নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ভারত সফরে দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ফল হয়েছে তিন দিনে। সফরকারীরা দেখাতে পারেনি চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা, লড়াইয়ের মানসিকতা। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সিরিজটা ভীষণ কঠিন কেটেছে মুমিনুলের। নিজের ব্যাটে নেই রান। দল দুই ম্যাচেই হেরেছে বাজেভাবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শুরুটা হয়েছে দুঃস্বপ্নের মতো। মুমিনুলের কোনো সন্দেহ নেই, ঘুরে দাঁড়াবে দল। তবে পথে ফিরতে সময় চাইলেন ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এই ব্যাটসম্যান। আর কতটা সময় চায় বাংলাদেশ? প্রতিটি সিরিজেই ভরাডুবি, হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। ওয়ানডের লড়াকু মনোভাব কর্পূরের মতো উবে যায় সাদা পোষাকে এলেই। বিদেশের মাটিতে টানা চারটি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হার (দ.আফ্রিকা, উইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও ভারত), টেস্টে বাংলাদেশের করুণ চিত্রই তুলে ধরেছে বিশ্বের কাছে। আগে ঘরের মাটিতে কিছুটা লড়াই করতে দেখা গেলেও ক’দিন আগেই নবীন আফগানিস্তানের কাছে লড়াইহীন আত্মসমর্পণ মোটা দাগে দেখিয়ে দিয়েছে নিজেদের অসহায়ত্ব।
ইন্দোরের পর কলকাতায়ও টস জিতে বাংলাদেশের আগে ব্যাটিং বেছে নেওয়া নিয়ে নানা রকমের কথা-বার্তা হয়েছে। ইডেন টেস্টের প্রথম দিনে দলটির কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যুক্তি দিয়েছিলেন নিজেদের সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে। পরদিন ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেন ঠিক তার উল্টো কথা। সোয়া দুই দিনে ইনিংস ব্যবধানে দিবা-রাত্রির টেস্ট হারার পর বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক কোচের বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, পরে ব্যাটিং করলেও আলাদা কিছু হতো না। তবে বিসিবি সভাপতির অভিযোগের প্রসঙ্গে নিরুত্তর ছিলেন তিনি।
গতপরশু আরও একবার সাদা পোশাকে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। ইডেনে তারা হেরেছে ইনিংস ও ৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। আগের দিনের ৬ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে খেলতে নেমে তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ টিকতে পেরেছে মাত্র ৪৭ মিনিট, দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৯৫ রানে।
কোনো পূর্ব প্রস্তুতি না নিয়েই গোলাপি বলে প্রথমবার দিবা-রাত্রির টেস্টে খেলতে নামে বাংলাদেশ। তাই টস জিতে মুমিনুলদের ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। টেস্টের দ্বিতীয় দিন বিস্ময় প্রকাশ করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল বলেছিলেন, ‘ব্যাটিং নেওয়ায় আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়েছি। কোচ-অধিনায়ক দুজনই বলেছিল, ফিল্ডিং নেবে। এটা নিয়ে চিন্তারই কিছু ছিল না (টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া নিয়ে)। তারপর টস জিতে যখন দেখেছি ব্যাটিং নিয়েছে, তখনই প্রথম ধাক্কা খেয়েছি। সম্ভবত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে কিনা জানি না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তবে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেয়া মুমিনুলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটিও ছোট করে দেখার সুযোগ কই? ইন্দোর টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে পরে স্বীকার করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলনেতা। তবে কলকাতা টেস্টে হারের পর তিনি বলেছেন, পরে ব্যাটিং করলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হতো না, ‘যখন আমরা উইকেট দেখেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম, পরে ব্যাট করলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। পরে ব্যাটিং করলেও খুব বেশি পার্থক্য তৈরি হতো না। নিশ্চিতভাবেই, দু’দলের মধ্যে ব্যবধান বিস্তর। এই দুই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের এবং ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে। নতুন গোলাপি বলে খেলাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং নতুন বলের চ্যালেঞ্জটা আমরা নিতে পারিনি।’ এরপরই মুমিনুলকে জানানো হয় টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া নিয়ে বোর্ড সভাপতির অভিযোগ তোলার বিষয়টি। উত্তরে তিনি অবশ্য কিছু বলতে রাজি হননি, একপ্রকার এড়িয়েই গেছেন, ‘দেখেন, আমি তো সামনা-সামনি ছিলাম না। আপনাদের যেহেতু বলেছেন, সেই হিসেবে আমার মন্তব্য করা ঠিক না। আমার মনে হয় না এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি সঠিক ব্যক্তি।’
অভিযোগের তীর যদি অধিনায়কের দিকে ওঠে তবে সেই তীরে বিদ্ধ হতে হবে নির্বাচকদের। সমানভাবে দায় নিতে হবে বোর্ডকেও। ভারত সফরে আগে ক্রিকেটার-বোর্ড দ্বন্দের পর সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা, তামিম ইকবালের পিতৃত্বকালীন ছুটি, সাইফউদ্দিনের হঠাৎ ইনজুরি- বড় ক্রান্তিকালে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছেন মুমিনুল। তবে এটাও সত্য, অধিনায়ক নতুন হলেও টেস্টে তার পথচলা সেই ২০১৩ সাল থেকে। এর মধ্যে অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করেছেন, ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে পেয়েছেন ‘লিটল মাস্টার’র খেতাবও। সেই মুমিনুলের কাছ থেকে সিরিজের প্রাক্কালে সংবাদ সম্মেলনে বলা, ‘আমাদের জয়ের তাড়না নেই, আমাদের চাপও নেই’ সত্যিই দুঃখজনক। যা অনভিজ্ঞতার সঙ্গে অপেশাদারি মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিটি সিরিজের আগে দল নির্বাচনের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয় নির্বাচকদের। প্রতিবারই ‘পরীক্ষামূলক’ দলে নির্ভর করতে দেখা যায় তাদের। যা বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেটে দৈন্যতারই সামিল। শুধুমাত্র পাইপলাইন সমৃদ্ধির দোহাই দিয়ে তরুন, অনভিজ্ঞদের খেলিয়ে হয়তো ভবিষ্যত ‘তৈরী’ হতে পারে। তবে হারতে হারতে যে ভঙ্গুর মানসিকতা তৈরী হচ্ছে, তার দায় কে নেবে? পাশাপাশি এটাও মনে রাখা জরূরী, টেস্ট এমন একটি ফরম্যাট যেখানে অভিজ্ঞতাই পারে পার্থক্য গড়ে দিতে। ভারত সিরিজে যা ফুটে উঠেছে মোটা দাগে। কোহলি তো বটেই, তাদের মায়াঙ্ক আগারওয়ালও ৫ বছর টানা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তবেই ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের পতাকাতলে। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন নজির ভুরিভুরি, কব্জির জোর বাড়তে না বাড়তেই একটি ম্যাচে ভালো কিছু করলেই সদ্য কৈশর পেরুনো ক্রিকেটারে ছেয়ে গেছে জাতীয় দল।
আর যদি পরীক্ষা-নীরীক্ষা করতেই হয়, তবে দেশের ক্রিকেটে এখনও অনেক অভিজ্ঞ, পরীক্ষীত টেস্ট ক্রিকেটার রয়েছে তাদের দিয়ে নয় কেন? বাংলাদেশ জাতীয় দলের বড় তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকেই সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছিলেন সেঞ্চুরি। তারপর নিষেদ্ধাজ্ঞার পর আর সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে। গত এপ্রিল থেকে এই পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ১০ ম্যাচে ৫টি ফিফটি, যার মধ্যে সেরা অপরাজিত ১৫০। দলের আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়েছেন ১০ ম্যাচে ৩৬ উইকেট, যার মধ্যে ৫ উইকেট ২বার, চার উইকেট ২বার, সেরা ৭/৬৯। ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবর ধারাবাহিক তুষার ইমরান। এই মৌসুমে করেছেন ৩৮০ রান।
বয়সের দোহাই দিয়ে তাদের সুযোগ না দিলেও ভারতীয় দল তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা ভালো করেছে, তাদের যথেষ্ঠ সুযোগ দিয়েছে। এই ক্রিকেটারদের সময় শেষ বললেও সিনিয়র ক্রিকেটার ছাড়া টেস্ট কেমন খেলে বাংলাদেশ? তা দেখেছে সারাবিশ্ব। সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতিতে তাদের সুযোগ দিলে হয়তো ইতিবাচক ফল আশা করা যেত। অন্তত এত বছর বাংলাদেশ দলকে বিভিন্ন সময় বড় অর্জন উপহার দেয়া খেলোয়াড়দের একটি ফেয়ারওয়েলও দিতে পারত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।