছি। এখনো বাংলাদেশের মানুষকে, আমাদের সন্তানদেরকে তাদের পিতার জন্যে, আমাদের মাকে তার সন্তানের জন্যে কাঁদতে হচ্ছে। আজকে গোটা বাংলাদেশে এমন একটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, মানুষ তার কোনো অধিকারই পাচ্ছে না। এই সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা জোর করে নির্বাচনে সমস্ত ভোট নিয়ে গেছে এবং বেআইনিভাবে অবৈধভাবে তারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যেই তাদেরকে এই বেআইনি কাজগুলো করতে হচ্ছে। গতকাল (বুধবার) দুপুরে গুলশানে লেক সোরে বিএনপির উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে এক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের সন্ধান চেয়ে অশ্রæসজল কন্ঠে বক্তব্য রাখেন।
অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর অমর্ত্য সেনের বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, অর্মত্য সেন বলেছেন, যে কখনোই কোনো ডেভেলপমেন্ট সাসটেনেবল হবে না যদি সেখানে ডেমোক্রেসি না থাকে। বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই। এই সরকার মানুষকে বোকা বানিয়ে উন্নয়নে কথা বলে, উন্নয়নে যে একটা মিথ তৈরি করেছে, মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। শুধুমাত্র উন্নয়ন দিয়ে কখনো জনগণের সমস্যার সমাধান করা যায় না। সেই সঙ্গে যদি গণতন্ত্রই না থাকে, গণতন্ত্রের পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে সেটা কখনোই ফলোপ্রসূ বা সাসটেনেবল হতে পারে না। উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না যদি গণতন্ত্র না থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সরিয়ে ভিন্ন রিপোর্ট আদালতে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাঁর (খালেদা জিয়া) যে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে সেই মেডিকেল রিপোর্ট এখন পর্যন্ত আসেনি। আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি যে, বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তারা ইতোমধ্যে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন সেই রিপোর্টটিকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা খুব পরিস্কারভাবে লক্ষ্য করছি, অত্যন্ত সচেতনভাবে দেশনেত্রীকে বেআইনিভাবে কারাগারে আটক করে রাখার জন্য সরকার কাজ করছে এবং এভাবে তারা (সরকার) বড় রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
অনুষ্ঠানে গত ৩০ নভেম্বর বিএসএমএমইউ ভিসির গঠিত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টটি পড়ে শুনান মির্জা ফখরুল। যেখানে খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘ক্রিপল স্টেইজ’ উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। এই রিপোর্টটির পরে সুপ্রিম কোর্টই চেয়েছিলো যে, এই রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হোক। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা উপস্থিত করা হয়নি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তাকে মিথ্যা মামলায় বিনা কারণেই বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছে প্রায় ২০ মাস ধরে। তাকে কোনো জামিন দেয়া হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। সর্বশেষ যে পরিস্থিতি যে, এই ধরনের মামলার জন্যে যে সাজাটা হয়েছে সেই সাজার কারণে একই ধরনের মামলায় অন্য আসামীরা জামিন হয়ে গেছে, তারা জামিনে আছেন। কিন্তু বেগম জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। প্রতিবারই তাকে বিভিন্নভাবে সরকার তার জামিনকে বাঁধাগ্রস্থ করছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপির সম্পাদনায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা তথ্য সম্বলিত গ্রস্থ ‘এবসেন্স অব ডেমোক্রেসি এন্ড সিস্টেমেটিক হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস বাই স্টেট এ্যাপারেটাস’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব। পরে গ্রন্থের ওপর তথ্য চিত্র তুলে ধরেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ।
এরপর দলের মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এই গোল টেবিলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ১৫ টি দেশের কূটনৈতিকরা অংশ নেন।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং শ্যাম ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রফেসর মাহবুবউল্লাহ, এএইচএম মোফাজ্জল করীম, নূর খান, মাসুদ আজিজ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার শাহ ফয়সাল কাকর পাকিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিত রক্ষায় তার দেশের সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে বক্তব্যের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাশ্মির ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন। ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার তার বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় সংবিধান থেকে কাশ্মিরে বিশেষ সুবিধা তুলে নেয়ার পর সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং কাশ্মিরের জনগণের স্বাধীকার নিয়ে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থের লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে অভিহিত করে যে উক্তি করেছেন তার তুলে ধরেন।
গোল টেবিল আলোচনায় বিএনপির সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এনামুল হক চৌধুরী, প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রফেসর ওবায়দুল ইসলাম, জহিরউদ্দিন স্বপন, জেবা খান, তাবিথ আউয়াল, মীর হেলাল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনিসুর রহমান খোকন, শায়রুল কবির খান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল হাসান উপস্থিত ছিলেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।