পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সীমান্তবর্তী নদীগুলোর ভাঙনে অব্যাহতভাবে ভূমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। আভ্যন্তরীণ নদীভাঙনের ফলে বিলীন হওয়া ভূমি অপর পাড়ে জেগে উঠার মধ্য দিয়ে ফিরে পাওয়া গেলেও সীমান্ত নদীর ভাঙনে মূলত ভারতের কাছে ভূমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে সীমান্ত নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়া বাংলাদেশের ৫০ হাজার একর জমি ভারতের দখলে চলে গেছে। অভিন্ন ৫৪টি নদীর ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই বললেই চলে। সরকার বড় বড় মেগা প্রকল্পে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের কারণে সীমান্ত নদীর ভাঙন রোধ ও জমি রক্ষা করা যাচ্ছেনা। অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বাধায় নদীভাঙন রোধে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকে বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। বিএসএফ’র বাধায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকা- ব্যাহত হলেও দেশের ভূমি রক্ষায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)’র ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, অন্যদিকে বিএসএফ’র বাধায় নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে হাজার হাজার একর জমি হারিয়ে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশ।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যচাহিদা, আবাসন ও শিল্পায়নের কারণে ক্রমবর্ধমান হারে কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ায় বিদ্যমান জমির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে জমি যেভাবেই ব্যবহৃত হোক, দেশের জমি দেশেই থাকছে। সীমান্ত নদীর ভাঙনে হারানো জমি ভারতের দখলে চলে যাওয়ার পর এসব জমি উদ্ধারের আপাত কোন সম্ভাবনাই থাকছেনা। উজানে বাঁধ ও গ্রোয়েন নির্মাণ করে অভিন্ন নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তনের বিরুদ্ধেও দৃশ্যত সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। এর ফলে নদীর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশে ভাঙন দেখা দিলে মধ্যসীমা নীতি অনুসারে অপর পাড়ে জেগে ওঠা জমির মালিকানা পেয়ে যাচ্ছে ভারত। এ কারণেই সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশের ভূমি মালিকদের জন্য একটি আতঙ্কের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের মহামূল্যবান জমি হাতছাড়া হয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতা নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রীও প্রশ্ন রেখেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কেন শুষ্ক মওসুমের কাজ বর্ষা মওসুমে তড়িঘড়ি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এভাবে প্রতি বছর নদী ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ব্যয়িত শত শত কোটি টাকা পানিতে যায় বা তেমন কোন কাজে আসেনা। এভাবেই নদী ভাঙন রোধে বাজেট বরাদ্দের প্রশ্নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও অর্থমন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক ধরনের মতবিরোধ বা সমন্বয়হীনতা প্রত্যক্ষ করা যায়। সারাদেশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা পানিতে চলে যাওয়ার অভিযোগ থাকলেও অবস্থা পরিবর্তনের কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই। নদীভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার শুধু নিঃস্ব হয়ে পড়ছে না, দেশের ভূমি ভারতের দখলে চলে যাওয়ার উদ্বেগজনক বাস্তবতায় কর্তৃপক্ষের নিস্পৃহ ভূমিকা ও হতাশাজনক।
সীমান্ত নদীর উজানে ভারতের বাঁধ ও গ্রোয়েন নির্মাণ ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নদীতে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং, বালি ও পাথর উত্তোলনের কারণেও নদীভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা, ইছামতি, ধরলা নদী পাড়ের হাজার হাজার কৃষক শুকনো মওসুমে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পানি প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হলেও বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানোর আতঙ্কে সন্ত্রস্ত দিন কাটায়। প্রয়োজনীয় নদীব্যবস্থাপনা এবং ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় বিরূপ প্রকৃতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণই যেন নদী পাড়ের লাখ লাখ মানুষের অলঙ্ঘনীয় নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ভূমি হারানোর পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যর্থতা, অর্থমন্ত্রণালয়ের অপর্যাপ্ত বরাদ্দ অথবা নদীভাঙন রোধে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিএসএফ’র বাধা বা বিজিবি’র নিষ্ক্রিয়তাসহ যে অভিযোগই তোলা হোকনা কেন, দেশের মহামূল্যবান ভূমি ভারতের দখলে চলে যাওয়ার দায় মূলত সরকারের। দেশের সীমান্ত, অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা অথবা মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যর্থতার কোন অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যর্থতার কারণে প্রতিবছর দেশের লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব, উদ্বাস্তু হওয়ার সাথে সাথে সীমান্তের হাজার হাজার একর জমি যে নীরবে ভারতীয় দখলে চলে যাচ্ছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা না থাকা বিস্ময়কর। দেশবাসী এ ধরনের বাস্তবতা মেনে নিতে পারেনা। সীমান্ত নদীর ভাঙন রোধ এবং ভূমি রক্ষায় সরকারী সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে কিছু না জানিয়েই ভারত তার আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় যৌথ নদীর পানি প্রত্যাহারের কাজ শুরু করেছে বলে গতকাল ঢাকার একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। তিস্তার পানি চুক্তি, টিপাইমুখ বাঁধসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও ন্যায্যতাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। দেশকে মরুভূমিতে পরিণত করা এবং বছরে হাজার হাজার একর মূল্যবান জমি ভারতের দখলে চলে যাওয়ার বাস্তবতার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক কর্মকৌশল গ্রহণ করতে হবে। সীমান্ত নদীর ভাঙনে বাংলাদেশের ৫০ হাজার একর জমি ভারতীয় দখল থেকে পুনরুদ্ধারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি যৌথনদী ব্যবস্থাপনার আন্তর্জাতিক রীতি নীতি ভারতকে মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে দেশবাসী সরকারের কাছে কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।