মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপ ‘উপজেলায় সরকারি কলেজ’। তবে সম্প্রতি মাউশি প্রকাশিত জাতীয়করণের জন্য ১৯৯টি কলেজের তালিকার ফলে নানান অসঙ্গতি নতুন বিতর্ক, ক্ষোভ-হতাশা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই সারা দেশে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধের কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আমজনতা সোচ্চার হয়েছে। পত্রিকান্তরে খবরের শিরোনাম : ‘জাতীয়করণে জালিয়াতি : বিব্রত শিক্ষা মন্ত্রণালয়’। ফলে সরকারের ভালো উদ্যোগে কলঙ্ক লাগছে। তালিকা প্রকাশের পরই অসংখ্য কলেজের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আপত্তি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ। আপত্তিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব কলেজের মধ্যে কোনোটির জমি নেই, কোনোটি সদ্য স্বীকৃতি পেয়েছে আবার কোনোটি ১৯ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ও বঙ্গবন্ধুর খুনির সহচরের কলেজ। গাজীপুর জেলার সর্বপ্রথম ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত বয়োকনিষ্ঠ ও দূরবর্তী অজপাড়াগাঁয়ের কলেজও তালিকায় রয়েছে। যেমন কাহারোলের ১৬ কিমি. বা কাপাসিয়ার ১০/১২ কিমি. দূরবর্তী কলেজ।
সরিষাবাড়ী ‘বঙ্গবন্ধু কলেজকে’ সরকারিকরণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাদ পড়েছে উপজেলার সবচেয়ে বড় ‘সরিষাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ’। অথচ বঙ্গবন্ধু কলেজটির নিজস্ব জমি নেই এবং যে জমিতে কলেজটি হয়েছে সেটিও অর্পিত সম্পত্তি।
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত খুনিদের সহচর জনাব আলীর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘জনাব আলী কলেজকে’ সরকারি করা হয়েছে। অথচ বানিয়াচংয়ের বড় প্রতিষ্ঠান ‘শচীন্দ্র কলেজ’কে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রুমা সাঙ্গু কলেজ গত ২৩ জুন পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিও সরকারি হচ্ছে। এরকম আরো প্রতিষ্ঠান রয়েছে কিনাÑযা সরকারি হয়েছেÑ সেটিও খতিয়ে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নানান নীতি-নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বেশকিছু স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। অতীতে সামরিক সৈর-শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের বিশেষ কোনো নীতিমালা ছিল না। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকারÑ জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনপূর্ব বিভিন্ন জনসভায় এলাকাবাসীর চাওয়ার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঘোষণা করেছেন প্রত্যেক উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ তিনি সরকারি করবেন। আমরা জানি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অত্যন্ত আন্তরিক। জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রত্যেক উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ সরকারিকরণের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং অন্যান্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন উপজেলা সদরে থাকে, তেমনিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের ক্ষেত্রেও উপজেলা সদরের স্কুল-কলেজ বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। বিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল-কলেজ সরকারিকরণে তা মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও নগরায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে না। বরং গ্রামীণ জনপদের মানুষ পারিপার্শিক বাস্তবতায় উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে ভিড় জমায়। এমনকি বিছিন্নভাবে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের ফলে ‘শিক্ষক সংকট’ লেগেই থাকে, পত্র-পত্রিকায় এমন খবর দেখা যায় প্রায়ই!
সাম্প্রতিক তালিকার কলেজগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি কলেজ মহান জাতীয় নেতা-নেত্রী ও বরেন্য ব্যক্তিবর্গের নাম ও স্মৃতিধন্যÑ যা অবশ্যই সরকারি হওয়ার যৌক্তিকতা বাড়িয়ে দেয় এবং ঐসব মহান ব্যক্তিবর্গের নামে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকা জরুরি। তবে এক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও নগরায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা এবং প্রতিষ্ঠানের বয়স, অবস্থান, অবকাঠামোগত সুবিধা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, যোগাযোগের ব্যবস্থা বিবেচনায় আনা খুবই প্রাসঙ্গিক। ক্ষেত্রভেদে দেখা গেছে, সরকারি সুযোগ বা অন্য বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য একই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের ঘটনা কালে কালে ঘটেছে বারবার। এব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেয়া নৈতিকতার দাবি। শুধু তাই নয় প্রয়োজনে যেভাবে নির্বাহী আদেশে পিজি, ইপসা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা অন্যান্য জাতীয় প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণ করা হয়েছে সেভাবেই মহান জাতীয় নেতাদের নামে উপজেলা সদরে কলেজের নামকরণ করে হলেও ঐসব কলেজ সরকারিকরণ করা বেশি যৌক্তিক। কেননা, এতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ মানবসম্পদ উন্নয়নে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সদ্য সম্প্রতি ১৬টি সরকারি কমার্স ইনস্টিটিউটকে এক ঘোষণায় সাধারণ কলেজ করা হয়। আশির দশকে এক ঘোষণায় মহকুমা সদরের কলেজগুলো জাতীয়করণ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের সূচনায় যেসব জেলা সদরে সরকারি মহিলা কলেজ ছিল না এমন ১২টি জেলায় এক ঘোষণায় মহিলা কলেজ জাতীয়করণ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপজেলায় একটি কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণার পরও কাক্সিক্ষত ফল পেতে নীতিমালা তৈরির অপেক্ষা, জরিপ ইত্যাদির সুযোগে দীর্ঘসূত্রিতা, পক্ষপাতিত্ব ও অনিয়ম, দুর্নীতির ভয় রয়েই গেছে। কাজেই ‘এক ঘোষণা’য় উপজেলা সদরের কলেজগুলো জাতীয়করণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় বাস্তবায়ন দ্রুততর করবে বলে আশা করি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্রে (০৩.০৭৪.৩৭.০৪৮.০১.০০৮.২০১৫Ñ ৩৯২ (৩) ‘১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত গাজীপুর জেলার মধ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠিত কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের সদয় সম্মতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ’ সংক্রান্ত বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণের অগ্রায়ন করা হয়। কলেজটি জাতীয়করণ প্রক্রিয়াধীন। ‘কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ’ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতি-কীর্তিধন্য, জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্র পুণ্যস্পর্শে উদ্বোধনকৃত উপজেলা সদরে অবস্থিত, ৫১ বছর শিক্ষার দ্যুতিতে সমুজ্জ্বল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্সসমৃদ্ধ, একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজ (বিএ, বিএসএস, বিবিএস, বিএসসি)। সুবিশাল অবকাঠামো, প্রায় ৬০ বিঘা জমি, সাড়ে তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মুখরিত, যা কাপাসিয়ার অপর ১১টি কলেজের মোট ছাত্র সংখ্যার চেয়েও বেশি, বিশাল খেলার মাঠ, ৩টি পুকুর, সবুজ-শ্যামলে মনোরম ও আর্থিকভাবে সমৃৃদ্ধ কলেজটিতে জাতীয়করণের অসংখ্য উপাদান রয়েছে।
অন্যদিকে মাউশি প্রকাশিত তালিকায় সদর থেকে ১০/১২ কিমি. দূরে হাইলজোর গ্রামের (ভায়া: বরমি, শ্রীপুর), প্রতিষ্ঠাকাল বিবেচনায় উপজেলার ৪র্থ (এমপিওভুক্তি ১৯৯৪), একাধিকবার নাম পরিবর্তনের ধারায় বর্তমান শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজের নাম ছাপা হয়। রূঢ় বাস্তবতা হলো একবার ‘সদর বঞ্চিত’ থাকলে ঐক্ষতি ও ঐতিহাসিক দায় রয়েই যাবে। উপজেলা ভেদে কিছু ব্যতিক্রম ও বাস্তবতার কারণেই মাউশির বিভিন্ন তালিকায় একাধিক কলেজের নাম ছিল। বর্তমান তালিকায়ও গোমস্তাপুর উপজেলায় দুটি কলেজের নাম রয়েছে। কাজেই, বিশেষ বিবেচনায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ (নির্বাহী আদেশে প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহ্মদ অথবা সৈয়দা জহুরা তাজউদ্দীনের নামে নামকরণ করে) এবং ইতোমধ্যে তালিকায় স্থান পাওয়া শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজ একযোগে জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু করা জরুরি।
বস্তুত, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার মনোন্নয়ন, প্রগতিশীল জাতি গঠন ও শিক্ষকদের পেশাগত বঞ্চনার অবসান সবকিছু একটি সামুষ্টিক বিষয়। এজন্যই সবার প্রত্যাশা শিক্ষকদের ‘স্বতন্ত্র বেতনস্কেল’ ও ‘সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’। কিন্তু বহুল প্রতিশ্রুত ‘স্বতন্ত্র বেতনস্কেলে’র প্রত্যাশা আর কত দিন? শিক্ষক সমাজের আকাক্সক্ষা ‘শিক্ষা জাতীয়করণে’র অনন্ত অপেক্ষার শেষই বা কোথায়? এরই মধ্যে জিজ্ঞাসার আবর্তে কলেজ জাতীয়করণের তালিকা ঘুরপাক খাক তাও কি কাম্য হতে পারে?
ষ লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।