পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কটি দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মহাসড়কগুলোর একটি। রাজধানীর সাথে উত্তরবঙ্গের প্রায় সবগুলো জেলার যোগাযোগ এই মহাসড়ক দিয়ে। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে যাতায়াত সহজ করার লক্ষ্যে উক্ত সড়কে বাসের জন্য পৃথক লেন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে প্রকল্প ব্যয় দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত মহাসড়কটি এখন জনদুর্ভেগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কাজের দীর্ঘসুত্রিতার কারণে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশের সকল প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমান আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে তারা দাবি করছে। ধুলাবালি ও যানজটের ফলে নানাবিধ রোগব্যাধির শিকার হচ্ছেন উক্ত সড়কে যাতায়াতকারী জনসাধারণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ মহাসড়কে যানজট যেন ফুরায় না। আধাঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে এক-দুই ঘণ্টা। কখনো তিন-চার ঘণ্টাও লেগে যায়। সময় অপচয়ের সঙ্গে ময়লা আবর্জনা আর ধুলাবালিতে সয়লাব সড়কের উভয়দিক। যানজটের কবলে পড়ে দূষিত পরিবেশে পথিমধ্যেই অস্বস্তিতে ভুগছেন যাত্রীরা। কেউ কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। আর শীত আসতে না আসতে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে ভুগছেন স্থানীয়রা। মহাসড়কের কোথাও মাঝখানে খালি রেখে দুদিকে সরু রাস্তা করে বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই বিকল্প রাস্তাও খানাখন্দে ভরা। বিকল্প রাস্তার উপরেই রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা অথবা পরিত্যক্ত মালামাল। কোথাওবা রাস্তার মধ্যেই তৈরী করা হয়েছে ড্রেন। সব মিলে দূষিত পরিবেশ আর অব্যবস্থাপনা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিআরটির এই উন্নয়ন অনেকটা গলার ফাঁসের মতো। আব্দুস সালাম নামে টঙ্গীর এক ব্যবসায়ী বলেন, ধুলোবালি আর যানজটের যন্ত্রণায় বহুদিন ধরেই আমরা অতিষ্ঠ। উন্নয়নের নামে এই যন্ত্রণা আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। রাস্তার পাশেই দোকান বা মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা হয় না বললেই চলে। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ দিনে এক বেলা দোকার খোলেন পেটের তাগিদে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআরটি ও চার লেন প্রকল্পের কাজ দেরিতে শুরু হয়ে এখন যেন শেষ হতেই চাইছে না। এ ছাড়া টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত অংশ এবং টঙ্গী-ঘোড়াশাল-নরসিংদী আঞ্চলিক সড়ক, মাস্টারবাড়ী-মির্জাপুর সড়ক, বাংলাবাজার সড়ক, শ্রীপুরের রাজাবাড়ী-লোহাগাছিয়া-গাজীপুর সড়ক ও কাপাসিয়া-কালীগঞ্জ, মাওনা-ফুলবাড়িয়া- কালিয়াকৈর-ধামরাই সড়কের অবস্থাও ভাল নয়। এতে মহাসড়ক থেকে ছোট সড়ক-সবখানে ভোগান্তি ছড়িয়েছে।
এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়ও। শুরুতে ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছিল প্রকল্পের মোট ব্যয়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে আরও ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালে শেষ করার কথা ছিল। এরপর প্রকল্পের ব্যয় আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়। তবে এই সময়েও হচ্ছে না প্রকল্প বাস্তবায়ন। এতে আবারও ব্যয় আর সময় দুটোই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিআরটি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয় ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর। এরপর বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে বাসের জন্য বিশেষায়িত লেনের নকশা ও দরপত্র আহŸানেই পেরিয়ে যায় পাঁচ বছর। ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিআরটি লেন নির্মাণ ও উন্নয়নকাজ।
শুরু থেকেই ধীরগতি, তার ওপর দফায় দফায় নানা কারণে কাজ বন্ধ থাকায় পিছিয়ে পড়েছে প্রকল্পটি। গত সাড়ে ছয় বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৩ শতাংশ। শুরুতে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। তবে ধীরগতির কারণে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নেয়া হয়। পরে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেছেন ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কিন্তু বাস্তবে ২০২১ সালেও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কিনা তারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
প্রকল্পটি অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগ ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে এক বছর সময় চলে যায়। বিআরটির নকশা তৈরি ও সেটি চূড়ান্ত করতে লাগে আরো দুই বছর। বিভিন্ন প্যাকেজের দরপত্র আহŸান, প্রণয়ন ও ঠিকাদার বাছাই করতে ব্যয় হয় আরো এক বছর। প্রায় পাঁচ বছর পর প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হয়েছে। এর পরও নানা সময়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিআরটি গাজীপুর-বিমানবন্দর প্রকল্পে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রতি ছয় মাস পর ‘সোস্যাল মনিটরিং রিপোর্ট’ প্রকাশ করে আসছে। তাদের সর্বশেষ রিপোর্ট মোতাবেক গত জুন পর্যন্ত মাত্র ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি উড়াল সড়ক ও একটি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে। এর কোনোটিরই কাজ শতাংশের হিসাবে দুই অংকে পৌঁছতে পারেনি। গাজীপুর ও বিমানবন্দরে দুটি টার্মিনাল স্টেশন নির্মাণের কথা থাকলেও এখনো সেসব কাজ শুরুই করতে পারেনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এখনো শূন্যের ঘরেই আটকে আছে বাস স্টেশন ও পথচারী পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজের অগ্রগতি।
প্রকল্পের কাজে ধীরগতি সম্পর্কে জানতে প্রকল্প কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলি পিডি (সংযুক্ত) মোঃ জিয়াউদ্দিন জানান, এপর্যন্ত মোট কাজের ২৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে বাস ক্রয় ছাড়া যদি শুধুমাত্র ভৌত নির্মানের হিসাবে ৩৭ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজের অব্যবস্থাপনার ফলে মহাসড়কে ব্যাপক ধুলাবালি ও যানজটে জনদুর্ভোগের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অব্যস্থাপনার বিষয়টি আমি স্বীকার করবো না। কারণ আমরা অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করছি। এখানে ইচ্ছা করলেই রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে কাজ করা যাচ্ছে না। রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি, গ্যাস লাইন, অপটিক্যাল ফাইবার লাইনসহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকল্পের কাজ কাংখিত অগ্রগতি হয়নি। তবে এখন মূল সমস্যাগুলো দূর হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিআরটি টঙ্গী কলেজ গেট থেকে বোর্ড বাজার পর্য়ন্ত নির্মাণ ও পরিচালনায় নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন কায়সার হামিদ। সড়কে মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালির বিয়য়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা ঠিকাদারকে নিয়মিত পানি ছিটানোর জন্য তাগাদা দিচ্ছি। রাস্তায় জমে থাকা ধুলাবালি সরানোর জন্যও চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর সড়কে নির্মিতব্য বিশেষায়িত এই বিআরটি লেন দিয়ে চলবে শতাধিক আর্টিকুলেটেড বাস। বলা হচ্ছে, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দরে আসতে একটি বাসের সময় লাগবে মাত্র ২০/২৫ মিনিট। বাসগুলো পরিচালিত হবে একটি সরকারি কোম্পানির অধীনে। এজন্য ঢাকা ব্যাস র্যাপিড ট্রানজিট নামের একটি কোম্পানি গঠন করেছে সরকার। প্রণয়ন করা হয়েছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) আইন ২০১৬। আইন অনুযায়ী, শুধু কোম্পানির বাসগুলোই বিশেষায়িত লেনটি দিয়ে চলতে পারবে। কোনো ব্যক্তিগত যানবাহন বিআরটি লেনে প্রবেশ করলে গুনতে হবে মোটা অংকের জরিমানা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।