গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর আনন্দ আয়োজনে বিদ্যুৎস্পর্শে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার নিহতের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নেটিজেনরা। অভিযোগ উঠেছে, স্কুলছাত্র আবরারের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরেও ঘটনা চেপে রেখে গান-বাজনার অনুষ্ঠান চালিয়ে যায় কিশোর আলো। এ নিয়ে আয়োজক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভবাকেরা। তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
আবরারের সহপাঠীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন, শুক্রবার বিকালে আহত আবরারকে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে না নিয়ে জ্যাম পেরিয়ে কেন মহাখালীর এক বেসরকারি হাসাপাতালে নেয়া হয়েছিল? আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে তারা বলছে, সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণেই আবরারের মৃত্যু হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তার মৃত্যুর সংবাদ জানার পরও বিষয়টি দর্শকদের কাছে চেপে রেখে অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছেন আয়োজকরা। এমনকি মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতাল থেকে যখন আবরারের মৃত্যুর সংবাদ শুনলেন তারা, তখন মঞ্চে গান চলছিল। সে গান বন্ধ করেননি আয়োজকরা। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে স্কুলটির শিক্ষার্থীরা। ‘আমার ভাই মারা গেলো, কিশোর আলো চুপ কেন?’; ‘কিশোর আলোর অমানবিকতা, মানি না মানবো না’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
আয়োজকদের নিন্দা জানিয়ে ফেইসবুকে রাশেদ আহমেদ শাওন লিখেছেন, ‘‘মানুষের জীবনের চেয়ে তাদের কাছে কনসার্টের মূল্য বেশি। মানবতার চেয়ে তাদের করপোরেট স্বার্থ অনেক বেশি জরুরি। আর আমাদের নির্বুদ্ধিতা হচ্ছে- তাদের প্রতারণায় আমরা বারবার প্রতারিত হই। ‘গণমাধ্যম’ নামের এসব ‘প্রোপাগান্ডা মাধ্যমের’ ভাষায় কথা বলি। তাদের চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখি!’’
সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন, ‘‘ইস এই আবরার যদি কলেজ-ভার্সিটির ছাত্র হতো তাহলে সুশীল বাবুদের উস্কানিতে একটা আন্দোলন দেখতাম। আবরারের পাশে সুশীল বাবুরা নাই। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক।’’
‘‘কিশোর আলো কনসার্টের নামে আমাদের কোমলমতি যুবসমাজকে তারা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্কুল কলেজের কিশোর আলোর কোন প্রোগ্রামে আপনার সন্তানকে পাঠাবেন না। কিশোর আলো পড়তে না দিয়ে আপনার সন্তানকে কুরআন পড়তে দিন, নিয়মিত নামাজ পড়ার তাগিদ দিন, দ্বীনি শিক্ষা দিন, বেহায়াপনা এসব কনসার্ট থেকে আপনি আপনার সন্তানকে দুরে রাখুন। অনেক ফায়দা হবে। ইনশাআল্লাহ’’ লিখেছেন পলাশ।
শেখ আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘‘কিশোর আলো আবরারকে হত্যা করেছে, এখন প্রথম আলোর ফ্রন্ট পেইজে রেসিডেন্সিয়াল এর আবরারের মা এর আহাজারির/কান্নার বারকোড চাই, বক্স নিউজ চাই। যাতে খুব সহজেই আমরা এই কান্নাটাও দেখতে পারি..।’’
ক্ষোভ জানিয়ে সুলাইমান আল মাহমুদ হিরা লিখেছেন, ‘‘নিষ্পাপ ছেলেটার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরও কেন কনসার্ট বন্ধ করতে পারলেন না। লেখক সম্পাদকের বিবেকও আজকাল বাণিজ্যকরণ হয়ে গেছে। দিন বদলের কথা বলে নিজেরাই বদলে চিড়িয়া হয়ে গেছেন!’’
‘‘বন্ধুসভা এবং কিশোর আলো শুধু কিশোর ছেলে-মেয়েদের মিলেমিশে আড্ডা এবং নিজের লজ্জা শেষ করে দেয়ার শিক্ষা দেয়া ছাড়া আর কিছু শিখায় না। নিজে প্রমাণিত’’ মন্তব্য আসিক উল আবিদের।
জান্নাতুল ফেরদৌসী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘স্কুলের পাশে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থাকতে নাইমুল আবরার রাহাতকে মহাখালী আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতাল নেওয়া হলো কেন? তাঁর বাবা-মাকে সাথে সাথে জানালো না কেন? একজন মৃত্যু মানুষকে রেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাচ গানের অনুষ্ঠান চলছে কি ভাবে? অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিবেক কি মরে গেছে!’’
মামুন হোসাইন লিখেছেন, ‘‘একটা ছাত্র এভাবে মরে গেল; আর আপনারা মহা আনন্দে অনুষ্ঠান করে গেলেন! আর ছেলেটা যে মারা গিয়েছে, সেই খবর কেন আপনারা এতো লম্বা সময় পর্যন্ত গোপন রেখেছেন? একটা ছেলের মৃতদেহের উপর আপনারা অনুষ্ঠান করলেন, কনসার্ট চালিয়ে গেলেন! আপনারা হয়তো দেশ সেরা পত্রিকা হতে পারেন। তবে আপনারা এখনও মানুষ হতে পারেননি।’’
সাহাবুদ্দিন ইলিয়াস লিখেছেন, ‘‘প্রথম আলো সবসময়ই বাংলাদেশ কালচার বিরোধী। আর কিশোর আলোর মাধ্যমে তাদের নিজস্ব কালচার বাচ্চাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠার অপপ্রায়াস চালাচ্ছে!’’
‘‘কিশোর আলো নতুন প্রজন্মকে ধর্মের থেকে দূরে সরাই রাখে। এখানে ধর্ম পালন নিয়ে এক লাইনও থাকেনা। অথচ ধর্মের শিক্ষার চেয়ে বড় নীতি শিক্ষা আর কোন গ্রন্থতেই নেই। ধর্মের ন্যূনতম জ্ঞান ছাড়া সভ্যশিক্ষায় কেউ শিক্ষিত হতে পারে না। এই পত্রিকাগুলো মুসলমানের সন্তানদের না পড়াই ভালো বলে আমি মনে করি’’ লিখেছেন এমএম শৌকত হোসেন।
আব্দুর রহমান লিখেছেন, ‘‘নিকৃষ্ট! খবিশ! বেয়াদব! এরাই আবার জাতীরে উদারতা শিখায়! এমন ছোটলোকি মন মানসিকতা নিয়ে মুখ দেখায় কেমনে এরা! কলেজ লাগোয়া বড় হসপিটাল রেখে ওই মহাখালি নিতে হইলো কেন ছেলেটারে! সব কিছুতে মুনাফা তালাশ করে! মানুষের কতটা নৈতিক এবং মানবিক মূল্যবোদের অবক্ষয় হলে মানুষের মানসিকতা জানোয়ারের ছেড়েও অধম হয়।’’
সোহেল মোহাম্মেদ লিখেছেন, ‘‘এটা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু নয়, এটা একটি হত্যা। অবশ্যই কিশোর আলোর যে সকল কর্মকর্তা এই গাফিলতির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে!
শুক্রবার বিকালে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে কিশোর আলোর একটি অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হয় নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার (১৫)। তার মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় শনিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দিতে আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।