মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ভারতের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কীভাবে গভীর ধর্মীয় বিভাজন মুছে পুনর্মিলন এবং সংযোগ করা যায়। কেবলমাত্র দেশভাগের ক্ষত নিরাময়ের জন্য নয় বরং একটি নতুন গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করাই ছিল তখন মূল উদ্দেশ্য।
দেশটির প্রতিষ্ঠাতাগণ একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং বহুসংস্কৃতি প্রজাতন্ত্রের কল্পনা করেছিলেন, যা ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের থাকা নতুন ও দরিদ্র একটি জাতির জন্য একটি অনন্য পরীক্ষা ছিল। ১৯৪৭-এর পরে ভারতের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রোফাইল এটিকে তার অনেক অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সমকালীনদের তুলনায় অনেক বেশি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্ব দেয়, সীমিত অর্থনৈতিক শক্তি ও ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা সত্ত্বেও এটি বিশ্বে সম্মান অর্জন করতে পেরেছে।
তবে সাত দশক পরে, মনে হচ্ছে যে ভারত সম্প্রীতি এবং ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ধারণাটি ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে, সাংবিধানিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র হিসাবে দেশটি যে সমস্ত নৈতিক অর্জন করেছিল তা ভেঙ্গে পরার মুখে।
সংসদে সাম্প্রতিক ভাষণে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ পাস করবে, যা হিন্দু, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান, পার্সী এবং বৌদ্ধ শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেবে যারা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে অবৈধভাবে এসেছেন। এই সংশোধনী বিলে মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে যা ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই আইনে নাগরিকত্বের সাথে ধর্মকে সম্পৃক্ত করার অনুমতি দেয় না। সুতরাং আধুনিক ভারতে এই প্রথমবারের মতো ধর্ম নাগরিকত্বের প্রধান মানদ-ে পরিণত হচ্ছে। একই বক্তৃতায় শাহ ঘোষণা করেছিলেন যে ভারত সারা দেশে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধক (এনআরসি) বাস্তবায়ন করবে।
এনআরসি-এর ধারণা ছিল, ভারতের সত্যিকারের নাগরিকদের চিহ্নিত করা। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রাজ্য আসামে এর প্রয়োগ করা হয়েছে। যেখানে দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল যে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে নির্বাসন দেওয়া উচিত। রাজ্যটি ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলনও দেখেছিল যা ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে নাগরিকদের একটি জাতীয় নিবন্ধ প্রস্তুত করা হবে এবং যারা ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ পরে ভারতে প্রবেশ করেছেন তাদের নির্বাসন দেওয়া হবে।
তবে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ না হওয়া পর্যন্ত এনআরসি-র ধারণা তেমন অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের জন্য আদালত একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন। এর পরে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল এবং দু’বছর পরে আসামে এর প্রয়োগ করে।
এনআরসি মূলত অবৈধ অভিবাসীদের ধর্ম নির্বিশেষে চিহ্নিত করার জন্যই ছিল। তবে, বিজেপি, হিন্দুত্ববাদকে মূল নির্বাচনী অস্ত্র হিসেবে অনুশীলন করে। তারা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যত সম্ভব মুসলমানকে এনআরসি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আসামে চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে, বিজেপি নাগরিকত্ব আইন সংশোধন এবং রাষ্ট্রবিহীন হিন্দুদের ভারতের নাগরিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত ৩১ আগস্ট, আসামের এনআরসি প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে ১৯ লাখ মানুষকে রাষ্ট্রহীন বলে ঘোষণা করা হয়, সংখ্যাটি যা অনুমান করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক কম ছিল।
কয়েক বছর ধরে, জাতীয় ও আসামের রাজনীতিতে একটি বিভাজনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সংক্রামিত হয়েছে যে আসামে ৬০ লাখের বেশি অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছে যা খুব শিগগিরই রাজ্যটি দখল করে ফেলবে। এনআরসি এই প্রচারে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু বিজেপি বড় ধাক্কা খায় যখন দেখা যায় এনআরসির বাইরে থাকা ১৯ লাখের বেশিরভাগই হিন্দু ছিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রক্রিয়াতে জড়িত মানবিক আবেগ এবং বিশাল আর্থিক ব্যয় জেনেও বিজেপি কেন ভারতজুড়ে এনআরসি প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে এত আগ্রহী? ৩ কোটি লোকের একটি ছোট রাজ্য আসামে, এনআরসি প্রস্তুত করতে ১০ মিলিয়ন ডলার বা ৮৪ কোটির টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে, সুতরাং যখন পুরো ভারত জুড়ে এটি পরিচালিত হলে কত টাকা খরচ হবে সেটা এখান থেকেই বোঝা যায়। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।