Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐতিহাসিক গ্যাস পাইপলাইনে সংযুক্ত হলো চীন-রাশিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:৫৮ পিএম

ঐতিহাসিকভাবে সংযুক্ত হলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তারা একটি ‘জায়ান্ট গ্যাস পাইপলাইনের’ মাধ্যমে দুই দেশকে প্রথমবারের মতো সংযুক্ত করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ পাইপলাইন এটাই। দৈর্ঘ্য চার হাজার কিলোমিটার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে চীনে যাবে গ্যাস। এমন উদ্যোগকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন পুতিন। এই দুই নেতা তিনটি বড় প্রকল্প স্বাক্ষর করেছেন। তার মধ্যে গ্যাস পাইপলাইন অন্যতম। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস রপ্তানিকারক হিসেবে মস্কো তার ভূমিকাকে সুদৃঢ় করছে। ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে পুতিন-জিনপিং আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন ওই গ্যাস পাইপলাইন।

এ সময় তারা সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে এই পাইপলাইনকে ‘পাওয়ার অব সাইবেরিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ভøাদিমির পুতিন বলেন, এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সত্যিকার অর্থে এটি বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনাই শুধু নয়। একই সঙ্গে আমাদের মধ্যে রাশিয়া ও চীনের জন্য এটা প্রথম উদ্যোগ। শি জিনপিং বলেন, এই প্রকল্প সহযোগিতার মডেল হিসেবে কাজ করবে। তিনি আরো বলেন, চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কারণ, এ প্রকল্পের জন্য যারা কাজ করেছেন তারা খুব কঠোর শ্রম দিয়েছেন। এ সময় ভিডিওতে পাইপলাইন দেখানো হয়, যা সাইবেরিয়ার দুর্গম এলাকা দিয়ে চীন সীমান্তে প্রবেশ করেছে। রাশিয়ার গ্যাস জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত গ্যাজপ্রোম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেক্সি মিলার বক্তব্য রাখেন আমুর অঞ্চল থেকে। এ সময় শ্রমিকরা হর্ষধ্বনি দিয়ে, গান গেয়ে আনন্দ করেন।
এই গ্যাসপাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য ৩০০০ কিলোমিটার। ২০২৫ সালে পুরোদমে সচল হবে এই লাইন। তখন এর মধ্য দিয়ে বছরে ৩৮০০ ঘনমিটার গ্যাস চীনকে সরবরাহ করা হবে রাশিয়া থেকে। ২০১৪ সালে ৪০০০০ কোটি ডলারের এই গ্যাসপাইপলাইনের চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়া ও চীন। এর মেয়াদ ৩০ বছর। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় রাশিয়া। তাদের সেই উদ্যোগের অংশ এই পাইপলাইন। একই সঙ্গে পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে এ দুটি দেশেরই সম্পর্কে শীতলতা আছে। সেক্ষেত্রে তারা একসঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করার মধ্য দিয়ে একটি নতুন শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
গ্যাসপ্রোম বলেছে, এই পাইপলাইন অতিক্রম করেছে জলাভূমি, পাহাড়ি এলাকা, পাথরময় এলাকার মধ্য দিয়ে। অনেক স্থানে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া এমন এলাকার ভিতর দিয়ে অতিক্রম করেছে এই লাইন। যে রুটে এই পাইপলাইন গেছে সেখানে ইয়াকুতিয়াতে তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়ামের নিচে। অন্যদিকে রাশিয়ার একেবারে পূর্বদিকে আমুর অঞ্চলের তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। দুই দেশের মধ্যে প্রথম সড়ক ব্রিজও নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হয়ে তারা আরো কাছাকাছি এসেছে। এই সড়ক সেতু আগামী বছর উন্মুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সেতু রাশিয়ার বøাগোভেশচেঙ্ক শহরকে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় হেইহি শহরকে সংযুক্ত করবে।
৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের এই গ্যাস বিনিময় চুক্তি ৩০ বছর টাইমলাইনে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং গ্যাস উৎপাদনে ব্যয় হবে ৬.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া ২০২০ সালের মধ্যে চীনে ৪.৬ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করবে। ২০২৫ সালে যখন পাইপলাইটি চালু হবে তখন গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৮ বিলিয়ন ঘনমিটারে।
ইউরোপে এখনও মূল গ্যাস সরবরাহকারী মস্কো। শিগগিরই তারা আরো দুটি পাইপলাইন চালু করার পরিকল্পনা করছে। ইউক্রেন হয়ে এই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস চলে যাবে ইউরোপে। ওই দুটি পাইপলাইন হলো তুর্কস্ট্রিম এবং নর্ড স্ট্রিম ২। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই তিনটি প্রকল্প রাশিয়ার অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সুবিধায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। তারা এরই মধ্যে ইউরোপের বাজারের মাধ্যমে পশ্চিমাদের কাছে পণ্য সরবরাহ দিচ্ছে। অন্যদিকে পূর্বে চীনের কাছে তাদের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাপান টাইমস জানিয়েছে, খুব শিগগিরই আরও কয়েকটি গ্যাস পাইপলাইন উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুতিন। এসব পাইপলাইনের মাধ্যমে ঘরের কাছের ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। মাসখানেক পরই ২০২০-এর জানুয়ারিতেই তুরস্কে গ্যাস সরবরাহের জন্য টার্কস্ট্রিম নামে একটি পাইপলাইন উদ্বোধন করবেন পুতিন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। এছাড়া জার্মানিতে সরবরাহের জন্য ‘নর্ড স্ট্রিম’ নামের আরও একটি পাইপলাইন চালু হবে। ২০২০ সালের মধ্যেই এতে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা করছে উভয়পক্ষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের তুরস্ক ও জার্মানি এবং এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে রাশিয়ার এই তিনটি বড় প্রকল্প তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধা বয়ে আনবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ