চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুসলমান মাত্রই আজানের ধ্বনি শুনে আবেগাপ্লুত হন, আমোদিত হন, নেচে উঠেন ভেতরে-বাহিরে। আজান আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও তাওহিদের মহান আওয়াজ। মসজিদের মিনার থেকে মুয়াজ্জিন দৈনিক পাঁচবার আজানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহবান জানায়। উচ্চ আওয়াজে প্রচারিত আল্লাহর একত্ববাদের এই ঘোষণার মাধ্যমে মূলত বান্দা মহান প্রভুর বশ্যতার ঘোষণা দেয়। অবনত চিত্তে স্বীকার করে আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। মনের গভীর থেকে নবী (সা.)-এর নবুওয়ত-রিসালাতের স্বাক্ষ্য দেয় পরম বিশ্বাসের সঙ্গে।
রাসুল (সা.) এর নবুয়াতী মিশনের প্রথম কর্মসূচীই হলো আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে বস্ত্র মুড়ি দিয়ে শয়নকারী! ওঠো এবং সাবধান করো। তোমার রবের বড়ত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো।’ (সূরা মুদ্দাসসির : ১-৩।) আজানের প্রথম বাক্য ‘আল্লাহু আকবার-আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’। এর মানে হলো, আল্লাহ তায়ালা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ-উপাস্য নেই। সৃষ্টিলোাকের রাজত্ব ও সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁর। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি বড়ই মহান ও শ্রেষ্ঠ যাঁর হাতে রয়েছে সৃষ্টিলোকের রাজত্ব। (সূরা মুলক : ১।) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সব ধরনের শিরক, বিদয়াত এবং তাগুতী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তায়ালাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের মালিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চার চার বার উচ্চ আওয়াজে আল্লাহু আকবার বলে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়- মানুষের মুক্তি-কল্যাণ, ইহলোক ও পরকালের সফলতার জন্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে।
আজানের দ্বিতীয় ঘোষণা হলো, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এর মানে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক-অংশীদার নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। (সূরা ইখলাস : ১।) ‘লোকমান তাঁর সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘হে আমার পুত্র! আল্লহর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় অন্যায়। (সূরা লোকমান : ১৩।) এরপর ঘোষণা হয়, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ- অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। মহান আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে জীবন পরিচালনায় অনুকরনীয়-অনুসরনীয় আদর্শ হিসেবে মেনে নেওয়ার ঘোষণা এটি। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.) এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহযাব : ২১।)
এরপর মুয়াজ্জিন ঘোষণা করে, হাইয়া আলাস সালাহ। অর্থাৎ নামাজের জন্য এসো। তোমার বিবর্ণ জীবনকে বর্ণিল করবে নামাজ। নামাজের মাধ্যমে প্রভুর কাছে হৃদয়ের সুখ-দুঃখ বলবে আর প্রভু তোমকে প্রশান্তিময় জীবন দান করবে। আল্লাহ তায়ালার দরবারে সেজদা করে এক আল্লাহর আনুগত্যের প্রমাণ দিতে সবাইকে পর পর দুইবার আহ্বান জানানো হয় আজানে। মুওয়াজ্জিন বলে, হাইয়া আলাল ফালাহ- এসো কল্যাণের জন্য, সফলতার জন্য, শান্তির জন্য। অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির খোঁজে হয়রান তুমি। হে মানুষ! এসো! নামাজের দিকে এসো। জীবন-মরণের কল্যাণ এই নামাজে নিহিত। মুক্তি ও কল্যাণের পিপাসায় যারা তৃষ্ণার্ত তাদেরকে এ আহ্বানে সাড়া দিতেই হবে। নামাজের জায়নামাজে দাঁড়াতেই হবে। এছাড়া ভিন্ন পথে শান্তি সমৃদ্ধি, সুখ, প্রেম মিলবে না।
আজানের শেষ বাক্যে আবার ‘আল্লাহু আকবার’ দু’বার উচ্চারণ করে মানুষকে সাবধান করার পাশাপাশি মনে করিয়ে দেওয়া হয়- আল্লাহ এক, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। এ বিরাট ঘোষণা যেন মানুষের হৃদয়মূলে গেঁথে যায় তাই সব শেষে বলা হয়, ‘লা ইলাহা ইল্লাহ-আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই’। ইবাদতের একমাত্র মালিক তিনি। সৃষ্টি তাঁর, আইনও চলবে তাঁর।
আজান মূলতঃ নির্ভেজাল তাওহিদ ও রিসালাতের ঘোষণা। আজানের ভেতর আল্লাহর পরিচয় নিহিত। যুগ যুগ ধরে ইসলামের নির্যাস ও মূলবার্তা আজানের মাধ্যমেই ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু কোরআন ভোলা, আত্মভোলা মানুষ এক সময় আজানের প্রাণ এবং প্রেম উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়। সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ ‘কালো চোখের কাসিদা’য় লেখেন- ‘তুমি কি শুনতে পাও অন্য এক মিনারের আজান?/কলবের ভিতর থেকে ডাক দেয়, নিদ্রা নয়, নিদ্রা নয়, প্রেম।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।