বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কক্সবাজারের সেন্টমাটিন দ্বীপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে চার মাঝিমাল্লাসহ ১২২ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এসময় একটি ট্রলার জব্দ করা হয়। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু ১৫, নারী ৫৯ ও পুরুষ ৪৪ জন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে টেকনাফের সেন্টমার্টিন থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে সেন্টমার্টিনের অদূরে দক্ষিন পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে তাদের আটক করে। উদ্ধারকৃত যাত্রীরা টেকনাফ থেকে গত ১২ নভেম্বর একটি ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ফিশিং ট্রলার দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেয়। যাত্রাকালে সেন্টমার্টিন থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিম সাগরে ট্রলারটি বিকল হয়ে ভাসতে থাকে। স্থানীয় জেলেরা ভাসমান ট্রলারটি দেখতে পেয়ে সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড বাহিনীকে খবর দেয়। পরবর্তীতে কোস্টগার্ড সদস্যরা মাঝি-মাল্লাসহ ১২২ জন রোহিঙ্গা ও ট্রলারটি উদ্ধার করে ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ৭ টায় টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে নিয়ে আসে। এর মধ্যে শিশু ১৫ জন ও ৫৯ জন নারী, ৪৮ জন পুরুষ রয়েছে।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট এম সোহেল রানা। তিনি জানান, দুপুরে স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এসময় ১৫ শিশু, ৫৯ নারী ও ৪৪ জন পুরুষসহ ১১৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় একটি মিনি কার্গো ট্রলারসহ চার মাঝিমাল্লাকে আটক করা হয়েছে। মাঝিমাল্লারা হলেন, বালুখালী ক্যাম্পের আমান উল্লাহ (৪৩), একই ক্যাম্পের জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), একই ক্যাম্পের আতাউল্লাহ (২৬) ও থাইংখালী ক্যাম্পের মো. ইসলাম (৩২)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন। তাদের টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। উদ্ধার যাত্রীরা জানান, দালাল মালয়েশিয়া অবস্থানরত রোহিঙ্গা হামিদ, ক্যাম্পের দালাল কেফায়েত উল্লাহ, সদর রাজারছড়া এলাকার আরব আলী ও নুরুল আমিনের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বাহির করে আনা হয়। তাদের টেকনাফের বাহারছড়া নোয়াখালী বাঘঘোনাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। মালয়েশিয়া অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে স্থানীয় দালাল চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ট্রলারে তুলে দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। বাকি টাকা মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানান, সেন্টমাটিন থেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা ১১৮জন মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাসহ চার মাঝিমাল্লাকে আটক করেছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক স্থানীয় দালালের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য একত্রিত করে। তাদের পুলিশে সোর্পদ করা হলে তাদের স্ব-স্ব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হবে।
মালয়েশিয়াগামী ভিকটিম বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আতা উল্লাহ জানান, নিজ দেশ মিয়ানমার সরকার বাহিনীর নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশের বালুখালী ক্যাম্পে চলে আসি। কিন্তু সেই ক্যাম্পে চলতে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে, তাই আমান উল্লাহ দালালের মাধ্যমে ট্রলার করে মালয়েশিয়া যাচ্ছি। গত ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন থেকে আমান উল্লাহ মাঝি দালালসহ ফিশিং বোট নিয়ে ট্রলারে উঠি।
বালুখালী সি-বøকের মোঃ আয়াছ (১৯) জানান, ট্রলারযোগে সাগর পথে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ধরে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। নগদে ৩০ হাজার টাকা ও বাকি মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌঁছলে পরিশোধে কথা রয়েছে।
আফিয়া বেগম (১৫) বলেন, মালয়েশিয়াতে বউ হয়ে যাচ্ছি। দালালের মাধ্যমে দুই দিন ধরে ট্রলারে উঠেছি। এ অবস্থায় কোস্টগার্ড আমাদের আটক করেছে।
রশিদ আহমদের কন্যা সাবেকুন্নাহার নাহার (১৮) জানান, বাংলাদেশে আমার কেউ নেই। স্বামী মালয়েশিয়াতে রয়েছে। পাসপোর্ট করতে কড়াকড়ি হওয়ায় আমার স্বামীর মাধ্যমে মালয়েশিয়া প্রবাসী সলিম দালালের কথায় সাগর পথে আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন।
আটককৃত দালাল গুলো হল: ফজল আহম্মদের ছেলে আমান উল্লাহ, আবুল হালিমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে ইসলাম, নজির আহম্মদের ছেলে আতা উল্লাহ।
তথ্যসুত্রে জানা যায়, আটককৃত দালালদের প্রধান সহযোগি আয়ুব ঢাকা বসে থেকে বিভিন্ন ট্রলার মাঝিদের মাধ্যমে আমান উল্লাহ মাঝি দিয়ে বহুবার ট্রলার করে মালয়েশিয়া
বসবাসরত ছলিমের কাছে পাঠান। মানবপাচারকারী ছলিম অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিয়ে নিজে বনে যান বড় মাপের দালাল। সেই দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া বসে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন উপকূল দিয়ে সাগর পথে পাচার করছে। তাদের আরেক সহযোগি বার্মায়া নয়ন সেইও মালয়েশিয়া থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে উখিয়া-টেকনাফের অবস্থানরত ক্যম্প গুলো থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছে। এই দালালদের মালয়েশিয়াগামী সহযোগিসহ টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের হাতে আটক হলেও কি করে বার বার ছাড় পেয়ে আবারও মানবপাচার কাজে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে টেকনাফের সচেতন মহলের দাবি মালয়েশিয়াগামী দালালদের কঠোর হাতে দমন না করলে পুনরায় পাচার কাজে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।