নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের ইতিহাসে এমন সাফল্য কখনো তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। যা পেরেছে নেপালে এসে। এসএ গেমসের ১৩তম আসরে আরচ্যারি ডিসিপ্লিনের দশ ইভেন্টের সবগুলোতেই স্বর্ণ জিতে বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশের তীরন্দাজরা। এর ফলে দারুণ এক কীর্তি গড়ল লাল-সবুজের দেশ। গেমসের ৩৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশ কোনো ডিসিপ্লিনের সব ইভেন্টে সোনা জিতল। শুধু তাই নয়, তায়কোয়ান্ডো, কারাতে, ভারোত্তোলন, ফেন্সিং, আরচ্যারি ও নারী ক্রিকেটের পর এবার পুরুষ ক্রিকেটেও সেরা হয়ে এসএ গেমসে নিজেদের সর্বোচ্চ স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ড গড়ল লাল-সবুজরা। এবারের এসএ গেমসে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বর্ণ জয়ের সংখ্যা ছিল ৭। পরের দিন আরচ্যারির ৬ এবং নারী ক্রিকেট থেকে ১ সোনা জিতলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪’তে। সোমবার দিনের প্রথমভাগে আরচ্যারি আরো চার ইভেন্টে সেরা হলে নেপাল এসএ গেমসে বাংলাদেশ ১৮ সোনা জিতে নিজেদের পূর্বের সেরা সাফল্যকে স্পর্শ করে। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে লাল-সবুজদের অর্জন ছিল ১৮ স্বর্ণপদক। মাঝে ২০১৬ গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে মাত্র চারটি সোনা জিতলেও এবার এর পাঁচগুণ জেতার লক্ষ্য নিয়েই নেপালে আসে বাংলাদেশ দল। সোমবার দিনশেষে পুরুষ ক্রিকেটে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলে তাদের লক্ষ্যপূরণ হয়। এদিন আরচ্যারি ও ক্রিকেটে সাফল্য পেয়ে লাল-সবুজরা জিতে নেয় ১৯ সোনা।
আরচ্যারির দশ ইভেন্টের মধ্যে রোববার ছয়টিতে সেরা হলে কাল পোখরায় বাকি চার স্বর্ণের লড়াইয়ে নামে বাংলাদেশ। চারটিতে বাজিমাত। দিনের শুরুতে পোখরা রঙ্গশালা আরচ্যারি রেঞ্জে কম্পাউন্ড নারী এককে সোনার লড়াইয়ে নামেন বাংলাদেশের সোমা বিশ্বাস। তিনি অবিশ্বাস্য পারফরমেন্স দেখিয়ে ১৪২-১৩৪ পয়েন্টে শ্রীলঙ্কার অনুরাধা করুনারতেœকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেন। তার দেখানো পথেই হাঁটেন সোহেল রানা। তিনি কম্পাউন্ড পুরুষ এককে ভুটানের তাদিন দর্জিকে ১ পয়েন্টে (১৩৭-১৩৬) হারিয়ে দিনের দ্বিতীয় সোনা তুলে নেন।
এরপর রিকার্ভ নারী এককে ইতি খাতুন ভুটানের সোনাম দেমাকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারিয়ে আরচ্যারি থেকে বাংলাদেশকে নবম সোনা উপহার দেন। আর রিকার্ভ পুরুষ এককের ফাইনালে রোমান সানা ৭-১ সেট পয়েন্টে ভুটানের কিনলে শেরিংকে হারিয়ে জয় করেন আরচ্যারির দশম এবং দেশের পক্ষে গেমসের ১৮তম সোনা।
এমন সেরা অর্জনে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপল। তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালে সোমা যখন সোনা জিতল, তখন আমরা দেশের একমাত্র ফেডারেশন হিসেবে এসএ গেমসে ৭ সোনা জয়ের রেকর্ড গড়ি। আমাদের আগে সাঁতার থেকে সর্বোচ্চ ৬টি সোনা এসেছিল। এরপর সব মিলিয়ে ১০টি স্বর্ণ জিতে দেশের একমাত্র ফেডারেশন হিসেবে নতুন একটি রেকর্ড গড়ি। যদিও এটা বাংলাদেশে নতুন, কিন্তু ভারতের এমন রেকর্ড অনেক আছে।’
এর আগে রোববার আরচ্যারির রিকার্ভ পুরুষ দলগত ইভেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশের রোমান সানা, তামিমুল ইসলাম ও হাকিম আহমেদ রুবেলকে নিয়ে গড়া দল ৫-৩ সেট পয়েন্টে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতে। এরপর রিকার্ভ নারী দলগত (ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায়) ইভেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশ ৬-০ সেট পয়েন্টে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয় সোনা জিতে নেয়। এদিন মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে রিকার্ভ মিশ্র দলগতে রোমান সানা ও ইতি খাতুন ৬-২ সেট পয়েন্টে ভুটানকে হারিয়ে তৃতীয় সোনা এনে দেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হয় কম্পাউন্ড ইভেন্ট। এখানে কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত ইভেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশের সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ২২৫ স্কোর করে ভুটানকে হারিয়ে চতুর্থ সোনা ঝুলিতে পুড়েন। কম্পাউন্ড নারী দলগতের ফাইনালে বাংলাদেশের সুস্মিতা বনিক, সোমা বিশ্বাস ও শ্যামলী রায় ২২৬ স্কোর করে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আরচ্যারি থেকে দেশ পঞ্চম সোনা উপহার দেন। আর বিকেলে কম্পাউন্ড মিশ্র দলগতে বাংলাদেশের সোহেল রানা ও সুস্মিতা বনিক ১৪৮ স্কোর করে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে ষষ্ঠ স্বর্ণ জয় করে দিন পার করেন।
এদিকে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে সোমবার অনুষ্ঠিত পুরুষ ক্রিকেটের ফাইনালে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সোনা জিতে নেয়। টসে হেরে শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২২ রানে অলআউট হয়। জবাবে বাংলাদেশ ১৮.১ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৫ রান তুলে স্বর্ণ জিতে নেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।