পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘ ৬৬৫দিন ধরে কারাবন্দী রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রধানকে মুক্ত করতে আইনি এবং রাজপথের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন বিএনপির আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা। এতো দীর্ঘ সময়েই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তার আগে আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁকে মুক্ত করতে বিএনপির দৃষ্টি এখন উচ্চ আদালতের দিকে।
আজ বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের ওপর শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য্য করেছে। একই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনও জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাই বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকদের চোখ এখন আদালতের দিকে। তারা আদালত থেকে সুসংবাদ শোনার অপেক্ষায় রয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির নীতিনির্ধারক ও আইনজীবীদের আশা, শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন খালেদা জিয়া। একই বিবেচনায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন পাবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। নতুন করে কোনো মামলা না হলে তাঁর মুক্তিতে কোনো বাধাও থাকবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি-উচ্চ আদালত থেকে দেশনেত্রী ন্যায়বিচার পাবেন। বেগম খালেদা জিয়া দেশের সিনিয়র সিটিজেন, চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলীয় নেতা ও দেশের জনপ্রিয় শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং গুরুতর অসুস্থ, তাই তাঁর জামিন পাওয়া ন্যায়সঙ্গত অধিকার। ইতোপূর্বে এধরণের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অনেকেই জামিন পেয়েছেন, সেটির অসংখ্য নজীরও রয়েছে। গোটাজাতি দেশনেত্রীর জামিনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে রায়ে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত এলে কেন্দ্র থেকে কর্মসূচিও প্রত্যাশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, রায় দেখে কর্মসূচি নির্ধারণ করবে বিএনপি। খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে আজ রাতেই কিংবা আগামীকাল শুক্রবার পরবর্তী করণীয় নিয়ে বৈঠকে বসবেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, আদালত আজ জামিনের ওপর শুনানি শেষে যদি অন্য কোনোদিন আদেশের দিন ধার্য্য করেন, তাহলে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি। তবে আজ খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিনে আদালতের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। জামিনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করবেন নেতাকর্মীরা। গত ২৮ নভেম্বর শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা স্বাস্থ্যাগত ও মানবিক কারণে তার জামিন চান। আদালত ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডকে স্বাস্থ্যগত রিপোর্ট জমা দিতে আদেশ দেয় এবং রায়ের দিন ধার্য্য করা হয়।
যদিও গতকাল বুধবার বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট এখনো (গতকাল রাত পর্যন্ত) না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার তা আদালতে দাখিল করা যাচ্ছে না।
বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সঠিক রিপোর্ট দিতে বিএসএমএমইউ চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ৫ ডিসেম্বর রিপোর্ট চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। আমরা সারা বাংলাদেশের মানুষ এই প্রত্যাশা করি পিজির (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা যারা মেডিকেল বোর্ডের দায়িত্বে আছেন তারা সত্য কথাটা বলবেন। আমরা অন্য কোনো কিছু চাই না।
বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট অবিকৃত ও অপরিবর্তিত অবস্থায় কোর্টে পেশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আগামী ৫ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হবে। আমরা চাই, মেডিকেল রিপোর্ট যে অবস্থায় আছে- সেই অবস্থায়, অর্থ্যাৎ অবিকৃত ও অপরিবর্তিত অবস্থায় কোর্টে পেশ করা হোক। কোন রকম পরিবর্তন যেন না করা হয়। আর সেই রিপোর্টে বের হয়ে আসবে বেগম জিয়া কেমন আছেন এবং কি করতে হবে।
জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা। এর ৩৫টিতে তিনি জামিনে রয়েছেন। শুধু দুটি মামলায় জামিনের অপেক্ষায় বিএনপি। তা হলো, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা। বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বেগম জিয়ার জামিনের জন্য ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা অপেক্ষায় থাকবেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, মানবিক কারণেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে জামিন দেবে বলে আমরা আশাবাদী। এ মামলায় কোনো সাক্ষী, তথ্য বা স্বাক্ষর কিংবা বেগম জিয়ার কোনো ভূমিকা নেই। তার পরও আমরা ওদিকে না গিয়ে শুধু মানবিক কারণে তাঁর জামিন চেয়েছি। আশা করছি, সর্বোচ্চ আদালত জামিন দেবে। যদি না দেয় তাহলে বুঝতে হবে, সরকারের প্রভাব বা রাজনৈতিক কারণে তাঁর মুক্তি হচ্ছে না।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিষয়টি এক নম্বর এজেন্ডা হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে এবার নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে তার মুক্তিতে আন্দোলনের পথেই হাঁটবেন তারা। সেক্ষেত্রে দেশব্যাপী বিক্ষোভসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে আন্দোলনকে বেগবান করা হবে। ডিসেম্বরজুড়েই থাকবে রাজপথের আন্দোলনের কর্মসূচি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ডিসেম্বরের শেষদিকে ঢাকায় মহাসমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। সেখান থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে, এমনকি ওই মহাসমাবেশ থেকে একদফার কর্মসূচির ডাকও দেওয়া হতে পারে। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দিতে দীর্ঘদিন ধরে দলের হাইকমান্ডের ওপর তৃণমূলের চাপ রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতারা হরতাল-অবরোধের পরামর্শও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বেগম খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন। রায় দেখে আমরা আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। দলটির রুহুল কবির রিজভী বলেন, আইনি প্রক্রিয়া দেখে তারপর আমাদের কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দু’টি জায়গা আছে। একটা সংসদ আর একটা রাজপথ। যখন দেখবো গণতন্ত্রের স্পেস সংকুচিত, তখন রাজপথে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। আর গণতন্ত্রের মুক্তির একটি অন্যতম শর্ত হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিনে আদালতের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক জনসমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির নীতি-নির্ধারকদের। দল সমর্থিত সব আইনজীবীকেও এদিন হাইকোর্টে যেতে বলা হয়েছে। রাজধানীর পাশাপাশি বাইরে থেকেও বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত হতে পারেন। দলের সমর্থক যেসব আইনজীবী নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন না, তারাও আদালতে যাবেন। আদালতের বাইরেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় ধরণের শোডাউন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের আজ আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে- সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।